বাংলা ভাষার বিকৃত উচ্চারণ রোধ শুধু নির্দেশনাতেই

বেতার ও দূরদর্শনে (টিভি) বাংলা ভাষার বিকৃত উচ্চারণ ও দূষণ রোধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। ২০১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। তবে নির্দেশনা থাকলেও এর বাস্তবায়ন খুব একটা এগোয়নি।

২০১২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোর উপসম্পাদকীয়তে ‘ভাষাদূষণ নদীদূষণের মতোই বিধ্বংসী’ শিরোনামে নিবন্ধ ছাপা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব রকিব উদ্দিন আহমেদ এটি আদালতের নজরে আনেন। শুনানি নিয়ে ওই বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন। আদেশে বেতার ও দূরদর্শনে বিকৃত উচ্চারণ, ভাষা ব্যঙ্গ ও দূষণ করে অনুষ্ঠান প্রচার না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। বাংলা ভাষার দূষণ, বিকৃত উচ্চারণ, সঠিক শব্দচয়ন, ভিন্ন ভাষার সুরে বাংলা উচ্চারণ ও বাংলা ভাষার অবক্ষয় রোধে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা নির্ধারণ করতে বাংলা একাডেমির সভাপতি আনিসুজ্জামানের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করতে বলা হয়। আদালতের নির্দেশে গঠিত কমিটি ওই বছরই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠায়।

বাংলার সঙ্গে হিন্দি বা ইংরেজি মিশিয়ে কথা বলা ভাষার দূষণ বলে মনে করেন শিক্ষাবিদেরা।

জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রতিবেদন দিয়েছি, যা শিক্ষা মন্ত্রণালয় হয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরে যাওয়ার কথা।’

তবে ওই প্রতিবেদন এখন পর্যন্ত পাননি বলে গতকাল রাতে প্রথম আলোকে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

কমিটির সুপারিশে বলা হয়, হিন্দি চ্যানেলের ছড়াছড়ি বাংলা ভাষার ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। এটি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। এ বিষয়ে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, নাটকের চরিত্রের মুখে আঞ্চলিক ভাষা চলতে পারে। তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রমিত বাংলা ব্যবহার করতে হবে। তিনি বলেন, আইন করে ভাষার ব্যবহার পাল্টানো যায় না। ভাষা ব্যবহারকারীদের সচেতনতাই ভাষার দূষণ রোধের বড় উপায়।

অবশ্য ওই রুলের এখনো চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি বলে জানান রকিব উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, প্রথম দিকে সবাই আদালতের নির্দেশনা অনুসরণ করছিল। তবে এখন অবস্থা আগের মতোই।

এদিকে ২০১৪ সালে সব ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা প্রচলনে নির্দেশনা চেয়ে রিট করেন এক আইনজীবী। এতে বলা হয়, ১৯৮৭ সালের ৮ মার্চ বাংলা ভাষা প্রচলন আইন পাস হলেও ২৬ বছরে আইনটি অনুসরণ করা হচ্ছে না। ওই বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি রুলসহ হাইকোর্ট গাড়ির নম্বরপ্লেট, সব ধরনের সাইনবোর্ড ও নামফলক বাংলায় লিখতে আদেশ দেন।

এখনো ওই রুল নিষ্পত্তি হয়নি বলে জানান রিট আবেদনকারী আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চে গত বছর বিষয়টি শুনানির জন্য ছিল, তবে আদালতের বিচারিক এখতিয়ার পরিবর্তন হওয়ায় এর শুনানি হয়নি। হাইকোর্টের আদেশের পরও বিভিন্ন জায়গায় সাইনবোর্ড, নম্বরপ্লেট, গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামফলক ইংরেজিতে দেখা যায়, যা অনভিপ্রেত।

সংবিধানের তৃতীয় অনুচ্ছেদ বলা আছে, প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। এর আলোকে ১৯৮৭ সালে ‘বাংলা ভাষা প্রচলন আইন’ প্রবর্তন করা হয়। এই আইন অনুযায়ী, ‘সরকারী অফিস, আদালত, আধা-সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিদেশের সাথে যোগাযোগ ব্যতীত অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে নথি ও চিঠিপত্র, আইন আদালতের সওয়াল জবাব এবং অন্যান্য আইনানুগত কার্যাবলী অবশ্যই বাংলায় লিখিতে হবে।’