প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধেই পুলিশের মামলা, গ্রেপ্তার ২

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে সন্ত্রাসী হামলায় আহত মোহাম্মদ আলী এখনো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হামলাকারী কারা, তা শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। উল্টো হামলার প্রতিবাদে যাঁরা বিক্ষোভ শুরু করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করেছে। ইতিমধ্যে কলেজছাত্রসহ দুজনকে গ্রেপ্তারও করেছে তারা।
জানতে চাইলে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবাদের নামে সড়ক অবরোধ করে পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়েছিল। এ সময় কোম্পানীগঞ্জ থানার দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। তাঁরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মামলার আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে কোনো অসংগতি থাকলে তদন্তে দেখা যাবে।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার সন্ধ্যার দিকে উপজেলার পাড়ুয়া গ্রাম এলাকায় মোহাম্মদ আলীর ওপর সন্ত্রাসী হামলা হয়। তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত পরাজিত প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের চাচাতো ভাই। পেশায় পাথর ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর প্রচার সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ঘটনার সময় তিনি উপজেলার পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়নের শাহ আরেফিন টিলার ‘রয়েলিটি ঘাট’ এলাকায় তাঁর দপ্তরে যাচ্ছিলেন। পাড়ুয়া গ্রামের রাস্তায় তাঁর গাড়ি পৌঁছালে অতর্কিত হামলা হয়। হামলাকারীরা দা ও রামদা দিয়ে মোহাম্মদ আলীর মাথা ও হাতে কোপায়। ঘটনাস্থল পাড়ুয়া গ্রামেই বাড়ি নবনির্বাচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শামীম আহমদের। তিনি ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে জয়লাভ করেন।
হামলার প্রতিবাদে সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার থানাবাজারে জড়ো হয়ে মোহাম্মদ আলীর পক্ষের লোকজন প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু করেন। রাত আটটা থেকে নয়টা পর্যন্ত এ বিক্ষোভ চলে। বিক্ষুব্ধ লোকজন একপর্যায়ে পুলিশের ওপর চড়াও হন। এ সময় পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়া হয়। এ ঘটনায় রাতেই বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে মামলা করেন কোম্পানীগঞ্জ থানার এসআই খায়রুল বাশার। মামলায় ২৫ জনের নাম উল্লেখের পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা আরও ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সোমবার রাতেই কলেজছাত্রসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁদের একজন নজরুল ইসলাম নির্বাচনে নৌকার কর্মী ছিলেন। অপরজন কয়েস মিয়া সিলেট নগরের জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। কয়েস সম্পর্কে সন্ত্রাসী হামলার আহত ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলীর ভাগনে।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, শামীম আহমদই প্রভাব খাটিয়ে পুলিশ দিয়ে এ মামলা করিয়েছেন। আবার মামলায় এমন কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে, যাঁরা ঘটনার সময় ঘটনাস্থলেই ছিলেন না। এর মধ্যে একজন আসামি আছেন, যিনি তিন দিন ধরে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ওই আসামির একজন আত্মীয় বলেন, আবদুল নামের একজন পাথর ব্যবসায়ী হত্যা মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি শামীম আহমদ। সেই মামলার আক্রোশ থেকেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই আসামিকে জড়ানো হয়েছে।
তবে শামীম আহমদ বিষয়টি অস্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ দেখেশুনেই মামলা করেছে।
এদিকে সন্ত্রাসী হামলায় আহত মোহাম্মদ আলী এখনো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হাসপাতাল সূত্র বলছে, তাঁর মাথার আঘাতটা গুরুতর। তবে অবস্থা সংকটাপন্ন নয়। মোহাম্মদ আলীর পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তিনি সুস্থ হলে তাঁর ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
১৮ মার্চ সারা দেশে দ্বিতীয় ধাপের সঙ্গে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী শামীম আহমদ নির্বাচিত হন। ২২ মার্চ শাহ আরেফিন টিলা পার্শ্ববর্তী শারফিনবাজারে শামীম আহমদের পক্ষের লোকজন বিজয় উদ্‌যাপনে আতশবাজি করেন। এ সময় বাজারের ছয়জন ব্যবসায়ী আহত হন। নৌকার পক্ষের লোকজন বলছেন, এ ঘটনার জের ধরে মোহাম্মদ আলীর ওপর হামলা করেছেন শামীমের পক্ষের লোকজন। শামীমের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হন নৌকার প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম।