ভিপি নুরুলকে গ্রহণ করলেন না শিক্ষার্থীরা

বাসচাপায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী নিহত হওয়ার ঘটনায় সড়ক অবরোধ ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুরকে গ্রহণ (একসেপ্ট) করেননি। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে রাজধানীর প্রগতি সরণিতে আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে আসেন ভিপি নুরুল হক। সেখানে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বক্তব্য দিতে চাইলে বক্তব্য দিতে দেওয়া হয়নি।

নিহত আবরার আহমেদ চৌধুরী যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, সেই বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের ছাত্রী মায়েশা নূর ভিপি নুরুল হক নুরকে বলেন, ‘নুর, আমরা আপনাকে একসেপ্ট করতে পারছি না।’ এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মায়েশা নূরের বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ বলে চিৎকার করেন। পরে আন্দোলকারীদের মধ্যে থেকে কেউ ভিপি নুরুল হককে সেখান থেকে বের করে আনেন।

পরে মায়েশা নূর সাংবাদিকদের বলেন, এটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক আন্দোলন, এখানে রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিকে গ্রহণ করা হবে না। এই আন্দোলনের সঙ্গে যাঁরা আসবেন, তাঁরা নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র নিয়ে আসবেন।

পরে আন্দোলনস্থল থেকে কিছু দূরে ভিপি নুরুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এই আন্দোলনের সঙ্গে আছেন। শিক্ষার্থীদের আমরা বলতে চাই, আপনারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করবেন, কেউ যেন আন্দোলনের সুযোগ নিতে না পারেন। এর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাড়িতে হামলার দোষ শিক্ষার্থীদের ওপর চাপানো হয়েছে। এখানেও গাড়িতে আগুন দিয়ে, শিক্ষার্থীদের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করা হয়েছে, তবে শিক্ষার্থীরা তা রুখে দিয়েছেন।’

এই আন্দোলন ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করা হলে শিক্ষার্থীই দাঁতভাঙা জবাব দেবেন বলেও মন্তব্য করেন নুরুল হক। এ সময় সেখানে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা ও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে বক্তব্য দিতে না দেওয়া কিংবা তাঁকে গ্রহণ না করার মতো কোনো ঘটনা সেখানে ঘটেনি বলে প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন ভিপি নুর। এ বিষয়ে নুরের সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হলে তিনি বলেন, ‘মূল কথা হচ্ছে, আমরা ওখানে গেছি। ওখান থেকে যারা আন্দোলন করছে, তাদের মধ্য থেকে তিন-চারজন ফোন করে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, তাদের ওপর হামলা হতে পরে। তারা আমাকে বলে, ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে ওখানে তারা আমার উপস্থিতি কামনা করছে। পরে আমরা কয়েকজন ওখানে... একেবারে যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে ওই স্পটে যাই। ভিড় ঠেলে বসে পড়ি। তখন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটা মিটিং চলছিল। ওদের পক্ষ থেকে আমাকে মিটিংয়ে যাওয়ার জন্য বলে। কিন্তু আমি ওদের মিটিংয়ে অংশ নিইনি।’

আমি তাদের বলি, ‘আমরা এখানে তোমাদের সচেতন করার জন্য এসেছি। তোমরা সচেতন থেকো। তোমাদের আন্দোলনে এর মধ্যেই “অন্যরা” ঢুকে পড়েছে। অন্যরা বাসে আগুন দিয়ে তোমাদের নাম দেওয়ার চেষ্টা করেছে। যে রকম কোটা আন্দোলনে ভিসির বাসায় আগুন দিয়ে আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছিল, সে রকম তোমাদের আন্দোলনকেও প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা চলছে। তাই তোমাদের সচেতন থাকতে হবে। আমরা তোমাদের আন্দোলনকে নৈতিকভাবে সমর্থন করছি। আমরা তোমাদের পাশে থাকব। তবে এটা তোমাদের আন্দোলন, তোমরাই নেতৃত্ব দেবে।’

তাহলে আপনাকে বক্তব্য দিতে দেওয়া হয়নি কিংবা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের ছাত্রী মায়েশা নূরের আপনাকে উদ্দেশ্য করে বলা, ‘নুর, আমরা আপনাকে একসেপ্ট করতে পারছি না।’ এই কথা কোত্থেকে এল? প্রথম আলোর এমন প্রশ্নের উত্তরে ভিপি নুর বলেন, ‘ওখানে এমন কোনো কথা হয়নি। বিশেষ করে কোনো মেয়ে শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথাই হয়নি। আর আমি যেখানে ছিলাম, সেখানে কোনো মেয়ে শিক্ষার্থীকে দেখিনি।’