আওয়ামী লীগে পাঁচ 'বিদ্রোহী'

কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে আওয়ামী লীগ নেতারা মরিয়া। কারণ এই উপজেলায় এবার ভোট গ্রহণ হচ্ছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে। প্রার্থী ও ভোটারদের ভাষ্য, ইভিএম পদ্ধতিতে কারচুপি ও প্রভাব বিস্তারের সুযোগ থাকবে না। ফলে প্রার্থিতাও বেড়েছে।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রমতে, গত সোমবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন নয়জন প্রার্থী। এর মধ্যে পাঁচজন আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেও জমা দেননি জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম এবং জামায়াত নেতা ও উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান শহিদুল আলম।

প্রথম তফসিল অনুযায়ী, ২৬ ফেব্রুয়ারি ছিল প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময়। ওই সময় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক কায়সারুল হক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী পরিবহনশ্রমিক নেতা সেলিম আকবর মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। ওই সময় কয়েকজন চেয়ারম্যান প্রার্থী তাঁদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পারায় নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেন। পরে ২৭ ফেব্রুয়ারি আবার নতুন করে তফসিল ঘোষণা করা হয়। নতুন তফসিল অনুযায়ী মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল ৪ মার্চ। ওই সময় চেয়ারম্যান পদে আরও সাতজন মনোনয়নপত্র জমা দেন।
তাঁরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আবছার, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু তালেব, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল করিম, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ, জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সোহেল জাহান চৌধুরী, জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির নেতা আতিকুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র আব্দুল্লাহ আল মোর্শেদ।
এ ছাড়াও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তফসিল অনুযায়ী, ৬ মার্চ বাছাই, ১৩ মার্চ প্রত্যাহার ও ৩১ মার্চ ভোট গ্রহণ।

ইভিএমে আস্থা ভোটারদের
শহরের টেকপাড়ার কলেজছাত্রী সাজেয়া আফরিন বলেন, ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট হলে কারচুপির সুযোগ থাকে না। এতে ভোটারদের আস্থা আছে। প্রার্থীদের অংশগ্রহণও বেড়েছে।
বাহারছড়া এলাকার ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিন বলেন, ইভিএম পদ্ধতি এখানকার ভোটারদের কাছে সম্পূর্ণ নতুন একটি বিষয়। তাই ভোটারদের ইভিএম পদ্ধতি সম্পর্কে কৌতূহল জেগেছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, এ উপজেলায় ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৫৬ হাজার ৬৪৪ জন। ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে ১০৮টি। এতে ভোট গ্রহণ কক্ষ রয়েছে ৬৪৮টি। প্রতিটি কক্ষে ইভিএম ব্যালট ইউনিট থাকবে তিনটি করে। আর কন্ট্রোল ইউনিট থাকবে ৬৪৮টি। এ ছাড়া কোনো ইউনিটে টেকনিক্যাল ত্রুটি দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে রিপ্লেস করার জন্য অতিরিক্ত ১০০টি ব্যালট ইউনিট মজুত রাখা হবে।
নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা শিমুল শর্মা বলেন, জেলার আটটি উপজেলার মধ্যে প্রথমবারের মতো সদর উপজেলায় ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ হচ্ছে। তাই ভোটারদের ইভিএম পদ্ধতি সম্পর্কে জানানোর জন্য ১৬ থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত ‘ভোটার এডুকেশন’ চলবে।

নদলের পাঁচ বিদ্রোহী নিয়ে বিপাকে নৌকা প্রতীকের মনোনীত প্রার্থী কায়সারুল হক। পাঁচজন হলেন কক্সবাজার পৌরসভার চারবারের চেয়ারম্যান নুরুল আবছার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু তালেব, জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সোহেল জাহান চৌধুরী, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল করিম।
জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, নৌকার প্রার্থী বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর অর্থ হচ্ছে শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা। দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে অন্য প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের বিষয়ে চাপ প্রয়োগের চেষ্টা চলছে।
দলের কয়েকজন নেতার ভাষ্য, অন্যান্য নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতে কেন্দ্র থেকে কড়া বার্তা থাকলেও এবার সেই ধরনের নির্দেশনা নেই। বরং দলের কেউ চাইলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন বলে কেন্দ্র থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।