বাংলাদেশের বিষয়ে 'নাক না গলাতে' পাকিস্তানকে চিঠি

জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের সমালোচনার প্রতিবাদে ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার আহমেদ হুসাইন দায়ুকে আজ বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছে। এ সময় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তানকে ‘নাক গলাতে’ বারণ করে তাঁর কাছে একটি চিঠি দেওয়া হয়।

গত ২৯ অক্টোবর আলবদর বাহিনীর প্রধান ও জামায়াতের নেতা নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এ রায়ের খবরে ১ নভেম্বর এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিসার আলী গভীরভাবে শোকাহত হওয়ার কথা জানান।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে নিসার আলী বলেন, বিয়োগান্ত ওইসব ঘটনার প্রায় ৪৫ বছর পর মনে হচ্ছে বাংলাদেশ অতীত আঁকড়ে থাকতে চায় এবং সময়ের বিচারে প্রমাণিত ‘ক্ষমা ও ভুলে যাওয়ার’ মহৎ গুণকে পুরোপুরি অবজ্ঞা করছে। বাংলাদেশ সরকার জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে অপব্যবহার করছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে ডেকে পাঠানো হয়। এ সময় আহমেদ হুসাইন দায়ুকে একটি কূটনৈতিক চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তানকে ‘নাক গলাতে’ বারণ করার পাশাপাশি দেশটির একটি স্বার্থান্বেষী মহলকে নিজেদের ঘর সামলানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, আজ দুপুরে অতিরিক্ত পররাষ্ট্রসচিব (দ্বিপক্ষীয় বিষয়াবলি) মো. মিজানুর রহমান তাঁর দপ্তরে পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলব করেন। মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর ১ নভেম্বর পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী খানের দেওয়া বক্তব্যের কড়া প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারের মাধ্যমে ইসলামাবাদের কাছে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান তুলে ধরা হয়।

ইসলামাবাদের কাছে পাঠানো কূটনৈতিক চিঠিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের সামগ্রিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়। এ বিচারের ব্যাপারে যুদ্ধাপরাধবিষয়ক বিশেষ মার্কিন দূত স্টিফেন জে র‌্যাপ ও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রশংসার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।
চৌধুরী নিসার আলী খানের দেওয়া বক্তব্যকে অনাকাঙ্ক্ষিত ও অসংগতিপূর্ণ আখ্যায়িত করে মো. মিজানুর রহমান বলেন, এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল। মানবতাবিরোধীদের বিচার বাংলাদেশে ব্যাপক জনসমর্থন লাভের পাশাপাশি বিচারহীনতার সংস্কৃতি অবসানের জন্য ব্যাপক আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় করছে।

বাংলাদেশের মানবতাবিরোধী বিচারের বিষয়ে জামায়াতে ইসলামি পাকিস্তানের দেওয়া বিবৃতি প্ররোচনামূলক উল্লেখ করে অতিরিক্ত পররাষ্ট্রসচিব মো. মিজানুর রহমান বলেন, এ ধরনের অপতৎপরতা থেকে বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী হিসেবে পাকিস্তান বিরত থাকবে বলে বাংলাদেশ আশা করে।