স্বজন সেজে অপহৃত কিশোরকে উদ্ধার করল র্যাব

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থেকে জিতু মিয়া নামের এক কিশোরকে নাশতা খাওয়ানোর কথা বলে অপহরণকারীরা বাজারে নিয়ে যায়। এরপর তার গলার ডান পাশে ইনজেকশন দিয়ে অচেতন করে নিয়ে যায় ময়মনসিংহে। অপহরণকারীরা জিতুর বাবার কাছে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে, নইলে ছেলেকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। আর এই অপহরণকারী চক্রের একজন হলেন তাদের বাড়ির কাজের লোক। ২৫ জানুয়ারি অপহৃত হয় জিতু। এর চার দিন পর র‌্যাব স্বজন সেজে তাকে উদ্ধার করে।

জিতুর মা সায়েদা বেগমের ভাষ্য, ২৫ জানুয়ারি বেলা তিনটার দিকে জমিতে কাজ করতে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় জিতু। এরপর দুদিন অজ্ঞাত নম্বর থেকে ফোন করে পরিবারের কাছে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। বিষয়টি তাঁরা ভৈরব র‌্যাব ক্যাম্পকে জানায়।

অপহৃত হওয়ার চার দিন পর গতকাল সোমবার মধ্যরাতে জিতুকে উদ্ধার করা হয়। ময়মনসিংহের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ–সংলগ্ন এলাকা থেকে র‌্যাব-১৪–এর ভৈরব ক্যাম্পের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

উদ্ধার করা কিশোর জিতু বিজয়নগর উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের আল আমিনের ছেলে।

আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভৈরব র‌্যাব-১৪–এর কোম্পানি অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাফিউদ্দীন মোহাম্মদ যোবায়ের এ উদ্ধার অভিযানের বিস্তারিত তুলে ধরেন।

র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, অপহরণের দুই দিন পর অজ্ঞাত একটি নম্বর থেকে জিতুর বাবা আল আমিনের কাছে অপহরণকারীরা তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। তারা জানায়, তাদের দুজন এসে জিতুর দুই স্বজনকে টাকাসহ নিয়ে যাবে এবং জিতুকে ছেড়ে দেবে। কিন্তু পরিবার বিষয়টি র‌্যাব-১৪–কে জানায়। অপহরণকারীদের কথামতো গতকাল রাত নয়টার দিকে অপহৃত কিশোরের স্বজনেরা কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার দুর্জয় মোড়ে পৌঁছান। এ সময় সেখানে র‌্যাব-১৪–এর একটি দল অপহরণকারী দলের দুই সদস্য লোকমান হোসেন ও ফুরকান খাদেমকে আটক করেন। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব সদস্যরা অপহৃত কিশোরের স্বজন সেজে ময়মনসিংহের সম্ভুগঞ্জ সেতুর ওপর অবস্থান নেন ও অপহরণকারীদের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন। পরে টাকা নিতে অপহরণকারী দলের তিন সদস্য একটি ভাড়ার অটোবাইকে করে সেতুর ওপরে আসে। র‌্যাব টাকার বিনিময়ে অপহৃত কিশোর জিতুকে উদ্ধার করতে ময়মনসিংহের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ–সংলগ্ন বিসিএস কনফিডেন্সের হলরুমে পৌঁছায়। এ সময় অপহরণকারী দলের অন্য সদস্যদের সঙ্গে মুক্তিপণের টাকা নিয়ে কথা বলেন র‌্যাবের সদস্যরা। হলরুমের পাশের একটি কক্ষে অপহৃত কিশোর আটক আছে জানতে পারেন র‌্যাবের সদস্যরা। পরে রাত চারটার দিকে র‌্যাব-১৪ সেখানে অভিযান চালিয়ে অপহৃত কিশোর জিতুকে উদ্ধার করে এবং ঘটনাস্থল থেকে বাকি পাঁচ অপহরণকারীকে আটক করেন র‌্যাবের সদস্যরা।

অপহৃত কিশোর জিতু মিয়া বলেন, ‘আমাকে নাশতা খাওয়ানোর কথা বলে খড়মপুর মাজারে নিছে চান মিয়া। সেখানে যাওয়ার পরে চান মিয়াসহ আরেকজন আমার গলার ডান পাশের ইনজেকশন দিয়া অজ্ঞান কইরা আমাকে লইয়া গেছে। প্রতিদিন একটা কইরা গলার ডান পাশে ইনজেকশন দিছে। খাবার দিত না। পানি খাইতে চাইলে গেলাস ফালাই দিছে। আমারে দুইবার গলায় ছুরি ধরছে। হেরা আমাকে মারছে।’

র‌্যাব-১৪–এর কোম্পানি অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাফিউদ্দিন মোহাম্মদ যোবায়ের প্রথম আলোকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে অপহরণকারী দলের সদস্য চান মিয়া জানান, পাঁচ-ছয় মাস যাবৎ তিনি অপহৃত কিশোর বাড়িতে গৃহস্থালির কাজ করে আসছিল। অপহৃতের বাবা আল আমিনের সঙ্গে লেনদেনসংক্রান্ত বিষয়ে চান মিয়ার মনোমালিন্য হয়। তাই চান মিয়া অপহরণকারী অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে পরামর্শ করে নাশতা খাওয়ার কথা বলে কিশোর জিতুকে আখাউড়া উপজেলার খড়মপুরে নিয়ে যায়। পরে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে জিতু অজ্ঞান করে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে ময়মনসিংহে নিয়ে যায়। জিতুকে শারীরিক নির্যাতন করে তারা। টাকা না দিলে কিশোরকে খুন করারও হুমকি দিয়েছে অপহরণকারীরা।

ময়মনসিংহের সদর থানার চক ছত্তরপুর গ্রামের চান মিয়া (৩২) ছাড়া গ্রেপ্তার করা অপর ছয়জন হলেন আখাউড়া খড়মপুর এলাকার লোকমান হোসেন (৪০) ও একই এলাকার ফুরকান খাদেম, ময়মনসিংহের সদর থানার কেরয়াটখালী গ্রামের আজিজুল হাকিম (২২), একই জেলার তারাকান্দা থানার শিমুলতলী গ্রামের খায়রুল ইসলাম (২২), ত্রিশাল থানার কুইষ্টা গ্রামের আলমগীর হোসেন (২২) ও ধোবাউড়া থানার গাছপাড়া গ্রামের এরশাদ আলী (২৫)।