ওয়ার্ডে ঢুকে কুপিয়ে টাকা মুঠোফোন ছিনতাই

ফরিদপুর সদর হাসপাতালের ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন এক রোগীর সাহায্যকারীকে কুপিয়ে টাকা ও মুঠোফোন ছিনতাই করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বুধবার ভোরে সার্জারি পুরুষ ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে চুরি, ছিনতাইসহ নানাবিধ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটছে। সুরক্ষিত প্রাচীর ও নৈশপ্রহরী না থাকায় এসব অপরাধের লাগাম টানা যাচ্ছে না।
চিকিৎসক ও রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাসপাতালের পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডের অতিরিক্ত দুই নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন সদর উপজেলার শমেসপুর গ্রামের মো. ফরহাদ। সাহায্যকারী (অ্যাসেসমেন্ট) হিসেবে তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী শেফালি বেগম (২৬)। দুই ছিনতাইকারী গতকাল ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে ওই ওয়ার্ডে ঢুকে শেফালি বেগমের ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। বাধা দিলে এক ছিনতাইকারী তাঁর ডান হাতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ব্যাগটি নিয়ে পালিয়ে যায়। ওই ব্যাগে দুটি মুঠোফোন ও সাত হাজার টাকা ছিল।
ওই সময় ওয়ার্ডে কর্মরত ছিলেন জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স আঞ্জুম আরা বেগম। তিনি জানান, চিৎকার শুনে তিনি ওয়ার্ডে আসেন। তিনি দেখতে পান, শেফালি বেগমের হাতে দেশি অস্ত্র ছ্যান দিয়ে আঘাত করে দুজন ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে।
শহরের প্রাণকেন্দ্র দক্ষিণ কালীবাড়ি এলাকায় হাসপাতালটির অবস্থান। ১৯১৭ সালে প্রায় সাড়ে তিন একর জমির ওপর ২৫ শয্যার দাতব্য চিকিৎসালয় হিসেবে এর যাত্রা শুরু। ১৯৮৬ সালে এটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতাল হিসেবে নামকরণ করা হয়।
গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালে তিনটি ফটক এবং পাঁচ ফুট উচ্চতার সীমানাপ্রাচীর রয়েছে। প্রাচীর টপকে সহজেই যাতায়াত করা সম্ভব।
হাসপাতালের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ হাসপাতালে নৈশপ্রহরীর কোনো পদ নেই। হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারী রাতে পাহারায় থাকেন। নৈশপ্রহরী না থাকায় মাঝেমধ্যে হাসপাতালের ওয়ার্ড এবং ক্যাম্পাসে মাদক গ্রহণসহ নানা অনৈতিক কাজ হয়। গত বছরের ১২ নভেম্বর শিশু ওয়ার্ডে এবং ও ১৯ নভেম্বর মেডিসিন ওয়ার্ডে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। হাসপাতালে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের জন্য গত বছরের জুনে তার টেনে তিনটি ফেজে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু দুই মাসের মধ্যে সেই তার চুরি হয়ে যায়। বর্তমানে একটি লাইন দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে দিনরাতে বেশ কয়েক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কবলে পড়তে হয়।
হাসপাতালে ছয় বছর ধরে কর্মরত রয়েছেন আবাসিক চিকিৎসক কর্মকর্তা (আরএমও) গণেশ চন্দ্র আগারওয়ালা। তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে হাসপাতালটি অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। সন্ধ্যার পর মাদকাসক্তদের হাসপাতালের ক্যাম্পাসে মাদক সেবন করতে দেখা যায়। গত ছয় বছরে অন্তত সাতবার বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগী ও তাঁদের সাহায্যকারীদের কাছ থেকে টাকা ও মুঠোফোন ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া প্রায় প্রতিদিনই ছোটখাটো চুরির ঘটনা ঘটছে।
সিভিল সার্জন মো. আবু জাহের বলেন, এ ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। নৈশপ্রহরী না থাকায় এসব সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হবে। তবে আশু পদক্ষেপ হিসেবে আনসার বা ভিডিপি সদস্যদের দিয়ে নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।