অর্থ পাচার অপরাধে দুদকের মামলায় সাজার হার শতভাগ: ইকবাল মাহমুদ

সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সেন্টার ফর স্টেট অব কোর্টস সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। ছবি: দুদকের সৌজন্যে
সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সেন্টার ফর স্টেট অব কোর্টস সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। ছবি: দুদকের সৌজন্যে

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, অর্থ পাচার (মানি লন্ডারিং) সংক্রান্ত অপরাধে দুদকের করা মামলায় সাজার হার শতভাগ। আজ বুধবার সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সেন্টার ফর স্টেট অব কোর্টস সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় এ কথা জানান তিনি। সংস্থাটির কারিগরি পরিচালক রবার্ট লকারির নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, বিদ্যমান আইন অনুসারে অর্থ পাচারসংক্রান্ত মামলা পরিচালনার একক দায়িত্ব দুদকের নেই। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ একাধিক সংস্থা এ অপরাধের তদন্ত করে। দুদক শুধুই ঘুষ ও দুর্নীতি সম্পৃক্ত অর্থ পাচারসংক্রান্ত অপরাধ তদন্তের ক্ষমতাপ্রাপ্ত।

অর্থ পাচার সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এর মাধ্যমে শুধু সন্ত্রাসে অর্থায়ন হয় না, বরং দেশের পুঁজি অন্য জায়গায় স্থানান্তর (ক্যাপিটাল ফ্লাইং) হচ্ছে, যা দেশের অর্থনৈতিক বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

প্রতিনিধিদলের সদস্যরা দুদক চেয়ারম্যানকে জানান, তদন্ত এবং বিচারপ্রক্রিয়া অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তদন্তকারীরা যেসব সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করবেন, সেসব বিবেচনা করে বিশ্লেষণ করবেন প্রসিকিউটররা (আইনজীবী)। অর্থাৎ তদন্তকারী কর্মকর্তা, আইনজীবী এবং বিচারক অপরাধ দমনে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। আর অপরাধ দমনে কার্যকর তদন্ত ও আইনজীবী প্রয়োজন।

এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, কমিশনের তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়ার সক্ষমতা হয়তো এখনো কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি। তবে দেশ-বিদেশে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তদন্তকারী কর্মকর্তা ও আইনজীবীদের সক্ষমতা আরও বাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে। দুদকের স্থায়ী আইনজীবী নেই জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, শুধু দুদক নয়, সরকারের কোনো স্থায়ী আইনজীবী নেই। এরপরও দুদক আইনজীবীদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য কমিশন অনুমোদিত নীতিমালার আলোকে ব্যবস্থা নিচ্ছে।

দুদক চেয়ারম্যান বাংলাদেশের অর্থ পাচারসংক্রান্ত অপরাধ প্রতিরোধে তদন্তকারী কর্মকর্তা, আইনজীবী এবং সংশ্লিষ্ট বিচারকদের প্রশিক্ষণে সহায়তার আহ্বান জানান। প্রতিনিধিদলের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘শুধু আমেরিকায় গিয়ে প্রশিক্ষণ নিতে হবে তা নয়, বরং আপনারা আপনাদের দক্ষ ব্যক্তিদের বাংলাদেশে এনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারেন।’
তিনি বলেন, কমিশনের কোনো আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন নেই, কমিশনের প্রয়োজন জ্ঞানের, যার মাধ্যমে পদ্ধতিগত উন্নয়ন ঘটানো যাবে। কমিশনের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন দেশি-বিদেশি জ্ঞানের মিশ্রণ।
শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত উন্নয়নের মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান করা যায়, জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ছোট ছোট দুর্নীতি অঙ্কুরেই বিনাশ করা গেলে বড় বড় দুর্নীতির পথ সংকুচিত হয়ে আসে। তা না হলে এই ছোট ছোট দুর্নীতি একসময় দুর্নীতির মহিরুহে পরিণত হয়, যা সমাজকে বিপন্ন করে ফেলে এবং তা উপড়ে ফেলাও দুরূহ।