'আল্লাহর দোহাই লাগে গাড়ি যেতে দেন'

আগুন লাগার পর থেকে মানুষের ভিড় জমতে থাকে এফ আর টাওয়ারের আশপাশের রাস্তায়। ছবি: প্রথম আলো
আগুন লাগার পর থেকে মানুষের ভিড় জমতে থাকে এফ আর টাওয়ারের আশপাশের রাস্তায়। ছবি: প্রথম আলো
>

*এফ আর টাওয়ারে বৃহস্পতিবার দুপুরে আগুন লাগে
*মানুষের ভিড় জমে যায় টাওয়ারের আশপাশের রাস্তায়
*হাজারো উৎসুক জনতা উদ্ধারকাজে বাধা সৃষ্টি করছিল
*ভিড়ের কারণে বেগ পেতে হয় অগ্নিনির্বাপণকারীদের

রাজধানীর বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুন জ্বলছে। চারদিকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী। ভেতরে আটকে পড়া লোকজনের বাঁচার আকুতি। কেউ লাফিয়ে পড়ছেন বাঁচার আশায়, কেউ–বা হাত দেখিয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন।

ভেতরে যখন এই ভয়াবহ অবস্থা, তখন ভবনটির নিচে রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ, লোকে লোকারণ্য। তাদের প্রায় সবাই উৎসুক জনতা। কেউ সেলফি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন, ভিডিও সরাসরি সম্প্রচার করছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে

উৎসুক এই হাজার হাজার মানুষের দখলে ছিল রাস্তা। তারা যে উদ্ধারকাজে তৎপর, এমনটি নয়। বরং তারা উদ্ধারকাজে বাধা সৃষ্টি করছিল। তাদের ভিড়ের কারণেই যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে অগ্নিনির্বাপণ, উদ্ধারকারী ও জরুরি সেবায় নিয়োজিত সংস্থাগুলোর সদস্যদের। সাধারণ মানুষের ভিড়ে ব্যাহত হয়েছে উদ্ধারকাজ। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনাও চলছে। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী উদ্ধারকাজে সক্রিয় ছিলেন।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই রাস্তা চলে যায় সাধারণ মানুষের দখলে। ছবি: প্রথম আলো
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই রাস্তা চলে যায় সাধারণ মানুষের দখলে। ছবি: প্রথম আলো

আগুন লাগার পর থেকেই মানুষের ভিড় জমতে থাকে এফ আর টাওয়ারের আশপাশের রাস্তায়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই রাস্তা চলে যায় সাধারণ মানুষের দখলে। উৎসুক জনতার ভিড় ঠেলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকতে বেশ সমস্যা হচ্ছিল। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যেন বাড়ছিল এই উৎসুক মানুষের ভিড়। পানিবাহী গাড়িগুলো বারবার পানি নিয়ে আসছিল, কিন্তু মানুষের কারণে ঘটনাস্থলে যেতে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগছিল।

এ সময় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বারবার চিৎকার করে বলছিলেন, ‘আল্লাহর দোহাই লাগে গাড়ি যেতে দেন। সরেন, গাড়ি যাইতে দেন।’ আহতদের উদ্ধারে বড় সিঁড়ি আনা এবং অ্যাম্বুলেন্স যাতায়াতে বিঘ্ন ঘটে সাধারণ মানুষের কারণেই। পুলিশের সদস্যরা বারবার চেষ্টা করেও তাদের খুব বেশি দূরে সরাতে পারছিলেন না। একবার কিছু দূর সরালে একটু পর আবার রাস্তা বন্ধ করে ফেলছে। একপর্যায়ে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে এলে এই পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়। সেনাসদস্যরা সাধারণ মানুষদের কিছুটা দূরে সরিয়ে দেন।

জনতার ভিড়ের কারণে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় অগ্নিনির্বাপণ, উদ্ধারকারী ও জরুরি সেবায় নিয়োজিত সংস্থাগুলোর সদস্যদের। ছবি: প্রথম আলো
জনতার ভিড়ের কারণে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় অগ্নিনির্বাপণ, উদ্ধারকারী ও জরুরি সেবায় নিয়োজিত সংস্থাগুলোর সদস্যদের। ছবি: প্রথম আলো

হাজার হাজার মানুষের মতো বনানীতে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি নুরুল হক। তিনি সেখানে যাওয়ার পর একপর্যায়ে তাঁকে না দাঁড়ানোর অনুরোধ করা হয়। এ সময় তাঁকে বলতে শোনা যায়, এখানে ছবি তুলে চলে যাব। নুরুল হকের এই বক্তব্য ও ঘটনাস্থলে যাওয়া নিয়ে ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক (অপারেশন) দিলীপ কুমার ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, উৎসুক জনতার কারণে কাজে নানাভাবে বিঘ্ন ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স আসা-যাওয়ায় খুবই সমস্যা হয়েছে। তিনি বলেন, এ ধরনের দুর্যোগে কমিউনিটি যদি সহায়তা করে তাহলে ভালো, কিন্তু এখানে উৎসুক মানুষের ভিড়ের কারণে কাজে বিঘ্ন ঘটেছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে আরও বেশি সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে।