'গণহত্যা আড়ালের পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র'

মুনতাসীর মামুন। ফাইল ছবি
মুনতাসীর মামুন। ফাইল ছবি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বাংলাদেশে পৃথিবীর বৃহত্তম গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। যদি সময়ের মাপকাঠিতে বিচার করা হয়, তাহলে এটি পৃথিবীর বৃহত্তম গণহত্যা। পৃথিবীর বৃহত্তম গণহত্যা অথচ এটি চোখের আড়ালে চলে গেল কীভাবে? এর সঙ্গে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র জড়িত।

‘গণহত্যার রাজনীতি’ শীর্ষক বক্তৃতায় এসব কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক ও বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। আজ শনিবার এশিয়াটিক সোসাইটিতে ড. এ আর মল্লিক ও আর এন মল্লিক ফান্ড উদ্বোধনী বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

মুনতাসীর মামুন বলেন, প্রত্যেক গণহত্যার একটি রাজনীতি আছে। সেটিকে রাজনীতি না বলে অপরাজনীতি বলা যায়। অজুহাত তৈরি করা হয় গণহত্যা অস্বীকারের। ১৮টি জেলায় গণহত্যার সংখ্যা ৪ হাজার ১৯০টি। শুধু চুকনগরে একটি গণহত্যায় ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ শহীদ হয়। বধ্যভূমির সংখ্যা ৫৯৬টি, গণকবর ৪৫১টি ও নির্যাতন কেন্দ্র ২২৫টি। চারটির যোগফল ৫ হাজার ৬৯০। অনেক গণহত্যা বধ্যভূমি বা গণকবর বিস্মৃতির আড়ালে চলে গেছে। কিন্তু ১৮টি জেলায় যদি এই চারটির হিসাব দাঁড়ায় ৫ হাজার ৬৯০টি, তাহলে ৬৪ জেলায় এ সংখ্যা কেমন হতে পারে? এতে গণহত্যার মাত্রা ও তীব্রতা অনুমান করা যায়।

মুনতাসীর মামুন বলেন, ১৯৭৫ সালের পর সামরিক সরকারগুলো মূলত পাকিস্তানের অ্যাজেন্ডা পালন করতে চেয়েছে। গণহত্যার চেয়ে বিজয়ের ওপর তারা জোর দিয়েছে। সরকারি হিসাবে নারী ধর্ষণের হিসাব দুই লাখে নেমে এসেছে কিন্তু আমার গবেষণায় তা পাঁচ লাখের ওপরে। হাইকোর্টের এক রায়েও তা উল্লেখ করা হয়েছে।

ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আলোচনায় গণহত্যার পরই আন্তর্জাতিক মাধ্যমে স্থান নিয়েছিল শরণার্থীরা। শরণার্থীরা সীমান্ত পার হওয়ার সময় গুলি খেয়ে মারা গেছেন, যা গণহত্যার অন্তর্গত। শিবিরগুলোতে মানবেতর পরিবেশে বসবাস করতে গিয়ে মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে অনেকে মারা গেছেন, যে সংখ্যা পাঁচ লাখের মতো হবে। তাঁরাও গণহত্যার হিসাবে আসেননি।

বক্তৃতার শেষ অংশে মুনতাসীর মামুন আরও বলেন, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রাখা দরকার সরকার ও গবেষকদের। এ সম্পর্কিত বইপত্র বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা ও তা ছড়িয়ে দেওয়া, বিদেশি শিক্ষাবিদদের এ বার্তা পৌঁছে দেওয়া যে পৃথিবীর বৃহত্তম গণহত্যা এখানেই হয়েছে। তিনি বলেন, এই সত্য বিকশিত হলে, গণহত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত অপরাধীদের শাস্তি হলে আজ রোহিঙ্গা গণহত্যার মতো ঘটনা ঘটাতে মিয়ানমার সাহস পেত না।