দুদকের নামে ভুয়া চিঠি

বরিশাল নগরের কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নামে ভুয়া চিঠি পাঠানো হয়েছে। ডাকযোগে পাঠানো এসব চিঠিতে বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত ক্লাসের নামে কোচিং–বাণিজ্য, ভর্তিতে অতিরিক্ত ফি আদায় ও বিভিন্ন অজুহাতে অর্থ আদায় বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়।

অন্যথায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা ও সরকারি বিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। তবে দুদকের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালকের কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, দুদকের পক্ষ থেকে এ ধরনের চিঠি বরিশাল নগরের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়নি। বিষয়টি কোনো প্রতারক চক্রের কাজ।

সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষকেরা জানান, গত রবি ও সোমবার বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষকেরা এই চিঠি পান। অনেকে বিষয়টি দুদকের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের জানান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোববার সকালে বরিশাল নগরের ফজলুল হক অ্যাভিনিউ এলাকার বেসরকারি উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ডাকযোগে এমন একটি চিঠি পান। একই দিন ও পরের দিন সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বরিশাল জিলা স্কুলসহ আরও বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ে এমন চিঠি পৌঁছায়।

উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ব্রাদার স্যামুয়েল সবুজ বালা গতকাল দুপুরে বলেন, বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর বিষয়টি দুদকের বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালককে জানিয়ে তাঁর হাতে চিঠি তুলে দেন। পরে বিভাগীয় পরিচালক তাঁদের বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানাতে পরামর্শ দিয়েছেন।

স্যামুয়েল সবুজ বলেন, অনেক বিদ্যালয়েই একই চিঠি দেওয়া হয়েছে। হয়তো অনেকে কী করবেন অথবা কেউ যোগাযোগ করবেন এমনটা ভেবে বিষয়টি প্রকাশ করছেন না। কিন্তু তাঁর মনে হয় দুদকের নামে বাইরের কোনো চক্র অর্থ হাতিয়ে নিতে এ ধরনের প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে।

বরিশাল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবা হোসেন গতকাল দুপুরে বলেন, তিনিও সোমবার এমন একটি চিঠি পেয়েছেন। চিঠিতে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে সেসব কোনো সমস্যা তাঁদের বিদ্যালয়ে নেই। পরে বিষয়টি নিয়ে তাঁরা দুদকের সঙ্গে কথা বলেছেন।

দুদকের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালকের কার্যালয়ের নামে পাঠানো ওই চিঠির ওপরে ‘একান্ত গোপনীয়’ উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন করে বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত ক্লাসের নামে কোচিং করানো হচ্ছে। এ ছাড়া পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তি ফি বাবদ তিন হাজার টাকা এবং নানা অজুহাতে বিভিন্ন সময়ে অতিরিক্ত আরও দুই হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে। বিদ্যালয়ের সুনাম রক্ষার্থে অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে প্রদত্ত সব আদেশ কার্যকরের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয় চিঠিতে। অন্যথায় পরবর্তী সপ্তাহে দুদকের আইনজীবীর মাধ্যমে মামলা করতে বাধ্য হবেন। আদেশ অমান্য করলে সরকারি বিধি অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি পাঠানো এই চিঠির নিচে আদেশক্রমে দুদকের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক (অনুসন্ধান ও তদন্ত) উল্লেখ করে সই করা হয়েছে।

 এ প্রসঙ্গে দুদকের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. জুলফিকার আলী গতকাল বুধবার বলেন, দুদক বরিশাল কার্যালয় থেকে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের চিঠি পাঠানো হয়নি। চিঠির নিচে বিভাগীয় পরিচালকের পক্ষে-পরিচালক (অনুসন্ধান ও তদন্ত) উল্লেখ করা হয়েছে। আসলে এমন কোনো পদ এখানে নেই। কোনো চক্র প্রতারণা করার জন্য এমনটা করেছে। সংশ্লিষ্টদের লিখিতভাবে বিষয়টি জানাতে বলেছেন। এরপর অনুসন্ধান করা হবে।