অরক্ষিত ৫ বিমানবন্দরে এখন কড়াকড়ি
দেশের অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তাব্যবস্থা একেবারেই ঢিলেঢালা। উড়োজাহাজ ওঠানামার সময় কিছুটা নিরাপত্তা থাকলেও অন্য সময় বন্দরগুলো হয়ে পড়ে অরক্ষিত। তখন চাইলে যে কেউ বিনা বাধায় ভেতরে ঢুকতে পারে। পাঁচটি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরের এমন চিত্র দেখেছেন প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা।
অবশ্য গত রোববার রাতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ ‘ছিনতাইচেষ্টা’র পর অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সব বিমানবন্দরে পাহারা স্বাভাবিকের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে।
বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী গত সোমবার সাংবাদিকদের জানান, নিরাপত্তার কোনো ফাঁক রাখা হচ্ছে না। সবাইকে সতর্কভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার দিক থেকে সবচেয়ে অরক্ষিত বিমানবন্দর হলো বরিশাল। চারপাশের সীমানাপ্রচীর থাকলেও কয়েকটি স্থান ভেঙে গেছে। প্রাচীরের নিচে মাটি না থাকায় ফাঁকা স্থান দিয়ে হুটহাট লোকজন ঢুকে পড়ছে রানওয়েতে। আবার উত্তর পাশের বেশ কিছু জায়গায় সীমানাপ্রাচীরই নেই।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, এই বিমানবন্দরে দুর্ঘটনা মোকাবিলায় দুটি ‘রেসকিউ অ্যান্ড ফায়ার ফাইটিং’ (আরএফএফ) যান থাকলেও প্রয়োজনীয় লোকবল নেই। আটজনের স্থলে লোকবল আছেন পাঁচজন। আবার কন্ট্রোল টাওয়ারে চারজন লোকবলের স্থলে আছেন একজন। এই বন্দরে সপ্তাহে ১৪টি অভ্যন্তরীণ উড়োজাহাজ চলাচল করছে।
জানতে চাইলে বরিশাল বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক রথীন্দ্রনাথ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, রহমতপুর থেকে বাবুগঞ্জ যাওয়ার সড়কে নিরাপত্তাপ্রাচীর খুবই অরক্ষিত। নিচ দিয়ে লোকজন ঢুকে পড়ে। এটা উঁচু করা এবং নিচে মাটি ফেলে ভরাট করা প্রয়োজন।
সৈয়দপুর বিমানবন্দরের নিরাপত্তা গত সোমবার থেকে জোরদার করা হলেও এর আগে গত ২৭ আগস্ট দেশীয় অস্ত্রসহ চার দুর্বৃত্তকে পুলিশ হাতেনাতে আটক করে। এই বন্দরের নিয়মিত যাত্রী ব্যবসায়ী সিদ্দিকুল আলম জানান, সৈয়দপুর বিমানবন্দর খুবই অরক্ষিত মনে হয়। এর নিরাপত্তা জোরদার করা উচিত।
বর্তমানে সৈয়দপুরে দিনে ৯টি উড়োজাহাজ যাতায়াত করে। এপ্রিল থেকে ১৬টি উড়োজাহাজ ওঠানামা করবে। সেই সঙ্গে সৈয়দপুর থেকে সরাসরি কক্সবাজার রুটেও উড়োজাহাজ চলাচল শুরু হবে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বিমানবন্দরের উন্নয়নকাজ হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকেরা অবাধে যাতায়াত করেন বিমানবন্দরের ভেতরে। শ্রমিকের বেশে যেকোনো দুর্বৃত্তও ঢুকে পড়তে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা।
সৈয়দপুর বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক শাহীন আহম্মেদ এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়ার আগে দেহ তল্লাশি করা হয়। একজন কর্মকর্তা সার্বক্ষণিক তদারকিও করেন।
অভ্যন্তরীণ রুটে আরেকটি ব্যস্ত বিমানবন্দর যশোর। গত সোমবার দুপুরে বিমানবন্দরটি ছিল প্রায় জনশূন্য। নিরাপত্তাকর্মীদের কাউকে দেখা যায়নি। ভেতরে ঢুকে পড়লেও কেউ বাধা দেননি।
বন্দরের এক কর্মচারী স্বীকার করেন, দুপুরের দিকে উড়োজাহাজের ওঠানামা থাকে না। তখন বিমানবন্দর পুরোপুরি অরক্ষিত হয়ে পড়ে। ঢাকা থেকে যশোরে প্রতিদিন ৯টি ফ্লাইটে প্রায় দেড় হাজার যাত্রী চলাচল করেন। নিরাপত্তাব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে যশোর বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক আলমগীর পাঠান প্রথম আলোকে বলেন, নিরাপত্তাকর্মীদের দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পেলে জরিমানাসহ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজশাহী বিমানবন্দর এত দিন অরক্ষিত থাকলেও চট্টগ্রামের ঘটনার পর সেখানকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক সেতাফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, রোববার থেকে সিভিল এভিয়েশন বিশেষ সতর্কতার নির্দেশ দিয়েছে। সে কারণে নিরাপত্তাকর্মীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। যাত্রীদেরও বেশি করে তল্লাশি করা হচ্ছে।
তবে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরের চারপাশে দেয়াল তুলে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এখন কেউ চাইলেও বিমানবন্দরে ঢুকতে পারে না।
জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইসফাত ইলাহী চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, অভ্যন্তরীণ যাত্রীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এখন এসব বন্দরের নিরাপত্তার দিকে জোর দেওয়া খুব জরুরি। তিনি বলেন, ‘আমাদের লোকবলের অভাব নেই, কিন্তু নেই দরকারি যন্ত্রপাতি। আর প্রয়োজন কর্মীদের দরকারি প্রশিক্ষণ।
{প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল, সিলেট, রাজশাহী এবং প্রতিনিধি সৈয়দপুর ও যশোর}