ভবন বেহাল, ঝুঁকিতে সদস্যরা

ঈশ্বরদী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন ভবনের কক্ষগুলোর ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়েছে।  ছবি: প্রথম আলো
ঈশ্বরদী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন ভবনের কক্ষগুলোর ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়েছে। ছবি: প্রথম আলো

অর্ধশতকের বেশি সময় ধরে সংস্কার না করায় পাবনার ঈশ্বরদী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন কক্ষের ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। এ অবস্থায় দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে আছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ১৯৬৪ সালে শহরের মধ্যঅরণকোলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের এ ভবনগুলো নির্মাণ করা হয়।
সরেজমিনে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ভবন ও স্টাফ কোয়ার্টারের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। স্টাফ ব্যারাক, পানির পাম্প হাউস, অফিস কক্ষ, খাবার ঘর, প্রার্থনা কক্ষ, গোসলখানা ও শৌচাগারসহ প্রতিটি কক্ষে ফাটল, পলেস্তারা খসে পড়েছে। দ্বিতীয় তলায় অফিসার কোয়ার্টারের অবস্থাও একই। স্টাফ ব্যারাক, প্রার্থনা কক্ষ (নামাজের স্থান), খাবার ঘরের ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তারা খুলে লোহার রড বেরিয়ে আছে। অগ্নিনির্বাপকের জন্য সার্বক্ষণিক কার্যকর থাকার কথা পানির পাম্প হাউসটি। কিন্তু এখানে এসে দেখা গেছে, এখানে পানি রাখার রিজার্ভ ট্যাংকই নেই।
ফায়ার সার্ভিসের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, কিছুদিন আগে ফায়ার সার্ভিস ভবনের ছাদ থেকে পলেস্তারা ও সিমেন্ট খসে পড়ে কয়েকজন আহত হন। তাঁরা আগুন, সড়ক দুর্ঘটনা ও বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবিলায় বিপন্ন মানুষের জন্য কাজ করলেও এখন নিজেরাই এখানে আতঙ্কে থাকেন বলে জানান এই কর্মকর্তা–কর্মচারীরা।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে দুজন ফায়ারম্যান জানান, এখানে দুটি ভবনের সব কটি কক্ষের ছাদ, দেয়াল, কার্নিশে বিপজ্জনক ফাটল দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির সময় এসব ফাটল চুইয়ে পানি এসে কক্ষ সয়লাব হয়ে যায়। এ কারণে এই দুটি ভবনে অবস্থান করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাঁরা আরও জানান, পলেস্তারা খসে পড়ার আশঙ্কায় তাঁরা সব সময় মশারি টাঙিয়ে রাখেন। বছরখানেক আগে ছাদের পলেস্তারা খসে দুজন আহত হয়েছিলেন। তা ছাড়া অগ্নিনির্বাপকের জন্য ট্যাংকে দ্রুত পানি ভরার কোনো ব্যবস্থা নেই। গোসল করার পর যে পানি অবশিষ্ট থাকে, তা–ই আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহারের জন্য রিজার্ভ ট্যাংকে ভরা হয়। এই ট্যাংকটিও ছিদ্র। ছিদ্র দিয়ে পানি পড়তে থাকে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সূত্রে জানা গেছে, এখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ২৭টি পদের মধ্যে ৫টিতেই কোনো লোক নেই। অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও এর জন্য প্রয়োজনীয় জনবল দেওয়া হয়নি। বিদ্যমান জনবল দিয়ে অগ্নিনির্বাপক ও দুর্ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের জন্য অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করা হচ্ছে। ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের আবাসনের জন্য ২০টি ২২তলা ভবন নির্মাণের কাজ চললেও বহুতল ভবনে আগুন নেভানোর কোনো সরঞ্জাম নেই।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স পাবনার সহকারী পরিচালক কে এম সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঈশ্বরদীর স্টেশনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানকার ভবন ও কক্ষগুলো সংস্কার না হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঝুঁকির মধ্যে আছেন। সংস্কারের জন্য তাঁরা গণপূর্ত বিভাগকে বারবার চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কাজ হয়নি।
পাবনা গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলম জানান, ভবন ও কক্ষগুলো সংস্কারের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এখনো কাজ শুরু হয়নি। ছোটখাটো কাজের জন্য ইতিমধ্যে পাবনা গণপূর্ত থেকে দেড় লাখ
টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই টেন্ডার আহ্বান করা হবে।