অন্য রকম পুলিশ সুপার

পুলিশ সদস্যদের নিয়ে জমি চাষ করছেন নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত
পুলিশ সদস্যদের নিয়ে জমি চাষ করছেন নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত

হাফহাতা গেঞ্জি, মাথায় গামছা বাঁধা, এক হাতে লাঙলের মুঠো, অপর হাতে গরু তাড়ানো লাঠি। গরু, লাঙল, জোয়াল নিয়ে চাষ করছেন জমি। দেখলে মনে হবে বোরো মৌসুমে কৃষক জমি চাষ করছেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি হলেন নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। তাঁর দেখাদেখি পুলিশ লাইনসের অপর সদস্যসহ স্কুলের ছেলেমেয়েরাও নেমে পড়ে জমিতে। জমি তৈরিসহ ধানের চারা রোপণের কাজে সহায়তা করেন।

গত শুক্রবার নড়াইলের পুলিশ লাইনে পুলিশ সদস্যদের নিয়ে জমিতে ধান রোপণ করেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। পুলিশ লাইনের কোনো জমি যাতে অনাবাদি অবস্থায় না থাকে, সে জন্য নিজে পুলিশ সদস্যদের নিয়ে জমি চাষ করতে নেমে পড়েন। ২০ শতাংশ জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণ করেন পুলিশ সদস্যদের নিয়ে।

মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পরপর দুবার রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক পেয়েছেন।

পুলিশ লাইনের কর্মকর্তাসহ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এর আগে মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন তিন বিঘা জমিতে বিভিন্ন সবজিসহ ৪টি পুকুর পরিষ্কার করে নানা প্রজাতির মাছের চাষ করেন। জৈব সার তৈরি করে তা কাজে লাগান তিনি। উৎপাদিত ফসল এবং মাছ পুলিশ লাইনের মেসে থাকা সদস্যদের কম দামে খাওয়ানো হয়।

পুলিশ সদস্যদের নিয়ে জমিতে ধান রোপণ করছেন মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত
পুলিশ সদস্যদের নিয়ে জমিতে ধান রোপণ করছেন মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শরফুদ্দিন বলেন, ‘চাকরি জীবনে আমি অনেক স্যারের সঙ্গে কাজ করেছি। কিন্তু এমন লোক পাইনি।’

জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মো. গোলাম নবী বলেন, ‘নড়াইলের বর্তমান পুলিশ সুপার একজন ভালো প্রশাসক। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণসহ জঙ্গিবাদ, মাদক, সন্ত্রাস, বাল্যবিবাহমুক্ত সমাজ গঠনে তিনি আপসহীন। কিন্তু তিনি যে একজন ভালো কৃষক, তা জানতাম না।’

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কাছে কোনো কাজই ছোট নয়। আমি পুলিশ প্রশাসক হতে পারি, কিন্তু এ সমাজেরই একজন মানুষ।’ তিনি মনে করেন, দেশের উচ্চপদে যাঁরা চাকরি করেন তাঁরা দেশের মানুষের সেবক। কৃষিনির্ভর এই দেশে বেশির ভাগ মানুষই সমাজের তৃণমূল থেকে উঠে এসেছেন। চাকরি জীবনে প্রবেশ করার আগে হয়তো-বা বাপ-দাদার সঙ্গে অনেকেই এ ধরনের কাজ করে আজ উচ্চপদে চাকরি করছেন। কোনো কাজই ছোট নয়, এ প্রজন্মকে জানানোর জন্যই তিনি নিজ হাতে হাল চাষ করেছেন। পুলিশ লাইনসের কোনো জমি অনাবাদি পড়ে থাকবে না।