১৮ ওয়ার্ডে ১২৫ জন প্রার্থী আ.লীগ ৯৯, বিএনপির ৮

কাউন্সিলর প্রার্থী আকাশ কুমার ভৌমিকের নির্বাচনী প্রচারণা। গতকাল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডের মিরাজনগর এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
কাউন্সিলর প্রার্থী আকাশ কুমার ভৌমিকের নির্বাচনী প্রচারণা। গতকাল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডের মিরাজনগর এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১২৫ জন প্রার্থী। তাঁদের ৯৯ জনই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে দল থেকে তাঁদের কাউকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি।
এই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। তবে দলটির তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মী এই নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অন্তত আটজনের প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাঁরা নিজেদের বিএনপির নেতা-কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতে চাননি। এ ছাড়া দুটি ওয়ার্ডে জাতীয় পার্টির তৃণমূলের দুই নেতা অংশগ্রহণ করছেন। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নন, এমন প্রার্থী (স্বতন্ত্র) আছেন ১৫ জন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন প্রার্থী আছেন। সংরক্ষিত ছয়টি ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর প্রার্থী ২৪ জন। এই ১৮ ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৭৩৫ জন।
গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টায় এই ১৮টি ওয়ার্ডে নির্বাচনী প্রচারণা শেষ হয়েছে। প্রত্যেক প্রার্থীই গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। তবে যে ওয়ার্ডগুলোতে বিএনপির নেতা–কর্মীরা প্রার্থী হয়েছেন, সেগুলোতে নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে বেশি আগ্রহ ও উদ্দীপনা দেখা গেছে। বাকি ওয়ার্ডগুলোতে ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ নেই।
আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটি জানায়, এই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় ওয়ার্ডগুলোতে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি। সবার জন্য নির্বাচনী মাঠ উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। যাঁর জনপ্রিয়তা আছে, তিনি বিজয়ী হবেন।
অন্যদিকে বিএনপির সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। তাই তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। তবে দলের থানা পর্যায়ের কিছু নেতা প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি তাদের জানা আছে। তাঁদের বিষয়ে দলটি কোনো মন্তব্য করেনি।
ডিএসসিসির ৬১ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন কদমতলী থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জুম্মন মিয়া। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২০১১ সাল থেকে তিনি দনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। ইউনিয়নটিতে অনেক উন্নয়নকাজ করেছেন। এলাকার জনগণের অনুরোধে তিনি কাউন্সিলর পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। এখানে প্রার্থী কোন দল করেন, সেটি দেখার বিষয় না। নির্বাচন সুষ্ঠু ভোট হলে তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন বলে প্রত্যাশা করেন।
৬১ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার কামরুজ্জামান ও সালাহ উদ্দিন। গতকাল দনিয়ার একটি চায়ের দোকানে আলাপকালে তাঁরা বলেন, এই ওয়ার্ডে বিএনপির প্রার্থী থাকায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। বিএনপির সমর্থকেরা জুম্মন মিয়ার পক্ষে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে ভোটের দিন কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়ে ভোটারদের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে।
গতকাল বেলা দুইটা। কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে গণসংযোগে বের হন ডিএসসিসির ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী তাজুল ইসলাম। তাঁর নির্বাচনী প্রতীক ঘুড়ি। তিনি গতকাল পূর্ব শ্যামপুর, পালপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার ভোটার কাজে ঘুড়ি প্রতীকে ভোট চান।
বেলা সাড়ে তিনটায় ডিএসসিসির ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডের মিরাজনগরে পথসভা করেছেন কাউন্সিলর প্রার্থী আকাশ কুমার ভৌমিক। তাঁর নির্বাচনী প্রতীক ট্রাক্টর। এই পথসভায় আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটির সভাপতি আবুল হাসনাত অংশগ্রহণ করেন। সবাইকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এখানে দলের প্রার্থী ঘোষণা বা তাঁকে সমর্থন দিতে আসেননি। যাঁর জনপ্রিয়তা আছে, জনগণ তাঁকেই ভোট দেবেন। তিনিই বিজয়ী হবেন।
বিকেল চারটার দিকে পলাশপুর, জনতাবাগ, নুরপুর, পাটেরবাগ, দক্ষিণ দনিয়া, রসুলবাগ, ইসলামবাগ এলাকা পৃথক গণসংযোগ করেছেন ৬০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুস সালাম। তাঁর নির্বাচনী প্রতীক রেডিও। এ ছাড়া ৬১ নম্বর ওয়ার্ডের দনিয়ায় কাউন্সিলর প্রার্থী মহসিন মিয়া (ট্রাক্টর), শাহ আলম শাহী (ব্যাডমিন্টন র‍্যাকেট), ৬২ নম্বর ওয়ার্ডে মোস্তাক আহমেদ (ট্রাক্টর), আক্তার হোসেন (রেডিও), ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডে শফিকুল ইসলাম খান, ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডে সোনিয়া হোসেন (ঝুড়ি) গতকাল গণসংযোগ করেছেন। নিজ নিজ প্রতীকে ভোটার কাছে ভোট চেয়েছেন। এলাকার উন্নয়নে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ডিএসসিসির ৬০ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির প্রার্থী না থাকায় ভোটারদের মধ্যে এই নির্বাচন নিয়ে তেমন একটা আগ্রহ নেই। গতকাল এই ওয়ার্ড এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। জানতে চাইলে এই ওয়ার্ডের ভোটার নাসির উদ্দিন, মো. রতন বলেন, এই নির্বাচন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল বিএনপির কোনো প্রার্থী না থাকায়, নির্বাচনে অনেক ভোটারই ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন না।