নারীর সুযোগ বাড়াতে হবে

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন অধ্যাপক শামিম জেড বসুনিয়া। পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক অতিরিক্ত  মহাপরিচালক খালেদা শাহরিয়ার কবির। গতকাল প্রথম আলো কার্যালয়ে।  প্রথম আলো
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন অধ্যাপক শামিম জেড বসুনিয়া। পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক খালেদা শাহরিয়ার কবির। গতকাল প্রথম আলো কার্যালয়ে। প্রথম আলো

প্রকৌশল শিক্ষায় পড়াশোনা শেষে নারীরা চাকরি করছেন, কেউ কেউ ঝরে পড়ছেন। প্রকৌশল খাতে নারীদের উৎসাহ দিতে অগ্রগণ্য ও সফল নারী প্রকৌশলীদের কথা তুলে ধরতে হবে। কর্মস্থলে অনুকূল পরিবেশ পাশাপাশি নারী প্রকৌশলীদের কর্মক্ষেত্রে পাঠানোর ক্ষেত্রে অভিভাবকদের মানসিকতা পরিবর্তনও জরুরি।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গতকাল রোববার সকালে প্রথম আলোর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘প্রকৌশল শিক্ষায় নারীর প্রতিবন্ধকতা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকেরা এসব কথা বলেন। সেভেন রিংস সিমেন্ট লিমিটেডের সহযোগিতায় এই বৈঠকের আয়োজন করে প্রথম আলো। বৈঠক সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম।

ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের ইমেরিটাস অধ্যাপক শামিম জেড বসুনিয়া বলেন, প্রকৌশল বিষয়ে পড়ার জন্য পরিবার থেকে মেয়েরা আর্থিক সহায়তা কম পান। ছেলেরা টিউশনি করে উপার্জন করতে পারেন, নারীরা আবার এই সুযোগটা কম পান। শিক্ষায় বাধা হচ্ছে নারীদের আবাসন সমস্যা। তাঁদের সামনে রোল মডেল আনতে হবে।

স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, দেশে নারী প্রকৌশল পেশাজীবীদের প্রথমে প্রমাণ করতে হয় তাঁরা পুরুষের সমান দক্ষ। তারপর তাঁদের পুরুষের চেয়ে বেশি কাজ করে দেখাতে হয়। তিনি আরও বলেন, অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে দ্রুতই। কিন্তু যে হারে হওয়া উচিত তা হচ্ছে না। অভিভাবকদের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতাও দাবিয়ে রাখছে নারীদের।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক খালেদা শাহরিয়ার কবির, ‘আমার বাবা প্রকৌশলী ছিলেন, তাঁকে দেখে উৎসাহিত হয়ে আমি প্রকৌশলবিদ্যা বেছে নিয়েছি। প্রকৌশলবিদ্যায় নারীদের অংশগ্রহণ বাড়লেও সেই উৎসাহটা থাকছে না। রাতে কাজ করতে হবে বলে প্রতিষ্ঠানগুলো নারী প্রকৌশলীদের নিতে চায় না।’

সেভেন রিংস সিমেন্টের পরিচালক তাহ্‌মিনা আহমেদ, ‘প্রকৌশলবিদ্যায় পড়লাম, পরে কিছু করলাম না, এটাও হওয়া উচিত না। নারীদের ইচ্ছাশক্তিটা বাড়াতে হবে। নারী প্রকৌশলীরা অনেক ডিটেইল কাজ করে থাকেন, যা কখনো কখনো পুরুষ প্রকৌশলীদের চেয়ে নিখুঁত হয়।’

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ফাহমিদা হক খান বলেন, নারী প্রকৌশলীরা মাঠপর্যায়ে কাজে গেলে অনেক সময় কোনো কোনো ক্ষেত্রে অধীনস্থ পুরুষ সহকর্মীরা একটু অনীহা প্রকাশ করেন। পুরুষ প্রকৌশলীরা কিছু বললে অধীনস্থরা মেনে নেন। কিন্তু নারী ঊর্ধ্বতন প্রকৌশলী কোনো সিদ্ধান্ত দিলে তাঁরা পাল্টা বলার চেষ্টা করেন।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের ডিন ফরিদা নিলুফার বলেন, ‘১৯৮২ থেকে ২০১৮—এই ৩৬ বছরে বুয়েটে মেয়েদের ভর্তির অংশগ্রহণ বেড়েছে ১৮ শতাংশ। আমার কাছে মনে হয়, এটা বিরাট। তবে যে পরিমাণ নারী প্রকৌশলবিদ্যায় পড়েন, তাঁদের অর্ধেক সংখ্যক পেশায় আসেন।’

ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালট্যান্টস লিমিটেডের স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার নেলি মিস্ত্রি বলেন, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে কাজ করতে গেলে প্রতিষ্ঠানগুলো মেয়েদের নিতে চায় না। কেননা কাজ শেষ হতে অনেক রাত হয়ে যায়। আর সাইট যদি ঢাকার বাইরে হয়, সেখানেও আবাসন সমস্যা হয়।

ক্রিয়েটোর প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান স্থপতি সুমায়া ইসলাম বলেন, প্রকৌশলীরা চাকরিক্ষেত্রে গেলে দেখা যায়, চাকরিতে তাঁদের দায়িত্ব বেশি থাকে। কিন্তু অন্যান্য পেশার তুলনায় বেতনটা কম হয়। বেতনকাঠামো, নিরাপত্তা—এসব বিষয় ঠিক করতে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিতে হবে।

বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নেসফুন নাহার বলেন, পুরকৌশল নারীরা সাইট পরিদর্শনে গেলে তাঁদের মিস্ত্রিদের সঙ্গে কাজ করতে হয়, সিদ্ধান্ত দিতে হয়। সমাজের যে দৃষ্টিভঙ্গি, সেখানে এখনো নারীর কথাকে সহজভাবে মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা আছে।

বুয়েটের কেমিকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ফাতিমা মাহনাজ বলেন, লিঙ্গ নিয়ে সামাজিক ধারণার কারণেই প্রকৌশলে মেয়েদের অংশগ্রহণ কম। ধারণা আছে, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত—এই বিষয়গুলোতে নারীরা দুর্বল। এটি একেবারেই ভুল।

সেভেন রিংস সিমেন্টের ব্র্যান্ড অ্যান্ড কমিউনিকেশনের উপ মহা–ব্যবস্থাপক আতিক আকবর বলেন, চিকিৎসা, শিক্ষা ও সেবা খাতে নারীর অংশগ্রহণ যেমন বাড়ছে, তেমনি প্রকৌশল খাতেও তা বাড়াতে হবে।