হারিয়ে গেছে বাক্প্রতিবন্ধী মায়ের সন্তান

ফরিদুল ইসলাম
ফরিদুল ইসলাম

কাউকে কাছে পেলেই ইশারা করে বোঝানোর চেষ্টা করছেন তাঁর শিশুসন্তান হারিয়ে গেছে। দুই চোখ বেয়ে কেবলই ঝরছে অশ্রু। কাজকর্মে মন নেই, মাঝেমধ্যেই বাড়ি থেকে ছুটে বের হয়ে যাচ্ছেন তিনি। প্রতিবেশীরা ফের ধরে বাড়িতে দিয়ে যাচ্ছেন। এই অস্থিরতা নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার কোয়ালীপাড়া গ্রামের বাক্‌প্রতিবন্ধী মা মিনু বেগমের। তাঁর একমাত্র সন্তান ফরিদুল ইসলাম (৯) ২৮ দিন ধরে নিখোঁজ।
মিনু বেগমের স্বামী মাসুদ রানা মানসিক প্রতিবন্ধী। ছেলের কথা জিজ্ঞাসা করলে বলেন, স্কুলে গেছে। গত রোববার এ দম্পতির বাড়িতে গিয়ে বোঝা যায়, পরিবারটি কতটা অসহায়। বাড়িতে দায়িত্বশীল মানুষ বলতে আছেন ফরিদুলের দাদা রুস্তম আলী। ভ্যান চালিয়ে এই বৃদ্ধ পুরো সংসার চালান। নাতির নিখোঁজ হওয়ার কষ্টটা যেন তাঁরই বেশি। তিনি এদিক–ওদিক ভ্যান নিয়ে নাতির সন্ধানে ছোটাছুটি করছেন।

ফরিদুলের দাদা বলেন, ‘সংসারে সুস্থ মানুষ শুধু আমি আর আমার নাতি ফরিদুল। ওর লগেই কথাবার্তা কয়া সময় কাটাই। ও হারায়ে যাওয়ার পর থ্যাকি আমার সময় কাটতেছে না। সব সময় ওর জন্য মন খারাপ করছে। ওরে আমি খুঁজতে খুঁজতে অস্থির হয়ে গেছি। কোথাও পাচ্ছি না। আর ওর মা তো কাঁদতে কাঁদতে মরি যাতি বসিছে। বাপ তো পাগল। ও থাকিও নাই।’

রুস্তম আলী জানান, ২১ ফেব্রুয়ারি উপজেলার তমালতলা শহীদ মিনারে ফুল দিতে গিয়ে আর বাড়ি ফিরে আসেনি ফরিদুল। গত ২৮ দিনেও তার খোঁজ মেলেনি। তিনি জানান, ফরিদুল স্থানীয় যোগীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। শহীদ মিনারে ফুল দিতে বের হয়ে দুপুরের পরেও ফরিদুল বাড়ি না ফেরায় তমালতলাসহ আশপাশের কয়েকটি শহীদ মিনার, স্কুল ও আত্মীয়স্বজনদের বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেন তিনি। কিন্তু কোথাও নাতির খোঁজ পাননি। অবশেষে ৪ মার্চ বাগাতিপাড়া মডেল থানায় তিনি জিডি করেন।

প্রতিবেশী মজিবর রহমান বলেন, ‘ছ্যালিডা হারা যাওয়ার পর থেকে ওর মায়ের দিকে তাকানো যায় না। ব্যাটার শোগে বেটিটা পাগল হতে চলিছে।’
ফরিদুলের শিক্ষক রুনা বেগম জানান, গত ২১ ফেব্রুয়ারি অন্য শিশুরা শহীদ মিনারে ফুল দিলেও ফরিদুল ওই দিন বিদ্যালয়েই আসেনি। পরে তাঁরা জানতে পারেন, শিশুটি নাকি শহীদ মিনারে যাওয়ার জন্য বিদ্যালয়ের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল।

থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসআই রাকিব বলেন, ডায়েরি করার পর দেশের সব থানায় বার্তা পাঠানো হয়েছে। শিশুটিকে উদ্ধারের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
দাদা রুস্তম আলী জানান, ফরিদুল বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় ওর পায়ে ছিল স্যান্ডেল। পরনে ছিল সাদা হাফপ্যান্ট ও গোলাপি সোয়েটার। কোনো হৃদয়বান মানুষ শিশুটির খোঁজ পেলে তাঁর মুঠোফোন ০১৭৬৬৩২৬২৮৬ নম্বরে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানান এ বৃদ্ধ মানুষটি।