ব্যাংকের টাকা লুট করায় ১৬ জনের কারাদণ্ড

সিলেটে পূবালী ব্যাংকের ২২ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় দায়ের করা ডাকাতি মামলার রায়ে একজন ইউপি চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশনের সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ ১৬ জনকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সিলেটের মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. মফিজুর রহমান ভূঞা গতকাল সোমবার এ রায় দেন।

কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাতজনের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর করে সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় একজন আসামিকে খালাস দেওয়া হয়।

দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার তেতলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান উসমান আলী, তাঁর দুই ভাই দক্ষিণ সুরমার রণেশ্বরপুর গ্রামের বাসিন্দা আনহার আলী ও আঙ্গুর আলী রয়েছেন। উসমান সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির সদস্যসচিব পদে আছেন। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে তিনি সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা-ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ) আসনে জাপা মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। দণ্ডপ্রাপ্ত সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর হলেন আশিক আহমদ। তিনি সিটি করপোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন সিলেট সদর উপজেলার সোনাতলা গ্রামের শহীদুল ইসলাম, নগরের ফাজিলচিশতের জাবেদ আহমদ, সওদাগরটুলার রুবেল আহমদ, বলকলাপাড়ার কামাল হোসেন, নূরানী সুবিদবাজারের বাসিন্দা কলিন্স সিংহ, কদমতলীর আবদুল মমিন, ইংগুলাল রোড কুয়ারপারের রহিম আলী, দক্ষিণ সুরমার রণেশ্বরপুরের শফিক মিয়া, আবদুল হক, শাহান, লিটন ও সিপন আহমদ।

তাঁদের মধ্যে রহিম, জাবেদ, আবদুল হক, শফিক মিয়া ও লিটন বর্তমানে পলাতক। অন্য আসামিরা রায় ঘোষণার সময় আদালতের কাঠগড়ায় ছিলেন। পরে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় বেকসুর খালাস পাওয়া আসামি হলেন আনোয়ার হোসেন। মামলার অভিযোগপত্রে তাঁর নাম ছিল।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০০৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সিলেটের বিভিন্ন শাখা থেকে টাকা নিয়ে নগরের লালদীঘিরপাড় এলাকায় সিলেট শাখায় মাইক্রোবাসযোগে যাচ্ছিলেন পূবালী ব্যাংকের কর্মকর্তা (ক্যাশ) জি এম আতাহার হোসেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে গার্ড মোজাম্মেল আলী, আমানত উল্লাহ ও মাইক্রোবাসচালক মজনু মিয়া ছিলেন। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে দক্ষিণ সুরমার হুমায়ূন রশীদ চত্বরে পৌঁছালে ১৫-২০ জন মাইক্রোবাসটির গতি রোধ করে। ওই দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে গাড়িতে থাকা ৮৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকার মধ্যে ২২ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় তারা ১৪টি গুলি ভর্তি একটি আগ্নেয়াস্ত্রও ছিনিয়ে নেয়।

এ ঘটনায় জি এম আতাহার হোসেন বাদী হয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানায় ১৭ জনকে আসামি করে ডাকাতির মামলা দায়ের করেন। পুলিশ তদন্ত করে ১৭ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। মামলার দীর্ঘ বিচারকার্য শেষে ঘটনার প্রায় দেড় দশক পর রায় হলো।

পূবালী ব্যাংকের আইন কর্মকর্তা মাহবুব আহসান বলেন, মামলা পরিচালনায় ছিলেন রাষ্ট্রপক্ষে মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মফুর আলী। মামলার দীর্ঘ শুনানিতে মোট ২৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। সাক্ষ্য–প্রমাণের ভিত্তিতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছেন আদালত।