মাঠ ঘিরে বদলেছে চারপাশ

উদ্বোধনের অপেক্ষায় শহীদ আব্দুল আলীম খেলার মাঠ। রোববার লালবাগে।  ছবি: প্রথম আলো
উদ্বোধনের অপেক্ষায় শহীদ আব্দুল আলীম খেলার মাঠ। রোববার লালবাগে। ছবি: প্রথম আলো

ঢাকেশ্বরী সড়কের ফুটপাত ছিল বর্জ্যে ঠাসা। ছিল অস্থায়ী দোকানপাট। ভাঙা সড়কের বেশির ভাগ জায়গা ট্রাক ও ভ্যানের দখলে। পাশের শহীদ আব্দুল আলীম খেলার মাঠটি ছিল প্রায় পরিত্যক্ত। ভবঘুরেদের আড্ডা জমত।

মাঠটির উন্নয়নের কাজ শুরুর পর থেকে বদলে গেছে আশপাশের চিত্র। সড়কটির সংস্কার হয়েছে। ফুটপাতের বর্জ্য সরেছে। দোকান ও ট্রাক-ভ্যান উচ্ছেদ করা হয়েছে। মাঠটির সংস্কারকাজ প্রায় শেষ। শিগগিরই এর উদ্বোধন করে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। আর স্থানীয়রা বলছেন, আগে মাঠে খেলা তো দূরের কথা, মাঠের পাশ দিয়ে হাঁটার পরিস্থিতি ছিল না। মাঠ সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকে আশপাশের পরিবেশেরও উন্নত হয়েছে।

শহীদ আব্দুল আলীম খেলার মাঠের সংস্কারকাজ করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অঞ্চল-৩ (আজিমপুর)। এই অঞ্চল বিভিন্ন আয়তনের আরও ১১টি খেলার মাঠ ও পার্কের সংস্কার হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে জগন্নাথ সাহা রোড পার্ক, হাজারীবাগ পার্ক, নবাবগঞ্জ পার্ক, বশিরুদ্দিন পার্ক, গজমহল পার্ক, বকশীবাজার পার্ক, আজিমপুর পার্ক, দেলোয়ার হোসেন খেলার মাঠ, বালুর হাট খেলার মাঠ, শহীদ নগর মিনি স্টেডিয়াম। ডিএসসিসির অঞ্চল-৩–এর কর্মকর্তারা বলছেন, এসব কাজ চলমান। চলতি বছরের মধ্যেই সব পার্কের সংস্কারকাজ শেষ হবে।

ডিএসসিসি সূত্র জানায়, প্রায় ৭৫ কাঠার ওপর অবস্থিত শহীদ আব্দুল আলীম খেলার মাঠটির সংস্কারকাজ ২০১৭ সালের শেষের দিকে শুরু হয়। শেষ হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। এখন আনুষঙ্গিক কিছু কাজ বাকি। মাঠটির সংস্কারে ব্যয় হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা। এর নকশা করেছেন স্থপতি রফিক আজম।

সম্প্রতি দেখা গেছে, খেলার মাঠের মূল কাজ শেষ। চারপাশে সীমানা দেওয়া হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে হাঁটার পথ। এর নিচে আছে পানিনিষ্কাশনের সংযোগ। চারপাশের ফুটপাতের কিছু কিছু অংশে লাগানো হয়েছে নানা জাতের গাছ। মূল মাঠে দৃষ্টিনন্দন সবুজ ঘাস। মাঠের উত্তর-পূর্ব দিকে করা হয়েছে একটি দোতলা ভবন। এর নিচতলায় করা হয়েছে ব্যায়ামাগার ও শৌচাগার। দোতলায় একটি কপি শপ করা হবে। মাঠের উত্তর পাশে ক্রিকেট অনুশীলন করার জন্য ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পূর্ব দিকে রাখা হয়েছে শিশু কর্নার। সেখানে শিশুদের বিনোদনের ব্যবস্থা থাকবে। মাঠের চারপাশে লাগানো হয়েছে এলইডি বাতি। মাঠের চারপাশের অংশে বিভিন্ন বয়সী মানুষজন হাঁটাচলা করছেন। অনেকে বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন।

স্থানীয়দের অনুরোধে এই মাঠে ঈদের নামাজ পড়ার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া মাঠটির উত্তর-পূর্ব দিকে নির্মিত ভবনের ওপর বড় আকারের একটি মনিটর বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

৪০ বছর ধরে ওই এলাকায় বাস করেন ষাটোর্ধ্ব আবদুস সাত্তার। গত রোববার বিকেলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটা পরিত্যক্ত মাঠকে উন্নত করে এতটা দৃষ্টিনন্দন করা সম্ভব, এই মাঠ না দেখলে তা বিশ্বাসই করতাম না।’ তাঁর মতে, সংস্কারে এতটাই বৈচিত্র্য এসেছে যে গোটা এলাকার চিত্রই বদলে গেছে।

মূল মাঠের সংস্কার শেষে এর চারপাশে সৌন্দর্যবর্ধনে যেসব কাজ করা হয়েছে, এতেও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তাঁরা বলেছেন, এটা যাতে যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়, সেই ব্যবস্থাও নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, মাঠটি সার্বক্ষণিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। মাঠ ব্যবহারে যেন কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়, তাই স্থানীয়দের সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দেওয়া হবে।

ডিএসসিসির পক্ষ থেকে এই মাঠটির তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন অঞ্চল-৩–এর উপসহকারী প্রকৌশলী বাহাউদ্দিন আহম্মেদ খান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সব শ্রেণি–পেশার মানুষের ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনা করে মাঠটির সংস্কারকাজ করা হয়েছে। এতে বয়স্ক লোকজন মাঠের চারপাশে হাঁটাচলা করতে পারবেন। ক্লান্ত হয়ে গেলে বসে বিশ্রাম নেওয়া যাবে। বড়দের জন্য ক্রিকেট ও ফুটবল খেলার সুযোগ রাখার পাশাপাশি শিশুদের বিনোদনের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।