নতুন মাদকের তথ্য চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

>

• হাসিবকে গ্রেপ্তারে সহায়তা চেয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর
• কারখানায় আছে কয়েক লাখ এমডিএমএ, আইস ও ক্রিস্টাল মেথ তৈরির উপকরণ

রাজধানীর জিগাতলা থেকে উদ্ধার করা নতুন মাদক আইস, ক্রিস্টাল মেথ ও এমডিএমএ সম্পর্কে তথ্য চেয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট
এজেন্সি। উদ্ধারের ৯ দিন পর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কাছে ই-মেইল করে তারা এ তথ্য চায় বলে জানা গেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, পুরো বিষয়টি তারা জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক দপ্তর ইউএনওডিসিকে জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে তারা বলছে, কারখানা মালিকের সন্ধান পাওয়া না গেলে মাদকগুলোর বিস্তার কতটা,সে সম্পর্কে পরিষ্কার কোনো ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁকে গ্রেপ্তারে পুলিশ ও র‍্যাবের সহযোগিতা চেয়ে গতকাল চিঠি দিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, কারখানাটির মালিক হাসিব মোহাম্মদ মুয়াম্মার রশিদ। প্রকৌশলী বাবা ও অধ্যাপক মায়ের সন্তান হাসিব মালয়েশিয়ায় প্রকৌশল বিষয়ে পড়তে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে জিগাতলার ছয়তলা বাড়ির নিচতলায় গবেষণাগারের আদলে কারখানা গড়ে তোলেন। কারখানায় ঢুকতে গেলে পাসওয়ার্ড দিয়ে ঢুকতে হতো। অভিযানে অংশ নেওয়া একজন কর্মকর্তা বলেন, একটুর জন্য তাঁরা সেদিন হাসিবকে ধরতে পারেননি।

 গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার দিকে হাসিবের অবস্থান ছিল হাতিরপুলের মোতালিব প্লাজায়। সোর্সসহ সেখানে গিয়েও তাঁকে ধরা যায়নি। ওই রাতেই আড়াইটার দিকে তাঁরা জিগাতলায় হাসিবদের বাসায় অভিযানে যান। হাসিবের বাবা এফ এম রাশিদুজ্জামান ও মা ফেরদৌস আরা জামান তখন বাসায় ছিলেন। হাসিব কোথায়—জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, তিনি আছেন কি না, তাঁরা দেখে আসছেন। তারপর বলেন, হাসিব নেই। অভিযানে অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা বলেন, ওই বাড়িটির ভেতর ঘর থেকে বাইরে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে। তাঁদের আশঙ্কা, হাসিব পালিয়ে গেছেন। এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বাদী হয়ে মামলা করেছে। এতে আসামি করা হয়েছে হাসিব ও কারখানার তত্ত্বাবধায়ক এম এম জাহাঙ্গীর আলমকে।

অভিযানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান রসায়নবিদ দুলাল কৃষ্ণ সাহা অংশ নেন। কারখানা থেকে তাঁরা আইস বা ক্রিস্টাল মেথ ও ইয়াবা তৈরির উপকরণ মিথাইল অ্যামফিটামিন, ক্রিস্টাল মিথাইল অ্যামফিটামিন, এমডিএমএ তৈরির উপকরণ মিথাইল ডাই অক্সিম্যাথা অ্যামফিটামিনসহ ১৩ ধরনের উপকরণ পান। কারখানায় বিক্রির জন্য প্রস্তুত কয়েক লাখ এমডিএমএ পাওয়া যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সিডোঅ্যাফিড্রিন নামের একটি উপকরণ ইয়াবা তৈরিতে ব্যবহার হয় বলে এটির আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে হাসিবের কারখানায় প্রচুর ওষুধ পাওয়া গেছে, যেগুলো থেকে সিডোঅ্যাফিড্রিন আলাদা করা যায়। কারখানায় ওষুধ থেকে উপকরণ আলাদা করার ব্যবস্থা ছিল। তা ছাড়া কারখানাটি থেকে বাইরে যোগাযোগের জন্য যা যা প্রযুক্তি দরকার, তার সবই ছিল।

কী করে হাসিবের সম্পৃক্ততার খবর পেলেন—জানতে চাইলে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, তাঁরা বেশ কিছুদিন ধরে অভিজাত এলাকায় আইস ও ক্রিস্টাল মেথ বিক্রির খবর পাচ্ছিলেন মাদকসেবীদের কাছ থেকে। একপর্যায়ে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পাঁচ গ্রাম আইসসহ জাকারিয়া, রাকিব উদ্দিন ও হেলাল হোসেন ওরফে সাদ্দাম নামের তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাঁরা জিগাতলার কারখানাটি খুঁজে বের করেন।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (গোয়েন্দা) নজরুল ইসলাম শিকদার বলেছেন, দিন দুয়েক আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি ই-মেইলে আইস বা ক্রিস্টাল মেথ ও এমডিএমএ উদ্ধার ও আনুষঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে জানতে চেয়েছে।

আইস বা ক্রিস্টাল মেথ ও এমডিএমএ নিয়ে এত আলোচনা কেন, জানতে চাইলে কর্মকর্তারা বলেছেন, ইয়াবার প্রধান উপকরণ মিথাইল অ্যামফিটামিন। ইয়াবায় এর ব্যবহার হয় ২০ শতাংশ। সেখানে আইস বা ক্রিস্টাল মেথে মিথাইল অ্যামফিটামিনের ব্যবহার শতভাগ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের সাবেক ডিন আ ব ম ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, সারা বিশ্বেই যাঁরা মাদক ব্যবসায়ী, তাঁরা নতুন
নতুন মাদক আনার প্রতিযোগিতায় থাকেন। যে তিনটি মাদক উদ্ধার হলো, এগুলো ইয়াবার থেকেও বহুগুণ শক্তিশালী।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, তিন ধরনের মাদকই অল্প সময়ের জন্য মানবদেহে উত্তেজনার সৃষ্টি করে। দীর্ঘ মেয়াদে এই মাদক সেবনে মাথার ভেতরের রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রক্তক্ষরণ হতে পারে এবং হৃদ্‌রোগ, কিডনি ও যকৃৎ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।