দেয়ালচিত্রে ডাকসুর ভিন্ন রূপ

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে জগন্নাথ হল প্রভোস্ট বাংলোর দেয়ালে আঁকা গ্রাফিতি (দেয়ালচিত্র)। গত শুক্রবারের ছবি।  প্রথম আলো
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে জগন্নাথ হল প্রভোস্ট বাংলোর দেয়ালে আঁকা গ্রাফিতি (দেয়ালচিত্র)। গত শুক্রবারের ছবি। প্রথম আলো

দেয়ালে কালো কালিতে আঁকা হয়েছে রুবিকস কিউব। একেকটি কিউব থেকে বেরিয়ে এসেছে ধারালো অস্ত্রের ফলা। এর মধ্যে কয়েকটি কিউবে বিচ্ছিন্নভাবে লেখা কিছু ইংরেজি বর্ণ—ইউ, ডি, এস, সি, ইউ। এই বর্ণগুলো সাজালে হবে ‘ডাকসু’। কিন্তু মধ্যে প্রতিবন্ধক হিসেবে আঁকা হয়েছে ধারালো অস্ত্রের ফলা। এই চিত্রের পাশে ইংরেজিতে লেখা—‘ইউ হ্যাভ টু ব্লিড টু সলভ ইট’।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হলের মূল ফটকের বিপরীত পাশে জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট বাংলোর দেয়ালে আঁকা হয়েছে এই দেয়ালচিত্রটি। আঁকিয়েদের পরিচয় হিসেবে লেখা আছে ‘এফ/আইএসসিআরইএম’।

কালো কালিতে আঁকা চিত্রটির দেখা মিলেছে গত শুক্রবার। এর ব্যাখ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা বলছেন, ডাকসুর প্রতিনিধিরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ে কথা বলবেন। তাঁদের কোনো ন্যায্য দাবিকে সমর্থন দেবেন। নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা এমন যোগ্য প্রার্থীকেই বাছাই করবেন। কিন্তু ডাকসু নির্বাচন হলেও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক সংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কারণে সেটি সম্ভব হবে না। এই প্রতিবন্ধকতা দেয়ালচিত্রে রূপকের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে দেয়ালচিত্র আঁকার চল রয়েছে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার এই দেয়ালচিত্র এখন প্রাসঙ্গিক। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে এটি নিয়ে আলোচনাও চলছে। কারণ, এরই মধ্যে ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, স্বতন্ত্র এবং অন্য প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে চাপ দিচ্ছে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন। অন্যদিকে হলগুলোতে ভোটকেন্দ্র দিয়ে এই ভীতিকর পরিবেশের সহায়তা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এমন পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হচ্ছে।

গতকাল শনিবার দেয়ালচিত্রটি নিয়ে কথা হয় ডাকসু নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীদের সঙ্গে। দেয়ালচিত্রটি সম্পর্কে তাঁরা বলছেন, নির্বাচন হলেই ডাকসুর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় হয়ে যাবে, বিষয়টা ঠিক সে রকম নয়।

স্বতন্ত্র জোট প্যানেলে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে নির্বাচন করছেন খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী তালীম হাসান। তিনি বলছেন, ডাকসুর বড় প্রতিবন্ধকতা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ক্ষমতাসীন সরকারের প্রভাব টিকিয়ে রাখার প্রবণতা। যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করেন, তা সবারই জানা। শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের ভাষা রুদ্ধ করতে কাজ করে ক্ষমতাসীনদের ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্রসংগঠন। ডাকসুতে যারাই প্রতিনিধিত্ব করুক, তাদের এই চ্যালেঞ্জটা মোকাবিলা করতে হবে। এই প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে না পারলে ডাকসু সক্রিয় থেকেও কার্যত নিষ্ক্রিয় থাকবে।

ছাত্র ফেডারেশন-সমর্থিত প্যানেলে ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের উম্মে হাবিবা বেনজির। তাঁর ব্যাখ্যা, নির্বাচন উপলক্ষে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের সহাবস্থানের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু একসঙ্গে শুধু মধুর ক্যানটিনে বসে চা খাওয়াটাই সহাবস্থান নয়। প্রতিটি সংগঠনের প্রার্থীদের নিজের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দিতে হবে। কিন্তু হলগুলোতে ভিন্ন সংগঠনের প্রার্থীরা সেটি করতে গেলেই নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এই প্রতিবন্ধকতাই ওই দেয়ালচিত্রে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রুবিকস কিউবের মতো করে ডাকসুর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য মেলানো সম্ভব কি না, সেটিই প্রশ্ন।