সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় আ.লীগের প্রার্থী বদল

জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক এবং সুনামগঞ্জ শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি খায়রুল হুদা ওরফে চপল। ছবি: সংগৃহীত
জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক এবং সুনামগঞ্জ শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি খায়রুল হুদা ওরফে চপল। ছবি: সংগৃহীত

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। এখানে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক এবং সুনামগঞ্জ শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি খায়রুল হুদা ওরফে চপলকে। সে অনুযায়ী তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। কিন্তু আজ বুধবার তাঁকে পরিবর্তন করে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মোবারক হোসেনকে।

সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল কবির ইমন বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। মঙ্গলবার রাতে মোবারক হোসেনের দলীয় মনোনয়নের চিঠিতে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষর করেছেন বলে জানান তিনি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, খায়রুল হুদা সুনামগঞ্জের হাওরে ২০১৭ সালের ব্যাপক ফসলহানির ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলার আসামি ছিলেন। ওই মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় দুই মাস জেলও খাটেন। তবে ১০ ফেব্রুয়ারি মামলার দীর্ঘ তদন্ত শেষে দুদক ৩৩ জনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগপত্র অনুমোদন দিয়েছে, সেটি থেকে খায়রুল হুদার নাম বাদ দেওয়া হয়। যদিও অভিযোগপত্র এখনো বিচারিক আদালতে দাখিল করা হয়নি।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মোবারক হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মোবারক হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

খায়রুল হুদা সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দলের মনোনয়ন পাওয়ার পরপর হাওরে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির মামলা ও খায়রুল হুদার আসামি থাকার বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল কবির আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘খায়রুল হুদা সুনামগঞ্জের হাওরে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের দায়ের করা মামলার আসামি। ২০১৭ সালে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির কারণেই হাওরে বাঁধ ভেঙে ব্যাপক ফসলহানি ঘটে এবং বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল। সার্বিক দিক বিবেচনায় কেন্দ্র তাঁকে বাদ দিয়ে মোবারক হোসেনকে এখানে প্রার্থী করেছে। আমরা মোবারক হোসেনের দলীয় মনোনয়নের চিঠি হাতে পেয়েছি।’

এ বিষয়ে জানতে খায়রুল হুদার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠজন জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য নুরুল ইসলাম বজলু বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে এখনো কোনো কিছুই জানি না।’

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন চারজন। তাঁরা হলেন খয়ারুল হুদা, মোবারক হোসেন, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্রসংসদের ভিপি ও জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য মনিষ কান্তি দে মিন্টু ও রাশেদ বখত। এঁরা সবাই আওয়ামী লীগের।

২০১৭ সালে সুনামগঞ্জের হাওরে ব্যাপক ফসলহানির পর বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ওই বছরের ২ জুলাই সুনামগঞ্জ সদর থানায় দুদকের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়। এই মামলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৫ জন কর্মকর্তা ও বাঁধের কাজের ৪৬ জন ঠিকাদারকে আসামি করা হয়। মামলার আসামির তালিকায় খায়রুল হুদার নাম রয়েছে। মামলা দায়েরের দিনই ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হন সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তৎকালীন বরখাস্ত হওয়া নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আফসার উদ্দিন ও ঠিকাদার মো. বাচ্চু মিয়া। এরপর ১৫ আগস্ট রাতে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার হন খায়রুল হুদা। বর্তমানে তাঁরা জামিনে আছেন।