ইব্রাহীমপুরে পানি নেই, ওয়াসার জবাব নেই

‘পাঁচ দিন ধরে লাইনে এক ফোঁটা পানি আসেনি। রান্না, গোসলসহ গৃহস্থালির কাজে অবর্ণনীয় কষ্ট হচ্ছে। পানির অভাবে রীতিমতো অসুস্থ হয়ে পড়েছি। আজ (বুধবার) কলেজে ক্লাস নিতেও যেতে পারিনি।’

পানির কষ্টের কথা এভাবেই বর্ণনা করেন কাফরুল থানার ইব্রাহিমপুরের একুশে সরণির বাসিন্দা সালমা আরজু। শহীদ বীর উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস কলেজের এই শিক্ষক সড়কের ৯১০ নম্বর বাড়িতে ভাড়া থাকেন। তাঁর সঙ্গে আলাপকালে আরেক নারী ভাড়াটেকে দেখা যায় হাতে শ্যাম্পুর বোতল এবং ব্রাশ নিয়ে এক স্বজনের বাড়ি গোসল করতে যেতে।

এ এলাকায় পাঁচ দিন ধরে টানা পানি আসছে না ওয়াসার লাইনে। কেন আসছে না, ওয়াসা তা জানাচ্ছে না। কবে আসবে তা–ও অনিশ্চিত। কেন পানি নেই, তা জানতে গতকাল ঢাকার ওয়াসার মডস জোন ১০–এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আশরাফুল হাবিব চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। কবে এই যন্ত্রণা থেকে এলাকাবাসী রক্ষা পাবে, সে বিষয়েও কিছু বলেননি তিনি।

৯১০ নম্বর ভবনের ১২টি ফ্ল্যাটে কমপক্ষে ৫০ জন মানুষের বসবাস। বাড়ির মালিকের সরবরাহ করা পানি এবং কেনা পানি দিয়ে তাঁরা খুব প্রয়োজনীয় কাজগুলো সারছেন। এই বাড়ির মালিক আতিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আগে মাঝেমধ্যে পানির সমস্যা হতো। কিন্তু পাঁচ দিন ধরে লাইনে একেবারেই পানি আসছে না। পানি কিনে ভাড়াটেদের সরবরাহ করতে হচ্ছে। এমনকি গভীর রাতে পানি আসে কি না, তা দেখতে তিনি গত দুই রাত চারটা পর্যন্ত জেগে ছিলেন বলে জানান। কিন্তু পানি আসেনি।

এই সড়কের কমবেশি ৫০টি ভবনে হাজারো মানুষের বাস। বাসিন্দারা জানান, কয়েক মাস পরপরই এ এলাকায় পানির সমস্যা হয়। মাস দুই ধরে সে সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। আর পাঁচ দিন ধরে সড়কের বেশির ভাগ বাড়িতে কোনো পানিই আসে না। দু–একটি বাড়িতে অবশ্য রাত দুইটার পরে ঘণ্টাখানেকের জন্য পানি আসে। পানির জোগান দিতে ভাড়াটে, বাড়িওয়ালা—উভয়কেই বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে।

বাসিন্দারা পানি–সংকটের কারণে তাঁদের দুর্ভোগের বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, পানির তীব্র সংকটে জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। প্রাত্যহিক কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটছে। কেনা বা বাড়ির মালিকের সরবরাহ করা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য পানি দিয়ে কোনো রকমে রান্নাবান্না চলছে। তবে কাপড় কাচা, ঘর মোছা, গোসলের মতো কাজগুলো হচ্ছে না। অনেকে আত্মীয়স্বজনের বাড়ি গিয়ে গোসল, কাপড় কাচার মতো কিছু কাজ করে আসেন।

৮৫৬ নম্বর বাড়িতে ভাড়া থাকেন পারভীন আক্তার। তিনি বলেন, গৃহকর্মী এসে বসে থাকেন, পানির অভাবে কাজ করা যায় না। তাই তিনি ছুটা গৃহকর্মীকে ছুটি দিয়ে দিয়েছেন।

আজিজা বেগমের পরিবারে সদস্যসংখ্যা সাত। তিনি বলেন, ‘পানির অভাবে চৈত্র মাসের গরমেও প্রতিদিন গোসল করা যাচ্ছে না। এক–দুই দিন পরপর একটু পানি ঢেলে নিই। রান্নাঘরে ব্যবহৃত হাঁড়ি–বাসনের স্তূপ হয়ে গেছে। ময়লা কাপড়ের ঝুড়ি ভরে গেছে।’ পানির কিনতে এই পরিবারে দিনে কমপক্ষে দুই শ টাকা খরচ করতে হচ্ছে।

বাসিন্দারা কেউই পানি না আসার কারণ সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেননি। কেউ বলছেন, পাম্প নষ্ট। কেউ বলছেন, এ এলাকার পানি অন্য এলাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এমনকি কয়েকজন বাসিন্দা পানির সমস্যার প্রতিকারে ওয়াসার হটলাইনে যোগাযোগও করেছেন। গতকাল সকালে সালমা আরজু ওয়াসার হটলাইনে ফোন করলে প্রকৌশলী সরেজমিন এসে সমস্যার সমাধান করবেন বলে জানান।

এ বিষয়ে ডিএনসিসির ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মতিউর রহমান বলেন, ‘আমার নিজের বাসাতেও পানি নেই। এ এলাকায় পানির সমস্যা প্রকট। ওয়াসাতে বারবার ধরনা দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না।’