'আমার অনাগত সন্তান কাকে বাবা বলে ডাকবে?'

স্বামীকে হারিয়ে আহাজারি করছিলেন নিহত লিমনের স্ত্রী রূপা। তখন পুলিশ সদস্যরা তাঁকে আশ্বস্ত করছিলেন। আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের সামনে। ছবি: প্রথম আলো
স্বামীকে হারিয়ে আহাজারি করছিলেন নিহত লিমনের স্ত্রী রূপা। তখন পুলিশ সদস্যরা তাঁকে আশ্বস্ত করছিলেন। আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের সামনে। ছবি: প্রথম আলো

‘আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। আমার সন্তান এখনো পৃথিবীর আলো দেখেনি। পৃথিবীতে আসার আগেই ও তার বাবাকে হারাল। আমার অনাগত সন্তান কাকে বাবা বলে ডাকবে?’ আজ বুধবার সকালে মাদারীপুর জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি লিমন মজুমদার (২৮) হত্যায় জড়িত লোকজনের শাস্তির দাবিতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে তাঁর স্ত্রী রূপা বেগম এভাবেই আহাজারি করছিলেন।

লিমন মজুমদারের রহস্যজনক মৃত্যুতে বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী। আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে শহরের সবুজবাগ এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে এলাকাবাসীর পাশাপাশি জেলা ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের সহস্রাধিক নেতা-কর্মী অংশ নেন। এ সময় জেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লিমন হত্যার রহস্য ও খুনিদের গ্রেপ্তারের আলটিমেটাম দেওয়া হয়। অন্যথায় ভবিষ্যতে সড়ক অবরোধসহ বৃহত্তর কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি দেয় জেলা ছাত্রলীগ।

বিক্ষোভ সমাবেশে নিহত লিমনের মা লায়লা বেগম বলেন, ‘আমার একমাত্র সন্তানকে কারা মেরে ফেলল? পুলিশরে কতবার কইছি, পুলিশ আমাগো কথা শোনে না। পুলিশ আমাগো বাড়িতে একবারও আসে নাই। তারা কি আসামিগো খুঁজে বের করবে না? আমার সোনা মানিকের হত্যার কি বিচার হবে না?’

লিমনের বাবা বাবুল মজুমদার বলেন, ‘আমার ছেলেকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল কিছু সন্ত্রাসী। আমার মনে হয় তারাই আমার ছেলেকে শ্বাস রোধ করে মেরে ঝুলিয়ে রেখে চলে যায়। আমরা পুলিশের কাছে ওই সব কল রেকর্ড দেব। লিমন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাই ওর বিরোধীরাই হয়তো এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। আমার একমাত্র ছেলে হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত, আমি তাদের ফাঁসি চাই।’

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা চাই এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে যারা লুকিয়ে আছে পুলিশ যেন তাদের খুঁজে বের করে। লিমন ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিল। আমরা কোনোভাবেই লিমনের এমন রহস্যজনক মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না।’

মাদারীপুর সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সিরাজুল হক সরদার বলেন, ‘লিমনের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় ছাত্রলীগ ও এলাকাবাসী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করছেন। আজ তাঁরা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। এই ঘটনায় লিমনের বাবা বাদী হয়ে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন। আমরা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এখন পর্যন্ত হাতে পাইনি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর বলতে পারব, এটা হত্যা না আত্মহত্যা। এ ঘটনায় আমাদের তদন্ত অব্যাহত আছে।’

গত সোমবার সকালে শহরের আমিরাবাদ এলাকায় লিয়াকত আলীর নির্মাণাধীন ভবনের দোতলা থেকে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় লিমনের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লিমনের লাশ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। লিমন জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন।