অনুমোদনহীন ১৩ দোকানে বিক্রি হচ্ছে রাসায়নিক

বিস্ফোরক পরিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই বগুড়ার রেললাইনের পাশে তিনটিসহ ১৩ দোকানে নানা ধরনের রাসায়নিক পদার্থ বিক্রি হচ্ছে। জেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনেরও কোনো নিবন্ধন নেই এসব দোকানের। কোনো কোনোটিতে নেই অগ্নিনির্বাপণের প্রাথমিক ব্যবস্থাও। এমনকি এসব দোকানের বাইরে আলাদা পাঁচটি গুদামেও অগ্নিনির্বাপণের ক্ষেত্রে প্রাথমিক ব্যবস্থা ও সতর্কতামূলক কোনো ব্যবস্থা নেই।
বছরের পর বছর ধরে এভাবেই তাঁরা ব্যবসা করে আসছেন। রাসায়নিক পদার্থের (দাহ্য পদার্থ) দোকান ও গুদামের জন্য বিস্ফোরক পরিদপ্তরের নিবন্ধন দরকার হয় কি না, তা–ও তাঁরা জানেন না। দাহ্য পদার্থের ব্যবসা করলেও অধিকাংশ দোকানির বিস্ফোরক পরিদপ্তরের সম্পর্কে ধারণা নেই।
জেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন গত রোববার বগুড়ায় রাসায়নিকের দোকানের তালিকা তৈরি করে। এতে ১৩টি দোকানের কথা উল্লেখ রয়েছে। এসব দোকানের পাশাপাশি রাসায়নিকের পাঁচটি গুদাম (গোডাউন) বিষয়টি উঠে আসে তালিকায়। এগুলো হলো শহরের রাজাবাজার এলাকার মান্নান পারফিউমের দোকান ও গোডাউন, সম্পা ভ্যারাইটি স্টোর ও গোডাউন, মান্নান স্টোর, মণ্ডল ভ্যারাইটি স্টোর ও গোডাউন, শেরপুর সড়কের মা ভ্যারাইটি স্টোর ও গোডাউন, কনক/ত্বাসিন ভ্যারাইটি স্টোর, কলোনি এলাকার করতোয়া সড়কের হৃদয় ভ্যারাইটি স্টোর, স্টেশন সড়কের বিআরটিসি মার্কেটের সাম্মী ভ্যারাইটি স্টোর, এই স্টোরের গোডাউন এবং থানা মোড় এলাকার জিয়া সিগন্যাল সুপার মার্কেটের এস এ হার্ডওয়্যার, নামুজা ভ্যারাটি স্টোর ও সমুন হার্ডওয়্যার। শেষের তিনটি দোকানের গোডাউন রয়েছে সান্তাহার সড়কের টিনপট্টি এলাকায়। এ ছাড়া জিয়া সিগন্যাল সুপার মার্কেটের নিউ বগুড়া দোকান ও গোডাউন, ২ নম্বর রেলগেট লোহাপট্টি এলাকার তন্ময় হার্ডওয়্যার। তন্ময় হার্ডওয়্যারের গোডাউন রয়েছে শহরের দত্তবাড়ি এলাকার তন্ময় কমিউনিটি সেন্টারের নিচে।
এই তালিকা প্রস্তুত করেন জেলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মো. বজলুর রশিদ। তিনি এই তালিকা বগুড়া ফায়ারি সার্ভিস কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আবদুর রশিদের কাছে পাঠিয়েছেন। বজলুর রশিদ বলেন, বগুড়া ফায়ার স্টেশনের আওতাধীন বগুড়া শহরে রাসায়নিকের দোকান/গোডাউনের তালিকা প্রস্তুত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হলো।
এস এ, সুমন হার্ডওয়্যার, নিউ বগুড়া ও নামুজা ভ্যারাটি স্টোর বগুড়া সদর থানা থেকে প্রায় ২০০ গজ দূরে। বগুড়া রেলস্টেশনের জমিতে এসব দোকান রয়েছে। রেললাইন থেকে দোকানের দূরত্ব ১০ থেকে ১২ ফুট। দোকানিরা নানা ধরেন হার্ডওয়্যার পণ্য বিক্রি করছেন। সেই সঙ্গে তাঁরা বিক্রি করছেন দাহ্য পদার্থ। সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের রং। দোকানগুলো দাহ্য পদার্থ ও রঙের কৌটায় ভরপুর।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে দোকানেই কথা হয় সুমন হার্ডওয়্যারের মালিক মো. সৌরভ হোসেনের সঙ্গে। দাহ্য পদার্থ দোকানে বিক্রি করার কথা স্বীকার করেন তিনি। সৌরভ বলেন, তাঁর বিস্ফোরক পরিদপ্তরের কোনো অনুমোদন নেই। ফায়ার সার্ভিসের কাছ থেকেও কোনো নিবন্ধন নেননি। অগ্নিনির্বাপণের কোনো ব্যবস্থাও নেই। টিনপট্টিতে গোডাউনেও একই অবস্থা।
দোকানে নানা ধরনের রাসায়নিক পদার্থ বিক্রি করেন নামুজা ভ্যারাটি স্টোরের মালিক ফরিদ উদ্দিন। এই দোকানেরও বিস্ফোরক পরিদপ্তরের নিবন্ধন নেই। ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে দোকানের নিবন্ধন নিয়ে কখনো কথা হয়নি। একই অবস্থা তাঁর টিনপট্টিতে গোডাউনের ক্ষেত্রেও। ফরিদ বলেন, দোকানে রাসায়নিক বিক্রি করতে কোথাকার নিবন্ধন লাগে, এ সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণা নেই। তবে জেলা ফায়ার সার্ভিস কয়েক দিন আগে নিবন্ধন ও অগ্নিনির্বাপণের প্রাথমিক কিছু পরামর্শ দিয়েছে।
জিয়া সিগন্যাল সুপার মার্কেটের এসএ হার্ডওয়্যারের মালিক দুলাল চন্দ্র দাস। তাঁর দোকানেও সব রকমের রাসায়নিক বিক্রি করা হয়। আগুন নেভানোর জন্য প্রাথমিক কোনো ব্যবস্থা নেই। বিস্ফোরক পরিদপ্তরের ও ফায়ার সার্ভিস থেকে কোনো নিবন্ধন নেওয়া হয়নি। তাঁর টিনপট্টির রাসায়নিকের গোডাউনেরও একই অবস্থা।
জিয়া সিগন্যাল সুপার মার্কেটের এস এ হার্ডওয়্যার, নামুজা ভ্যারাটি স্টোর, সমুন হার্ডওয়্যারের দোকানের ঠিক বিপরীত দিকে রেললাইনের ওপর তুলার দোকান রয়েছে। ট্রেনের যাত্রীদের ফেলা সিগারেটে অনেকবার এসব তুলায় আগুন লেগেছে বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান।
শহরের সবচেয়ে বড় আড়ত রাজাবাজার। এখানে সম্পা ভ্যারাইটি নামে রাসায়নিকের দোকান রয়েছে। দোকানের মালিক সত্য দত্ত। দোকানের প্রস্থ ৫ ফুট হবে। কিন্তু এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫ ফুট। রাসায়নিক দ্রব্যসহ বিভিন্ন মালামালে ভরপুর দোকান। বিস্ফোরক পরিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের কোনো নিবন্ধন নেই।
জেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন সহকারী পরিচালক আবদুর রশিদ বলেন, প্রথমপর্যায়ে তাঁরা বগুড়ার ১০৯টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন মালিককে পরামর্শ দিচ্ছেন। সতর্ক করছেন। এরপর তাঁরা রাসায়নিকের দোকান ও গোডাউনে কাজ করবেন। তাঁর জানামতে, বগুড়ার অধিকাংশ রাসায়নিকের দোকানের পরিপূর্ণ নিবন্ধন নেই।
জানতে চাইলে রাজশাহী বিস্ফোরক পরিদপ্তরের পরিদর্শক মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘বগুড়ার নিবন্ধন ছাড়া এমন রাসায়নিকের দোকান সম্পর্কে আমার জানা নেই। এ বিষয়ে শিগগির খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’