বুড়িগঙ্গার তীরে ২৯০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

উচ্ছেদ করা হয় দুইতলা তিনটি ভবন ও একতলা সাতটি ভবন। কামরাঙ্গীরচর, ঢাকা। ছবি: হাসান রাজা
উচ্ছেদ করা হয় দুইতলা তিনটি ভবন ও একতলা সাতটি ভবন। কামরাঙ্গীরচর, ঢাকা। ছবি: হাসান রাজা

বুড়িগঙ্গার তীরের ২৯০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা। আজ বৃহস্পতিবার লালবাগ থানাধীন কিল্লারমোড় শ্মশানঘাট ও কামরাঙ্গীরচর থানাধীন কয়লাঘাট এবং ছাতা মসজিদ এলাকায় নদীর তীর থেকে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।

উচ্ছেদ অভিযানের নেতৃত্ব দেন বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান। গত ২৯ জানুয়ারি থেকে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ছয় দিনের উচ্ছেদ অভিযানে ১ হাজার ১৯৮টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।

আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে লালবাগ থানাধীন কিল্লারমোড় শ্মশানঘাট এলাকায় রমিউদ্দিন মিয়ার মালিকানা প্লাস্টিকের গুদামঘর উচ্ছেদের মাধ্যমে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। এরপর উচ্ছেদ অভিযানকারীরা ৫৬/৮ রাজ নারায়ণ ধর রোডের রশিদ মাইজভান্ডারীর মালিকানাধীন আশেকান মাইজভান্ডারি অ্যাসোসিয়েশনের পাকা স্থাপনা চারটি ঘর ও রহিম চিশতীর মালিকানাধীন খানকা শরীফের চারটি টিনশেডের টংঘর উচ্ছেদ করে। এ ছাড়া কামরাঙ্গীরচর লোহার সেতু সংলগ্ন রহমান প্লাজার পাকা স্থাপনার ছয়টি দোকান উচ্ছেদ করে।

২৫৭টি ছোট বড় টিনশেডের ছাপড়া ও টং ঘর উচ্ছেদ করা হয়।  কামরাঙ্গীরচর, ঢাকা। ছবি: হাসান রাজা
২৫৭টি ছোট বড় টিনশেডের ছাপড়া ও টং ঘর উচ্ছেদ করা হয়। কামরাঙ্গীরচর, ঢাকা। ছবি: হাসান রাজা

রহিম চিশতীর ছেলে আব্দুল মোতালেব চিশতী জানান, ‘তাঁর বাবা ৩৫ বছর আগে মতি বিবির কাছ থেকে ২ কাঠা জমি কিনে সেখানে চারটি টিনশেডের টংঘর নির্মাণ করে বসবাস করছে। আমরা কোনো নদীর জায়গা দখল করিনি। অথচ বিআইডব্লিউটিএর লোকজন আমাদের বসতভিটা নদীর জায়গা বলে গুঁড়িয়ে দিয়েছে।’

কামরাঙ্গীরচর থানাধীন কয়লাঘাট এলাকার বাসিন্দা আরজু মিয়া জানান, তিনি ১৯৯৫ সালে ছাতা মসজিদ ঘাট এলাকায় সাড়ে ৩ কাঠা জমি কিনে সেখানে প্লাস্টিকের কারখানা নির্মাণ করেন। অথচ উচ্ছেদ অভিযানকারীরা তাঁর জায়গাকে নদীর জায়গা বলে প্লাস্টিকের কারখানা উচ্ছেদ করেছে। তিনি অভিযোগ করেন, ‘আমার মালামাল সরিয়ে নেওয়ার জন্য উচ্ছেদ অভিযানকারীদের কাছে দুই দিনের সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমাকে মালামাল সরিয়ে নেওয়ার সময়টুকুও দেওয়া হয়নি।’

বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গায় স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে না। নদীর জায়গায় অবৈধ দখলদার ও স্থাপনার বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চলছে। অভিযানে জানমালের নিরাপত্তা বিষয়টি লক্ষ্য রেখে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর চরে বুড়িগঙ্গার দুই পাড়ে গড়ে ওঠা বেশ কয়েকটি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।  ছবি: হাসান রাজা
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর চরে বুড়িগঙ্গার দুই পাড়ে গড়ে ওঠা বেশ কয়েকটি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। ছবি: হাসান রাজা

আজকের উচ্ছেদকৃত অবৈধ স্থাপনার মধ্যে রয়েছে দুইতলা তিনটি ভবন, একতলা ভবন সাতটি, আধা পাকা স্থাপনা ২৩টি ও ২৫৭টি ছোট বড় টিনশেডের ছাপড়া ও টং ঘর।

বিআইডব্লিউটিএর ঢাকা নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক একেএম আরিফউদ্দিন বলেন, আগামী মঙ্গলবার থেকে আবার বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।

উচ্ছেদ অভিযানে উপস্থিত ছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী অখিল কুমার বিশ্বাস, বিআইডব্লিউটিএর ঢাকা নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক একেএম আরিফউদ্দিন, উপপরিচালক মিজানুর রহমান ও সহকারী পরিচালক নুর হোসেনসহ পুলিশ ও আনসার সদস্যরা।