আন্তনগর আরও আট ট্রেনের টিকিট ডিজিটালের আওতায়

>

• টিকিট পেতে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখাতে হবে
• তথ্য কাউন্টারের কম্পিউটারে অন্তর্ভুক্ত হবে
• একজন সর্বোচ্চ চারটি টিকিট কিনতে পারবেন
• টিকিট নিয়ে কালোবাজারি ঠেকাতে এই উদ্যোগ

আন্তনগর বা দূরপাল্লার ট্রেনের টিকিট পেতে হলে সংশ্লিষ্ট যাত্রীদের রেলস্টেশনের কাউন্টারে একবার নিবন্ধন করে নিতে হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে আন্তনগর সোনার বাংলা দিয়ে সরকার পরীক্ষামূলক এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছে। ২০ মার্চ থেকে আরও আটটি আন্তনগর ট্রেনে নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

এই আন্তনগর ট্রেনগুলো হলো আন্তনগর সুবর্ণ, মহানগর প্রভাতী ও গোধূলী, তূর্ণা, পারাবত, চিত্রা, পদ্মা ও দ্রুতযান।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, একজন যাত্রীকে আন্তনগর ট্রেনের টিকিট পেতে হলে তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র কাউন্টারে দেখাতে হবে। পরিচয়পত্র থেকে নাম, ঠিকানা, জন্মতারিখ, মুঠোফোন নম্বর, ডাকঘরের কোড নম্বর কাউন্টারের কম্পিউটারের তথ্যভান্ডারে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এ জন্য একজন যাত্রীর জন্য ৮ থেকে ১০ মিনিট পর্যন্ত সময় ব্যয় করতে হবে ট্রেন কাউন্টারের বুকিং সহকারীদের।

রেলওয়ে সূত্র আরও জানায়, একজন যাত্রী সর্বোচ্চ চারটি টিকিট কিনতে পারবেন। অপ্রাপ্ত বয়স হলে কিংবা যাদের জাতীয় পরিচয় নেই তাদের জন্ম নিবন্ধনের সনদ দেখাতে হবে। এই সনদ থেকে অনুরূপভাবে নাম-ঠিকানা ও ব্যক্তিগত তথ্যাবলি কম্পিউটারে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

টিকিটের কালোবাজারি ঠেকাতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ধীরে ধীরে সব আন্তনগর ট্রেনে ডিজিটাল পদ্ধতি প্রবর্তন করছে। যদিও এতে কাউন্টারে একজন যাত্রীর পেছনে অনেক সময় ব্যয় হচ্ছে। কালোবাজারি ঠেকানো গেলেও টিকিট বিক্রি কিছু কমছে। তবে ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন। এ জন্য কাউন্টার এবং চলন্ত ট্রেনে আরও জনবলের প্রয়োজন আছে।

যাত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে চট্টগ্রাম-ঢাকা রেলপথের আন্তনগর সোনার বাংলার টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। কোনো প্রকার ঘোষণা ছাড়া হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সোনার বাংলার টিকিট বিক্রি অস্বাভাবিক কমে যায়। রেলের তথ্যভান্ডারে যাত্রীদের যাবতীয় তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছিল বলে নতুন পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এতে রেলের আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে যাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ে। জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে সোনার বাংলার বেশির ভাগ যাত্রী কাউন্টারে যাচ্ছেন এবং টিকিট কিনছেন।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ ফারুক আহমেদ এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, টিকিট বিক্রি ডিজিটাল পদ্ধতির আওতায় আনতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিক্রীত টিকিটে যাত্রীর নাম-ঠিকানা থাকবে। এতে টিকিটের কালোবাজারি বন্ধ হবে।

ফারুক আহমেদ আরও বলেন, চলন্ত ট্রেনে টিটিই টিকিট পরীক্ষা করে দেখবেন। মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতও বসানো হবে। টিকিটের তথ্যাবলির সঙ্গে যাত্রীর গরমিল পাওয়া গেলে তাঁকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

চট্টগ্রাম স্টেশনের বুকিং সহকারী মাহমুদুল হাসান ভুঞা এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে জানান, জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মসনদ একবার নিবন্ধন হলে সংশ্লিষ্ট যাত্রীকে দ্বিতীয়বার জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে কাউন্টারে আসতে হবে না। কেবল মোবাইল ফোন নম্বর প্রমাণ হিসেবে দেখাতে হবে। ওই মোবাইল নম্বর কম্পিউটারে ঢুকিয়ে দিলে তাঁর নিবন্ধনের তথ্যাবলি কম্পিউটারের পর্দায় ভেসে আসবে। এরপর সংশ্লিষ্ট যাত্রী পরের বার টিকিট কিনতে পারবেন।

মাহমুদুল হাসান আরও বলেন, বাংলাদেশের যেকোনো স্টেশনে একবার নিবন্ধিত হতে পারলে মোবাইল ফোন নম্বর দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট যাত্রীরা টিকিট নিতে পারবেন। যাঁদের মোবাইল নম্বর নেই তাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেখাতে হবে।

রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, ট্রেন ভ্রমণ করতে হলে দ্রুত নিবন্ধনের আওতায় আসা উচিত। কর্মকর্তারা এ-ও বলেছেন, উদ্যোগটি ভালো। তবে যাত্রী আয়ে কিছুটা ভাটা পড়তে পারে।