নৌকা ও মোটরসাইকেলের লড়াই
‘দুজনই আওয়ামী লীগের, কিন্তু নৌকা তো পাইছে একজনই। এখন ভোট দিতে হইব খুব হিসাব কইরা। ভালো মানুষ ও উন্নয়ন—দুইটাই আমাদের দরকার।’ গতকাল বুধবার বিকেলে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা চৌরাস্তায় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর গণসংযোগের সময় এমসি বাজার এলাকার ভোটার জহিরুল ইসলাম এমন মন্তব্য করেন।
সম্প্রতি নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলায় দুই প্রার্থীই আওয়ামী লীগের পদধারী। আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল জলিল। এর আগে তিনি তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্যও। অন্যদিকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে মোটরসাইকেল প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন শামসুল আলম প্রধান। তিনি শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। দুই প্রার্থীই আওয়ামী লীগের পদে থাকায় নেতা–কর্মীরাও বিভক্ত হয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৯ সালের উপজেলা নির্বাচন থেকেই স্থানীয় রাজনীতিতে এই বিভক্তি প্রকট হতে থাকে। পরে তা সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় প্রতিটি নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছে। এমন বিভক্তি ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করছে বলে স্বীকার করেছেন দলের কয়েকজন নেতা।
কেওয়া পশ্চিমখণ্ড এলাকার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আওয়ামী লীগের লোকজনই এখন বিভ্রান্তিতে আছেন। তবে নৌকা মার্কা আওয়ামী লীগের। বেড়াইদের চালার শফিক বলেন, নৌকা ও মোটরসাইকেল—দুই প্রতীকেই আছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। সিদ্ধান্ত নেওয়াটা কঠিন। গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ির শ্রমিক বীথি আক্তার বলেন, দুই প্রার্থীর লোকজনই ভোট চাইছেন। তাই সময় বুঝে সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি।
শ্রীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, ‘আবদুল জলিল নৌকা প্রতীকের একমাত্র বৈধ প্রার্থী। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দুজন না, একজনই। অন্য কেউ আওয়ামী লীগ বা তৃণমূল আওয়ামী লীগ দাবি করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে নির্বাচন কমিশন। যাঁরা নৌকাকে ভালোবাসে, যাঁরা শেখ হাসিনার উন্নয়নকে দেখেছেন, যাঁরা দেশের উন্নয়ন চান, তাঁরা আবদুল জলিলকে ভোট দিয়ে জয়ী করবেন।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সাধারণ ভোটাররা কিছুটা বিভ্রান্ত। তবে যাঁরা সচেতন নাগরিক, যাঁরা ভাববেন শামসুল আলম প্রধান ভালো মানুষ, তাঁরা তাঁকে ভোট দেবেন। আর যাঁরা আওয়ামী লীগের কট্টর সমর্থক, তাঁরা নৌকায় ভোট দেবেন।
স্থানীয় সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি একজন সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচন কমিশনের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। নির্বাচনী প্রচারণায় আমি যেতে পারি না। সংসদ সদস্য হিসেবে আমি চাই শ্রীপুরে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান হোক।’ তিনি বলেন, তৃণমূল আওয়ামী লীগ বলে কিছু নেই।
২৪ মার্চ তৃতীয় ধাপে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।