যে কারণে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পরাজয়

লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী শরাফ উদ্দিন আজাদের কাছে পরাজিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল ওয়াহেদ। উপজেলার উত্তর-দক্ষিণ আঞ্চলিকতার ইস্যু, প্রচার–প্রচারণার দুর্বলতা, সমন্বয়হীনতা এবং নিজের ইউনিয়নে কম ভোট পাওয়া ও ভোট পড়ার হার কম হওয়ার কারণে তিনি হেরে গেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। নির্বাচনী ফলাফল বিশ্লেষণ ও দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এ ধারণা পাওয়া যায়।

রামগতিতে ৪ হাজার ৮৩৯ ভোটে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী শরাফ উদ্দিন আজাদ। তিনি পেয়েছেন ২১ হাজার ২৪৭ ভোট। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল ওয়াহেদ পেয়েছেন ১৬ হাজার ৪০৮ ভোট। আটটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে এ উপজেলা গঠিত। এতে মোট ভোটার ১ লাখ ৬৬ হাজার ৩০৯। এর মধ্যে নির্বাচনে বৈধ ভোট পড়েছে ৪৫ হাজার ৩২৮টি। ভোটার উপস্থিতির হার ছিল ২৭ শতাংশ ৮৮ ভাগ।

ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পৌরসভাসহ অন্যান্য ইউনিয়নে প্রাপ্ত ভোটে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ২৪ ভোটে এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু বিজয়ী প্রার্থী শরাফ উদ্দিন আজাদের নিজের ইউনিয়নে (চর রমিজ ইউনিয়ন) ভোট পড়ার হার ছিল ৪৮ দশমিক ৯০ শতাংশ। এখানে শরাফ উদ্দিন আজাদ পেয়েছেন ১১ হাজার ৫৩ ভোট। অপরদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবদুল ওয়াহেদের নিজ ইউনিয়নে (চরগাজী ইউনিয়ন) ভোট পড়ার হার ছিল ২৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এখানে ওয়াহেদ পেয়েছেন ৫ হাজার ৪৮২ ভোট। এতে দেখা যায়, নিজের ইউনিয়নে ভোটারের কম উপস্থিতি ও কম ভোট পাওয়ার কারণে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ভরাডুবি হয়েছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ মুরাদ বলেন, দলীয় প্রার্থী আবদুল ওয়াহেদের নিজের ইউনিয়নে ভোট পড়ার যে হার (২৭ দশমিক ৭৯) তা পুরো উপজেলায় ভোট পড়ার হারের (২৭.৮৮) সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। কিন্তু বিজয়ী প্রার্থী শরাফ উদ্দিনের ইউনিয়নে ভোট পড়ার হার (৪৮ দশমিক ৯০) ছিল অস্বাভাবিক। বিশেষ করে শরাফ উদ্দিনের চর রমিজ ইউনিয়নের ৯টি কেন্দ্রের মধ্যে পূর্ব চর রমিজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কেন্দ্রে ৮৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ, বিবিরহাট রশিদিয়া উচ্চবিদ্যালয়কেন্দ্রে ৭৩ দশমিক ২৯ শতাংশ, চরগোসাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কেন্দ্রে ৬১ দশমিক ০৫ শতাংশসহ আরও দুটি কেন্দ্রে ৫০ ভাগেরও বেশি ভোট পড়ার হার ছিল। উপজেলার ৬২টি কেন্দ্রের অন্য কোথাও এত বেশি ভোট পড়েনি।

তাহলে ভোট গ্রহণে কোনো কারচুপি ছিল কি না জানতে চাইলে আবদুল ওয়াহেদ বলেন, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে বিশেষ একটি ইউনিয়নে অবিশ্বাস্য ভোট পড়ার হার সন্দেহজনক।

পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি আওয়ামী লীগের এমন কয়েকজন নেতা–কর্মী মনে করেন, আঞ্চলিকতার ইস্যুতে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর পক্ষে দলীয় নেতা-কর্মীদের বিভক্ত অবস্থানও চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের পেছনে কাজ করেছে। তাঁরা বলেন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে উত্তর অঞ্চলের (উপজেলা সদর এলাকায়) একজন ও দক্ষিণ অঞ্চলের (দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীর এলাকা) একজন দলীয় সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন। এ কারণে দলীয় নেতা-কর্মীদের অনেকেই ভাইস চেয়ারম্যান প্রশ্নে উত্তর-দক্ষিণ আঞ্চলিকতায় বিভক্ত হয়ে পড়েন। আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীর ক্ষেত্রে। এ ছাড়া দুর্বল প্রচার–প্রচারণা ও সমন্বয়হীনতাও দলীয় প্রার্থীর হেরে যাওয়ার পেছনে কাজ করেছে বলে মনে করছেন তাঁরা।