ভবিষ্যৎ নিয়ে সীমান্তের মানুষ শঙ্কায়

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি
>
  • মিয়ানমার থেকে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রায় ২০০ জনের বান্দরবানের রুমায় অনুপ্রবেশ
  • উখিয়া-টেকনাফের সাড়ে পাঁচ লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে রোহিঙ্গারা রয়েছে ১১ লাখ
  • ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ভারত থেকে ১ হাজার ৫০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে

রাখাইন রাজ‍্য থেকে এবার বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন আসতে থাকায় মিয়ানমার সীমান্তবর্তী বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার বাসিন্দাদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিনে মিয়ানমার থেকে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রায় ২০০ জন সীমান্ত অতিক্রম করে বান্দরবানের রুমা উপজেলায় অনুপ্রবেশ করেছে। এই তথ্য স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিদের।

আগে থেকে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের ফেরত না পাঠাতে পারা এবং নতুন করে আরও মিয়ানমারের নাগরিক দেশে ঢুকে পড়ায় নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সীমান্তবর্তী উপজেলার বাসিন্দারা। মিয়ানমারের নাগরিকদের অনুপ্রবেশ ঠেকানো না গেলে সীমান্ত উপজেলাগুলোতে পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও সামাজিক জীবনে বড় বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।

সর্বশেষ গত বুধবার মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের আরও ৪০ জন নাগরিক অনুপ্রবেশ করেছে রুমায়। তবে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি বলছে, এ পর্যন্ত রাখাইনের ৩৮টি বৌদ্ধ পরিবারের ১৩৬ জন রুমা উপজেলায় সীমান্তের শূন্যরেখায় আশ্রয় নিয়েছে, তারা বাংলাদেশের ভেতরে ঢোকেনি।

বান্দরবান জেলার রুমা, নাইক্ষ্যংছড়ি, আলীকদম ও থানচি—এই চার উপজেলার সঙ্গে মিয়ানমারের স্থলসীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে রুমা ও থানচির সীমান্তবর্তী এলাকার বড় অংশই অত্যন্ত দুর্গম। পাহাড়ি এসব এলাকায় বিজিবির পক্ষে সার্বক্ষণিক নজরদারি করা অত্যন্ত কঠিন বলে স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন।

রুমা উপজেলার রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিরা বম প্রথম আলোকে বলেন, মিয়ানমার থেকে আসা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের শরণার্থীরা চেইক্ষ্যংপাড়ার (এখানে বম সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা থাকে) কাছে সীমান্ত এলাকায় খোলা জায়গায় তাঁবু টানিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। আশপাশের পাড়ার বাসিন্দারা খাবার দিয়ে তাদের সহায়তা করছেন। তবে তীব্র শীতের কারণে শিশু ও বয়স্করা সমস্যায় পড়েছে।

এদিকে উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, মিয়ানমারের শান, কাচিন ও আরাকানের বিভিন্ন স্থানে দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির (বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী) সংঘাত চলছে। প্রধান সংঘর্ষস্থল হলো শান রাজ্যের পালিত ওয়া এলাকা। এই এলাকায় মূলত খুমি-চীনদের বসবাস। তাদের কেউ কেউ রুমা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে।

রুমা উপজেলা ছাড়াও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের শূন্যরেখায় প্রায় চার–পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে। রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযান শুরু হলে তারা ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর এখানে আশ্রয় নেয়। এই রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের উখিয়া–টেকনাফের আশ্রয় শিবিরে যায়নি।

গত বছরে ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নেওয়া ১ হাজার ৫০০ রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। তারাও কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। এদিকে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধ না হওয়ায় ক্ষোভের পাশাপাশি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ।

টেকনাফ সরকারি কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সন্তোষ কুমার শীল বলেন, আগে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না মিয়ানমার। এখন নতুন করে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের শরণার্থীরা আসায় স্থানীয় মানুষ তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।

২০১৭ সালে রাখাইনে সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে সাত লাখের বেশি মুসলিম রোহিঙ্গা এবং ১০২টি পরিবারে ৫১২ জন প্রাণভয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। নতুন ও পুরোনো মিলিয়ে টেকনাফ ও উখিয়ার শিবিরগুলোতে এখন ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে।

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, উখিয়া-টেকনাফের সাড়ে পাঁচ লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে রোহিঙ্গারা রয়েছে ১১ লাখ। স্থানীয় মানুষই এখন সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। নতুন আসা বিশাল এই জনগোষ্ঠী স্থানীয় মানুষের জন্য হুমকি।