ফুলে ফুলে সেজেছে সড়কদ্বীপ

ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ের সড়কদ্বীপটি সংস্কারের পর নতুন রূপ পেয়েছে। সবুজ বনায়ন ও ভাস্কর্য স্থাপনে সহজেই পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এই সড়কদ্বীপ। গতকাল তোলা ছবি।  সাবরিনা ইয়াসমীন
ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ের সড়কদ্বীপটি সংস্কারের পর নতুন রূপ পেয়েছে। সবুজ বনায়ন ও ভাস্কর্য স্থাপনে সহজেই পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এই সড়কদ্বীপ। গতকাল তোলা ছবি। সাবরিনা ইয়াসমীন
>

• সড়কদ্বীপ অর্ঘ্যতে নানান মৌসুমি ফুল
• ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ নগরবাসী
• অন্য সড়কদ্বীপেও এমন আয়োজন চাওয়া

বাহারি ফুলের সমারোহ। ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়াচ্ছে মৌমাছি, প্রজাপতি। মনে হয়, বসন্ত যেন তার পুরো রং-রূপ নিয়ে নেমে এসেছে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ের অর্ঘ্যে। কংক্রিটের এই নগরে ঋতুরাজের এমন সৌন্দর্য চোখে পড়ে কদাচিৎ।

পাশেই ব্যস্ততম মিরপুর রোড। কালো ধোঁয়া, গাড়ি হর্নের শব্দ, যানজট থেকে ক্ষণিকের জন্য স্বস্তি পেতে নজর ফেরাতে পারেন মিরপুর রোড ও গ্রিন রোডের সংযোগস্থলের সড়কদ্বীপে। সায়েন্স ল্যাব মোড়ে ১৮ কাঠা জমি নিয়ে বদ্বীপ আকৃতির এই দ্বীপের নাম অর্ঘ্য।

দ্বীপজুড়ে কৃত্রিম জলাধার। এর ধার ঘেঁষে নানান প্রজাতির গাছের সমারোহ। তুলসী, পুদিনা, ক্যাকটাস থেকে শুরু করে সেখানে ঠাঁই পেয়েছে সূর্যমুখী, রক্তকাঞ্চন, ক্যালেন্ডুলা, ডালিয়া, অনন্ত লতা, কাঠগোলাপ, জবাসহ বাহারি ফুলগাছ। ঋতুর বদলে প্রায় সব গাছেই এখন ফুল ফুটেছে। সেসব ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়াচ্ছে মৌমাছি, প্রজাপতি।

গতকাল রোববার বিকেলে সায়েন্স ল্যাব মোড়ের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ছয় বছরের মেয়েকে ফুল চেনাচ্ছিলেন বীথিকা আলম। মেয়ে কণা আলমকে আগ্রহ নিয়ে সেসব ফুলের নাম, বৈশিষ্ট্য রপ্ত করতে দেখা যায়। চাকরিজীবী বীথিকা বলেন, কংক্রিটের এই নগরে ঋতুবদলের চিত্র তেমন একটা চোখে পড়ে না। কিন্তু এখানকার সড়কদ্বীপে তাকালেই বোঝা যাচ্ছে, শীত ফুরিয়ে বসন্ত এসে গেছে। এই জায়গা দিয়ে চলাচলের সময় তিনি মেয়েকে ফুল চেনানোর চেষ্টা করেন বলে জানান।

সড়কদ্বীপের এই জায়গা একসময় পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) থেকে জায়গাটি সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য বরাদ্দ নেন হেরিটেজ ক্রিয়েটিভ কাউন্সিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাফেয়া আবেদীন। প্রকৃতি এবং নগর সৌন্দর্যবিদ এই নারী ১৮ কাঠার এই জায়গায় প্রায় ৪২ লাখ টাকা খরচ করে সবুজ ল্যান্ডস্কেপ তৈরি করেন।

সড়কদ্বীপে কিছু সময় কাটিয়ে দেখা যায়, কৃত্রিম লেকে সাঁতরে বেড়াচ্ছে তেলাপিয়ার ঝাঁক। একবার ভেসে উঠছে, খাবার মুখে নিয়ে ফের ডুব দিচ্ছে। ফুলে ফুলে ছেয়ে আছে সূর্যমুখী, রক্তকাঞ্চন, ক্যালেন্ডুলা, ডালিয়া, অনন্ত লতা, কাঠগোলাপ, গাঁদা, গোলাপসহ হরেক দেশি-বিদেশি গাছ। উদ্যানের চারদিকের ফুটপাতও সাজানো ছোট-বড় গাছ দিয়ে। উদ্যানের ভেতরে কালো টাইলসে নির্মিত ভাস্কর্য।

বিকেলের নরম রোদে যেন সোনা রং ঝরছে সূর্যমুখী ফুল থেকে। ফুলসমেত বাগানবিলাসের ঝোপ নেমে গেছে লেকের পানিতে। মৃদু বাতাসে দুলছে রক্তকাঞ্চন, বাহারি ডালিয়ার পাপড়ি। কৃত্রিম পাহাড়সারির চূড়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে ছোট্ট চড়ুই, দোয়েল। তবে লেকের ওপরের হাঁসের ঘর এবং কবুতরের খাঁচা খালি।

এই সড়কদ্বীপের দেখভাল করেন মো. আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, লেকের পানিতে হাঁসের ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য দেখে শিশুরা খুব আনন্দ পেত। কিন্তু চুরি হয়ে যাওয়ায় খাঁচাগুলো খালি।

দ্বীপজুড়ে সৌন্দর্যবর্ধন এবং বৈচিত্র্য আনতে গাছগুলো মাটি, পানি এমনকি কেবল সিমেন্টেও রাখা হয়েছে। উপস্থাপনে ভিন্নতা আনতে মাটির টব, মটকা, সিমেন্টের পাইপও ব্যবহার করা হয়েছে।

পরিচালক রাফেয়া আবেদীন বলেন, নগরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধরে রাখতেই সড়কদ্বীপে এই প্রাকৃতিক আয়োজন। এতে শিশুরা গাছের সঙ্গে পরিচিত হতে পারছে। পথচারীরা দুদণ্ড শান্তি পান, পান পথ চলতে চলতে সৌন্দর্য পিয়াসের সুযোগ। তিনি জানান, ফুল এবং গাছ বাঁচাতে সড়কদ্বীপে সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ। তবে তারের বেষ্টনী এ দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগে কোনো বাধা তৈরি করে না। অনেক শিশুকেই দেখা যায় এখানে থেমে যেতে। কেউ কেউ ভেতরে প্রবেশের বা ফুল নেওয়ার বায়নাও করে।

বাবা-মায়ের সঙ্গে গ্রিন রোডের একটি হাসপাতালে অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে এসেছিল সিয়াম রহমান। আজিমপুরের বাসায় ফিরতে সায়েন্স ল্যাব মোড়ে বাসের অপেক্ষায় ছিল এই পরিবার। ফুলে চোখ আটকে গেলে থমকে যায় সিয়াম। বায়না ধরে ভেতরে প্রবেশের। পরে ঢুকতে না পেরে সেখানে দাঁড়িয়েই ফুল দেখে পরিবারটি।

পথচারীর পাশাপাশি নিকটবর্তী হাসপাতালের রোগীর স্বজনেরা ভিড় করে দ্বীপের কাছে, ছবি তোলে। বাসের যাত্রীরা ঘাড় ঘুরিয়ে ফুল দেখে। সড়কদ্বীপের পাশেই চা বিক্রি করেন মো. শফিক। তিনি বলেন, সড়কদ্বীপের দিকে তাকালেই মন ভালো হয়ে যায়। সকালে টিয়া আসে। সন্ধ্যার পরে ঝিঁঝি ডাকে।

প্রতিটি সড়কদ্বীপে এমন প্রাকৃতিক আয়োজন চান পথচারী ফারহান উদ্দিন। তিনি বলেন, এমন ছোট্ট সবুজ পার্ক দিনের ক্লান্তি দূর করে দেবে, উপহার দেবে সবুজ নগর।