লড়াইয়ে বিএনপির দুই নেতা

খলিলুর রহমান সরকার, গোলাম হোসেন, আবদুল হাকিম খান ও জহুরুল ইসলাম
খলিলুর রহমান সরকার, গোলাম হোসেন, আবদুল হাকিম খান ও জহুরুল ইসলাম

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পাবনার নয়টি উপজেলার মধ্যে দুটিতে এরই মধ্যে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দুজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। বাকি সাত উপজেলার মধ্যে ছয়টিতে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দলের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীরা স্বতন্ত্র অবস্থান নিয়েছেন। শুধু ব্যতিক্রম ফরিদপুর উপজেলা। এখানে আওয়ামী লীগের বিপরীতে এখনো বিএনপির দুজন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের মাঠে আছেন। ফলে উপজেলাটিতে ভোটের জমাটি লড়াই হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
উপজেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খলিলুর রহমান সরকার। এ দলের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে আরও আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য গোলাম হোসেন। অন্যদিকে বিএনপি থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি জহুরুল ইসলাম ও পৌর বিএনপির সভাপতি আবদুল হাকিম খান। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর থেকে এই চার প্রার্থীই প্রচার–প্রচারণা ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। গ্রামে গ্রামে ঘুরে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দেখা করে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ফলে জেলার অন্য উপজেলাগুলোতে নির্বাচনের আমেজ না থাকলেও ফরিদপুরজুড়ে নির্বাচনী হাওয়া বইছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগ দলের বর্ধিত সভা করে নেতা–কর্মীদের মাঠে সক্রিয় থাকার আহ্বান জানিয়েছে। সেই সঙ্গে দলের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগকে লিখিতভাবে অবহিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থীরাও দলের নেতা-কর্মীদের একত্র করে প্রচারণার মাঠ গরম রাখার চেষ্টা করছেন।
উপজেলার বনওয়ারীনগর বাজারের ব্যবসায়ী আরিফ হোসেন জানান, দেশের কোথাও বিএনপির প্রার্থী না থাকলেও ফরিদপুরে বেশ কিছুদিন ধরেই বিএনপির দুই প্রার্থী প্রচার–প্রচারণা চালাচ্ছেন। তফসিল ঘোষণার পর থেকে দুজনই আরও জোরেসোরে প্রচারণায় নেমেছেন। ফলে উপজেলা সদরে বাজারসহ প্রতিটি স্থানেই এখন আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অপর এক ব্যবসায়ী আসলাম উদ্দিন বলেন, উপজেলাটিতে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই দলই সক্রিয়। দুই দলেরই ভোট আছে। ফলে কেউ কাউকে সহজে ছাড় দিতে চায় না। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত যদি বিএনপির প্রার্থীরা মাঠে থাকেন, তবে নির্বাচন জমে উঠবে।
ফরিদপুর পৌর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মেহেদী হাসান বলেন, ‘বড় দুই দল থেকে প্রার্থী থাকার বিষয়টি উপজেলাবাসী ইতিবাচকভাবেই দেখছেন। বাকিটা ভোটের দিন বোঝা যাবে।’
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান সরকার বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনীত করেছেন। এলাকার প্রতিটি মানুষ আমাকে চেয়ারম্যান হিসেবে চাইছেন। দলীয় নেতা-কর্মীরা আমার সঙ্গে আছেন। এখানে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী কে, সেটা মুখ্য বিষয় নয়। আশা করছি, মানুষ বিপুল ভোটে আমাকে নির্বাচিত করবেন।’
উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘জনগণ চায়, তাই নির্বাচনে এসেছি। নির্বাচন করব। আর কিছু বলার নেই।’
এ প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি না। বিএনপি দলীয়ভাবে কোথাও কোনো প্রার্থীও দেয়নি। এরপরও দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কেউ প্রার্থী হলে অবশ্যই তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, দ্বিতীয় ধাপে আগামী ১৮ মার্চ পাবনার নয়টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে মনোনয়নপত্র যাচাই–বাছাই শেষ হয়েছে। আজ বুধবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন।