বাসের কন্ডাক্টর ও চালকের সহকারী সাত দিনের রিমান্ডে

আবরার আহমেদ চৌধুরীকে চাপা দেওয়া বাসের চালক ও চালকের সহকারী। ডিবি কার্যালয়, ঢাকা, ২৭ মার্চ। ছবি: মোছাব্বের হোসেন
আবরার আহমেদ চৌধুরীকে চাপা দেওয়া বাসের চালক ও চালকের সহকারী। ডিবি কার্যালয়, ঢাকা, ২৭ মার্চ। ছবি: মোছাব্বের হোসেন

বাসচাপায় বিউপির ছাত্র আবরার আহমেদ চৌধুরী নিহতের ঘটনায় মামলায় সুপ্রভাত পরিবহনের ওই বাসের কন্ডাক্টর ইয়াসিন ও চালকের সহকারী ইব্রাহিমকে সাত দিন রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত এই অনুমতি দেন।

এর আগে এই দুই আসামিকে আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। শুনানিতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক কাজী শরিফুল ইসলাম আদালতকে বলেন, বাসের কন্ডাক্টর ইয়াসিন বাস চাপা দিয়ে আবরারকে মেরে ফেলেন। ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য আসামিদের রিমান্ডে নেওয়া জরুরি। আদালতে দুই আসামির কোনো আইনজীবী ছিলেন না। শুনানি শেষে আদালত এই দুই আসামির সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

পুলিশ বলছে, গত ১৯ মার্চ ভোর ৫টা ৪৫ মিনিটে ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাস নিয়ে রওনা দেন চালক সিরাজুল ইসলাম। কিছুক্ষণ পর গুলশান থানাধীন শাহজাদপুর বাঁশতলা অতিক্রম করার সময় মিরপুর আইডিয়াল গার্লস ল্যাবরেটরি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী সিনথিয়া সুলতানা মুক্তাকে চাপা দেয় তাঁর বাস। গুরুতর জখম হয় ওই ছাত্রী। এই ঘটনার পর সুপ্রভাত বাসের যাত্রীরা সিরাজুলকে আটক করে ট্রাফিক পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। উত্তেজিত হয়ে ওঠে জনতা। এই পরিস্থিতিতে বাসের কন্ডাক্টর ইয়াসিন দ্রুত চালকের আসনে বসে বাসটি চালিয়ে নিয়ে যান। বেপরোয়া গতিতে ছুটতে ছুটতে বাসটি চলে আসে বসুন্ধরার নর্দ্দা এলাকায়। সেখানে ওই বাসই আবার চাপা দেয় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) ছাত্র আবরার আহমেদ চৌধুরীকে। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় ইয়াসিনকে গ্রেপ্তারের পর এসব জানতে পারে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।

গতকাল মঙ্গলবার চাঁদপুরের শাহরাস্তি থানার একটি ইটভাটা থেকে বাসের কন্ডাক্টর ইয়াসিন আরাফাতকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। ইয়াসিনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার সকাল সাতটায় রাজধানীর মধ্যবাড্ডা এলাকা থেকে চালকের সহকারী ইব্রাহিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুপুর ১২টায় কারওয়ান বাজারে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন।

আবদুল বাতেন বলেন, সিনথিয়া সুলতানা মুক্তাকে চাপা দেওয়ার পর সুপ্রভাত বাসের যাত্রীরা চালক সিরাজুলকে আটক করে ট্রাফিক পুলিশের কাছে দেন। এ সময় বাসের কন্ডাক্টর ইয়াসিন আরাফাত বাসের মালিককে ঘটনা সম্পর্কে জানান। তিনি মালিককে বলেন, উত্তেজিত জনতা বাসটি জ্বালিয়ে দিতে পারে। এ কথা শুনে মালিক ইয়াসিন আরাফাতকে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে বাস চালিয়ে পালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। এরপর বাসটি নিয়ে বেপরোয়া গতিতে পালিয়ে যেতে থাকেন ইয়াসিন। এ সময় বাসটি আবরারকে চাপা দেয়।

আবদুল বাতেন বলেন, ‘ইয়াসিনকে আদালতে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেখানে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়ার পর আমরা জড়িত ব্যক্তিদের নামে এক মাসের কম সময়ের মধ্যে অভিযোগপত্র দেব।’

মিরপুর আইডিয়াল গার্লস ল্যাবরেটরি কলেজের ওই ছাত্রীর বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবি জানায়, সিনথিয়া এখন কিছুটা সুস্থ।

১৯ মার্চ সকালে রাজধানীর বসুন্ধরায় যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে নর্দ্দা এলাকায় সুপ্রভাত পরিবহনের বাসের চাপায় নিহত হন বিইউপির ছাত্র আবরার আহমেদ চৌধুরী। ওই দিন রাতে গুলশান থানায় মামলা হয়।
ওই ঘটনার পর বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। বসুন্ধরাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে ও আবরার নিহতের ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন তাঁরা।