টঙ্গীতে জড়ো হচ্ছেন মুসল্লি

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

টঙ্গীর তুরাগ তীরে আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে তাবলিগ জামাতের ৫৪তম বিশ্ব ইজতেমা। টানা ৪ দিনব্যাপী ইজতেমা অনুষ্ঠানের জন্য প্রায় এক বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিশাল প্যান্ডেল নির্মাণ করা হয়েছে। ইজতেমা মাঠ এখন পুরোপুরি প্রস্তুত।

এ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বাণীতে দেশবাসী এবং বিশ্বের সকল মুসলমানকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন।

ইজতেমা মাঠের প্রস্তুতি কাজ শেষ হওয়ার পর যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল মুরব্বিদের সঙ্গে নিয়ে ইজতেমাস্থল পরিদর্শন করেছেন। প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, বিশ্ব ইজতেমা বাংলাদেশের জন্য সমগ্র মুসলিম উম্মার কাছে একটি বিরাট ঐতিহ্যবাহী মহাসম্মেলন। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ, যে কোনো মূল্যে টঙ্গীর বিশ ইজতেমাকে সফল করতে হবে। আমাদের প্রধান উদ্দেশ্যটা হলো, বিশ ইজতেমা ভাগে ভাগে না, একত্রে এক সঙ্গে হতে হবে এবং এক সঙ্গে করার নিয়তও করেছি। আল্লাহর রহমত এক সঙ্গে করতে অনেক বাঁধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে আমরা একত্রিত হয়েছি।’

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বৃহস্পতিবার দুপুরে ইজতেমা ময়দানে বিনা মূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ বিতরণ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। এ সময় ধর্মপ্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এই বিশ্ব ইজতেমার স্থান জাতির পিতা ইজতেমা কর্তৃপক্ষকে দিয়েছিলেন। ইজতেমা অনুষ্ঠানের জন্য টঙ্গীর ইজতেমা ময়দান এখন পুরোপুরি প্রস্তুত। কাল থেকে দেশ বিদেশের মুসল্লিদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠবে বিশ ইজতেমাস্থল।’ তিনি আরও জানান, তাবলিগ জামাতের দু’পক্ষের মুরব্বিদের মধ্যে যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল তা নিরসন করে একটানা ৪ দিনের বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠানে আমরা সক্ষম হয়েছি।
দুই প্রতিমন্ত্রী ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হামদর্দ, ইবনে সিনা, র‌্যাব, গাজীপুর সিটি করপোরেশন, যমুনা ব্যাংক, ইসলামিক মিশনসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থা ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্প ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ধর্ম সচিব আনিসুর রহমান, গাজীপুর মেট্রো পুলিশ কমিশনার ওয়াইএম বেলালুর রহমানসহ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।

একটানা ৪ দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমা হলেও দু’পক্ষের ভাগে থাকছে দু’দিন করে বিশ্ব ইজতেমার নেতৃত্ব। প্রথম ভাগে থাকছে যোবায়ের পন্থী তাবলিগ অনুসারী মুসল্লিদের নেতৃত্বে। দ্বিতীয় ভাগে থাকছে সা’দ পন্থী ওয়াসিকুল অনুসারীদের নেতৃত্বে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ইজতেমা মাঠের সংস্কার কাজ এবং সেবামূলক কার্যক্রম নিশ্চিত করেছে।

বিশ ইজতেমার সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিং এর জন্য ইজতেমা মাঠে ৫ টি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশন, গাজীপুর জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, র‌্যাব, আনসার ও ভিডিপির কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে।

সার্বিক নিরাপত্তার জন্য পুলিশ প্রশাসনের ১৫ টি ওয়াচ টাওয়ার, র‌্যাবের ১০ টি ওয়াচ টাওয়ার, মুসল্লিদের জন্য ৩৫০ টি অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ, অজু, গোসল, পয়োনিষ্কাশন ও সুপেয় পানি সরবরাহের লক্ষ্যে ১৩ টি গভীর নলকূপ থেকে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন ৩ কোটি ৫৪ লক্ষ গ্যালন সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থাও রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে আকাশ ও নৌ-পথে পুলিশ, র‌্যাবের নিয়মিত টহল।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ওয়াইএম বেলালুর রহমান বাসসকে জানান, টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমাকে পুরোপুরি নিরাপত্তা চাঁদরে ঘিরে ফেলা হয়েছে।
গাজীপুর জেলা তথ্য অফিসার এম এম রাহাত হাসনাত জানিয়েছেন, ইজতেমার সময় টাঙ্গাইল রোড হয়ে আগত মুসল্লিদের বহনকারী যানবাহন জয়দেবপুর থানাধীন ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠে অবস্থান করবে। ময়মনসিংহ হয়ে আগত মুসল্লিদের বহনকারী যানবাহন চান্দনা চৌরাস্তা হাইস্কুল মাঠে অবস্থান করবে। মিরের বাজার রাস্তা হয়ে আগত মুসল্লিদের বহনকারী যানবাহন মীরের বাজার মাঠে মীরের বাজার চৌরাস্তা হতে তিন শ ফিট রেল লাইন ক্রসিং এর আগে অবস্থান করবে।

সকল সরকারি যানবাহন আনারকলি সিনেমা হল টঙ্গী, শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামের বিপরীতে, টঙ্গীর কাদেরিয়া টেক্সটাইল মিল কম্পাউন্ড, টেলিফোন শিল্প সংস্থা, টঙ্গী সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি মাঠ প্রাঙ্গণ এবং টঙ্গী সরকারি কলেজ মাঠে অবস্থান করবে।
আখেরি মোনাজাতে অংশগ্রহণকারী ভিআইপিগণ আব্দুল্লাহপুর হতে কামারপাড়া ব্রিজ হয়ে বিশ ইজতেমার প্রথম গেটে প্রবেশ করবে।

এ ছাড়া আখেরি মোনাজাতের সময় জরুরি প্রয়োজনে গাজীপুর হতে ঢাকা অভিমুখে গমনের জন্য ভোগড়া মোড় গাজীপুর হতে মীরের বাজার হয়ে ঢাকা রোড ব্যবহার করা যাবে। বিভিন্ন জেলা সমূহ হতে ঢাকাগামী যানবাহন বাসন থানাধীন চান্দনা চৌরাস্তা হতে টঙ্গী হয়ে ডিএমপি এলাকায় প্রবেশের পরিবর্তে চৌরাস্তা, কোনাবাড়ী, চন্দ্রা, বাইপাইল, নবীনগর, আমিন বাজার হয়ে চলাচলের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অপরদিকে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে ঢাকা-মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে যানবাহন নেতৃত্বে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ট্রাফিক সম্পর্কিত যেকোনো তথ্যের জন্য প্রয়োজনে সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার উত্তরা ট্রাফিক জোন ০১৭১৩-৩৯৮৪৯৮ অথবা টিআই উত্তরা ট্রাফিক জোন ০১৯১২-০২৫৯৩৯ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।