'টিআইবির অবস্থান একচোখা হবে আশা করি না'

জেনেভা-ভিত্তিক নীতি ও কৌশল বিশেষজ্ঞ ম্যাথিয়াস বসের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে মতবিনিময় করে। ছবি: দুদকের সৌজন্যে
জেনেভা-ভিত্তিক নীতি ও কৌশল বিশেষজ্ঞ ম্যাথিয়াস বসের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে মতবিনিময় করে। ছবি: দুদকের সৌজন্যে

জনগণের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ইতিবাচক ভাবমূর্তি থাকলেও এর কিছু সমালোচনাও শোনা যায় বলে মনে করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ডিএফআইডি, সুইডেন ও ডেনমার্কের দূতাবাসের সহায়তায় জেনেভা-ভিত্তিক নীতি ও কৌশল বিশেষজ্ঞ ম্যাথিয়াস বসের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে মতবিনিময় করে।

টিআইবির চলমান কার্যক্রমের মূল্যায়ন ও ভবিষ্যৎ কর্মকৌশল নিরূপণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এ মতবিনিময় হয় বলে দুদকের জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে। ম্যাথিয়াস বস দুদক চেয়ারম্যানের কাছে টিআইবির কার্যক্রম, তাদের সম্পর্কে এ দেশের জনগণের ধারণা, দুদকের সঙ্গে সম্পর্কসহ সার্বিকভাবে টিআইবি সম্পর্কে দুদক চেয়ারম্যানের মতামত, সমালোচনা ও পরামর্শ জানতে চান।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, টিআইবি দেশের শাসনপ্রক্রিয়া তথা সরকার বা সরকারি সংস্থার যেকোনো ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতিতেই উচ্চকণ্ঠ থাকে। তবে শুধু সমস্যা বা ত্রুটি তুলে ধরাই টিআইবির কাজ হতে পারে না। বরং এসব সমস্যা সমাধানের পথ বাতলে দেওয়ার সুযোগ তাদের রয়েছে। সমস্যা শনাক্ত করার পাশাপাশি এর কারণ এবং তা থেকে উত্তরণের উপায় বের করা এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব হওয়া উচিত।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, সরকারি-বেসরকারি এমনকি বৈদেশিক অর্থে পরিচালিত প্রতিটি সংস্থারই অর্থের মালিক জনগণ। তাই টিআইবিসহ প্রতিটি সংস্থার বাজেট, আয়-ব্যয়ের হিসাব স্বচ্ছ থাকা উচিত। তাদের আয়-ব্যয়, কর্মপরিকল্পনা, নিরীক্ষা কার্যক্রম শুধু ওয়েবসাইটে না রেখে গণমাধ্যমসহ অন্যান্য মাধ্যমেও মানুষকে অবহিত করা উচিত।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশনের সঙ্গে টিআইবির আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক আছে। তবে অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক নিয়ে কিছু বলতে চাই না, কারণ এটা বেশ ফলপ্রসূ। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সঙ্গে কমিশনের দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং উত্তম চর্চার বিকাশে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়েছে। এই সমঝোতা স্মারকের আলোকেই টিআইবির সঙ্গে যৌথভাবে গণশুনানিসহ বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে দুদক।

দুদকের কার্যক্রম নিয়ে টিআইবির সমালোচনাকে সব সময় সাধুবাদ জানায় দুদক—মন্তব্য করে ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুদক বা অন্য কোনো সংস্থার সমালোচনা করতে হলে দেশের সমসাময়িক বাস্তবতা, পরিস্থিতি এবং সংস্কৃতিকে অনুধাবন করতে হবে। সমালোচনার সঙ্গে সঙ্গে পরিত্রাণের উপায়ও বলতে হবে। সরকার বা সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল কোনো ভালো কাজ করলে তার প্রশংসাও করা উচিত। তাদের একচোখা হলে চলবে না, দুচোখা হতে হবে।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, টিআইবি যাদের অর্থায়নে পরিচালিত হয় তাদের অবশ্যই প্রত্যাশা থাকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সুশাসনের উন্নয়নে টিআইবি ভূমিকা রাখবে। টিআইবি সরকার এবং রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোকে আনুষ্ঠানিক কিংবা অনানুষ্ঠানিক পরামর্শ দিতে পারে।

টিআইবির গবেষণা প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, টিআইবির গবেষণার পদ্ধতি স্বচ্ছ হতে হবে। তারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মাধ্যমিক ডেটা ব্যবহার করে অথবা ফোকাস গ্রুপ আলোচনার মাধ্যমে ডেটা সংগ্রহ করে। তাদের উচিত প্রাথমিক ডেটা ব্যবহার করা। তাহলে তাদের গবেষণার ফলাফল ও বিশ্লেষণে ত্রুটি কম থাকবে এবং তাদের প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়বে।

দুদকের শীর্ষ ব্যক্তি মনে করেন, টিআইবির একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিধি থাকা উচিত। সব বিষয়ে টিআইবির কথা বলা কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের ভাবমূর্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকা উচিত। তারা দুর্নীতি, মেগা প্রজেক্ট এবং সরকার নিয়ে উচ্চকিত হলেও মানসম্মত শিক্ষা, জনপ্রশাসনের নিয়োগ-বদলি, পদোন্নতিসহ সুশাসনের অন্য যেসব সূচক রয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে তাদের কার্যক্রমকে অনেকেই ততটা জোরালো বলে মনে করেন না।

সিপিডি, বেলাসহ অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে টিআইবির যৌথ সম্পর্কের বিষয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত উদ্যোগ অবশ্যই ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।