নিজের পায়ে দাঁড়াতে গণতান্ত্রিক স্পেস দরকার: মেনন

রাশেদ খান মেনন
রাশেদ খান মেনন

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, রাজনৈতিক দলের নিজের পায়ে দাঁড়াতে গণতান্ত্রিক স্পেস দরকার। আজ রোববার মেনন রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে এ কথা বলেছেন।

সাবেক মন্ত্রী মেনন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ১৪ দলের শরিকদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে বলেছেন। কিন্তু যদি গণতান্ত্রিক স্পেস না থাকে তাহলে কেউ সংগঠন নিয়ে, আন্দোলন নিয়ে, ভোট নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে না। সেই স্পেস তৈরি করতে হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দল অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন ও জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের আন্দোলন করে সফলতা অর্জন করেছিল, তা যেন হারিয়ে না যায়। এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। যদি রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন অংশ দেশের ওপর নিয়ন্ত্রণারোপ করে, তাহলে রাজনৈতিক দল কেবল নির্বাচন নয়, রাষ্ট্র পরিচালনায়ও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে। এটা যেমন আমাদের জন্য প্রযোজ্য, তেমনি সরকারি দলের জন্যও। তাই নির্বাচনকে যথাযথ মর্যাদায় ফিরিয়ে আনতে হবে।’

রাজধানীর চকবাজারের অগ্নিকাণ্ড প্রসঙ্গে মেনন বলেন, ‘চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ড নিয়ে আমরা পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছি। বিষয়টি নিয়ে আমরা একে অন্যের প্রতি দোষারোপ করার খেলায় মেতেছি। এর অবসান হওয়া দরকার। এ ধরনের আগুনের পুনরাবৃত্তি বন্ধ হওয়া দরকার।’

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জোটের শরিক দলের এই নেতা বলেন, ‘দেশের উন্নতি হচ্ছে। তবে এই উন্নয়নের সুফল জনগণ পাচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য গবেষণার দরকার নেই। খালি চোখেই আমরা দেখছি। দেখতে পাচ্ছি উন্নয়নের ফলাফলের অসম বণ্টন হচ্ছে। বাংলাদেশে অতিধনীর সংখ্যা চীন থেকেও বেশি বেড়েছে। প্রবৃদ্ধি বাড়ছে, কিন্তু এর সঙ্গে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। প্রতিবছর আট লাখ মানুষ বেকারের খাতায় নাম লেখাচ্ছে। এই পরিস্থিতি সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় ধরনের হুমকির বিষয়।’

আর্থিক খাতের সমস্যার কথা তুলে ধরে রাশেদ খান মেনন বলেন, দেশের অর্থনীতির ওপর লুটেরাদের আধিপত্য আরও দৃঢ়ভাবে চেপে বসেছে। এর পরিণতি হচ্ছে বিনিয়োগ না করে অর্থ বিদেশে পাচার করা, ঋণখেলাপি বাড়া, ব্যাংকিং খাতে নৈরাজ্য বাড়া, শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারি ইত্যাদি। এসব সমস্যা মোকাবিলায় বিভিন্ন আইন হলেও তা কার্যকর হয়নি। বরং দেখা গেছে, ব্যাংক খাতে পারিবারিক মালিকানাকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। প্রয়োজন ছাড়াই ব্যাংক খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। একই ব্যক্তি এখন ৬/৭ ব্যাংকের মূল শেয়ারহোল্ডার। প্রকৃত উদ্যোক্তাদের পরিবর্তে এই মালিকেরা নামে-বেনামে ব্যাংক থেকে অর্থ নিয়ে যান।

মেনন বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন এখন প্রাইমারি স্কুলের টিচারের দুর্নীতিকে আমলে নেয়। কিন্তু বেসিক ব্যাংকের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয় না। বেসিক ব্যাংকের সেই সাবেক চেয়ারম্যান দুদকের ধরাছোঁয়ার বাইরে।

সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী মেনন বলেন, ‘আমাদের পাঠ্যক্রমগুলোকে ধর্মীয়করণের প্রচেষ্টা চলছে। তেঁতুল হুজুরের আবদারে এটা করা হয়েছে। কুসুমকুমারী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্র লাল রায়ের কবিতা বাদ দেওয়া হয়েছে। হয়তো পাকিস্তান আমলের মতো “সজীব করিব মহাশ্মশান” স্থলে “সজীব করিব গোরস্থান” আবৃত্তি করতে হবে। তেঁতুল হুজুরের দল প্রধানমন্ত্রীকে কওমি জননী উপাধি দিয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে সতর্ক না হলে বুঝতে হবে আমরা কোন বিষবৃক্ষ রোপণ করতে যাচ্ছি।’

উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে মেনন বলেন, স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ থাকে। কিন্তু স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং দলীয় নেতারা যখন ভোটারদের বলেন “ভোট তো দেখেছো, ভোট দিতে যেতে হবে না।” তখন সেই ভোট সম্পর্কে কী মনোভাব সৃষ্টি হয়? একটি সামগ্রিক অনাস্থার জন্ম হয়। নির্বাচনে প্রার্থী হতে বাধাদান, মনোনয়নপত্র ছিঁড়ে ফেলা, ঊর্ধ্ব মহলের ক্লিয়ারেন্স আছে কি না, সেই বিষয়ে প্রার্থীদের পুলিশের প্রশ্ন করা এবং টাকা ছড়ানোর উদ্বেগজনক খবর আসছে। প্রধানমন্ত্রী সংসদ সদস্যদের নির্বাচনী এলাকায় যেতে নিষেধ করেছেন। বলেছেন কমিশনের আইন মেনে চলতে। কিন্তু সরকার ও দলের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে নিশ্চয়তা বিধান করা হচ্ছে না। এই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দূর করতে উপজেলা নির্বাচন অবশ্যই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে হবে। নির্বাচনকে প্রশাসনের সব হস্তক্ষেপমুক্ত করতে হবে। সরকার ও নির্বাচন কমিশন উভয়কেই এই নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে।’