সাংসদের ভোজে খেলেন ৭০ হাজার মানুষ

মিলনমেলার নামে আয়োজিত সাংসদ আয়েন উদ্দিনের ভোজে মানুষের ঢল। গতকাল রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের কসবা এলাকার পদ্মার চরে।  ছবি: প্রথম আলো
মিলনমেলার নামে আয়োজিত সাংসদ আয়েন উদ্দিনের ভোজে মানুষের ঢল। গতকাল রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের কসবা এলাকার পদ্মার চরে। ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীতে পদ্মা নদীর বালুচরে ১৭টি প্যান্ডেল। পবা ও মোহনপুর উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের নামে একটি করে প্যান্ডেল। একসঙ্গে ছয় হাজার মানুষের খাওয়ার আয়োজন। আয়োজকদের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ৭০ হাজার মানুষ খেয়েছেন। আর উপস্থিত হয়েছিলেন প্রায় এক লাখ মানুষ।

গতকাল শনিবার রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সাংসদ আয়েন উদ্দিন ‘মিলনমেলা’ নামের এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। একপাশে খাওয়াদাওয়া আর অপর পাশে চলেছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এদিকে অনুষ্ঠানে আসা অতিথিদের যানবাহন রাস্তার পাশে রাখার কারণে রাজশাহী-গোদাগাড়ী মহাসড়কে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়নি।

এই আয়োজনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বজলে রেজবি আল হাসান মুঞ্জিল। তিনি জানান, ১৭ দিন ধরে পরিশ্রম করে তাঁর ইউনিয়নের কসবা এলাকায় পদ্মা নদীর চরে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে পবা ও মোহনপুর উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের নামে একটি করে প্যান্ডেল করা হয়। প্রতিটি প্যান্ডেলের জন্য আলাদা আলাদা রান্নার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এতে গরু ও মহিষের ১৪০ মণ ও ছাগলের ২০ মণ মাংস, ১০ টন চাল ও ২ টন ডাল দিয়ে বিরিয়ানি রান্না করা হয়েছিল। এ ছাড়া ৫০০ ভিআইপি অতিথির জন্য আলাদা করে সাদা ভাত, কলাইয়ের ডাল, বুটের ডাল ও খাসির মাংস রান্না করা হয়েছিল। এই চেয়ারম্যানের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ৭০ হাজার মানুষকে খাওয়ানো হয়েছে।

অনুষ্ঠানের অতিথিদের মধ্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, রাজশাহী-(তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া রাজশাহী মহানগর ও জেলা পুলিশ এবং বিজিবি সদস্যরাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

রাজশাহী-গোদাগাড়ী মহাসড়ক থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে পদ্মা নদীর চরে এই আয়োজন করা হয়েছিল। মহাসড়ক থেকে অনুষ্ঠানস্থল পর্যন্ত চারটি তোরণ নির্মাণ করা হয়। অনুষ্ঠানস্থলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনসহ রাজশাহী থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের পাঁচজন সাংসদের ছবি প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছানোর জন্য চরের ভেতরে বাঁশ দিয়ে তিনটা সাঁকো বানানো হয়।

সকাল ১০টা বাজতে না–বাজতেই মহাসড়ক থেকে অনুষ্ঠানস্থল পর্যন্ত মানুষের সারি তৈরি হয়। প্রতিটি প্যান্ডেলের পাশেই রান্নার আয়োজন ছিল। প্যান্ডেলের পাশে প্রায় ১০টা চুলা জ্বলছিল। যাঁরা খাবার পরিবেশন করেন, তাঁদের গায়ে বিশেষ ধরনের টি-শার্ট ছিল।

খাওয়ার আয়োজন ছিল খোলা আকাশের নিচে। প্যান্ডেলগুলো চারদিক কাপড় দিয়ে ঘেরা ছিল। দুপুর ১২টার দিকে খাওয়া শুরু হয়। তখন থেকেই একটি চেয়ারের পেছনে অন্তত পাঁচজনকে খাওয়ার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত খাবার পরিবেশন করা হয়।

অনুষ্ঠানে দাওয়াত খেয়েছেন পবা উপজেলার বাইলা গ্রামের তরুণ রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, এত বড় অনুষ্ঠান তিনি কখনো দেখেননি। খাবার ভালো হয়েছে বলে তিনি জানান।

অনুষ্ঠানে অনবরত মাইকিংয়ে বলা হচ্ছিল, ‘পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার রয়েছে। আপনারা কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবেন না।’ তবে এর মধ্যেই বসার জায়গা না পেয়ে জেলার মোহনপুর উপজেলার কেশোরহাট পৌর এলাকার একটি দলকে না খেয়ে রাগ করে অনুষ্ঠানস্থল থেকে বের হয়ে আসতে দেখা গেল। তাঁদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমাদের দূর দূর করে সরে যেতে বলা হচ্ছে, খেতেই দিচ্ছে না।’

এই আয়োজনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন পবা উপজেলার হরিয়ান ইউপির চেয়ারম্যান মফিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, এক লাখের বেশি মানুষ অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। ৭০ হাজার মানুষ খেয়েছে।’ বাকি মানুষ কি তাহলে না খেয়ে গিয়েছেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকেই অনুষ্ঠান দেখার জন্য এসেছিলেন। তাঁরা খেতেই বসেননি। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেছেন। না খেয়ে ফিরে গেছেন এমন অভিযোগ পাননি।

কী উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল জানতে চাইলে চেয়ারম্যান মফিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের পরে প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে সাংসদ আয়েন উদ্দিনকে সংবর্ধনা দেওয়ার প্রস্তাব এসেছিল। সাংসদ সেই সংবর্ধনা না নিয়ে বলেছিলেন তিনিই সব ইউনিয়নের লোকজনকে নিয়ে একটা মিলনমেলা করবেন।

সাংসদ আয়েন উদ্দিন বলেন, তিনি ৬০ হাজার মানুষকে খাওয়ানোর প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। অনেক মানুষ তাঁকে ভালোবাসেন বিধায় ধারণার চেয়েও বেশি মানুষ এসেছিলেন অনুষ্ঠানে।