লাশের ব্যাগে বেজে উঠল ফোন

এয়ার লিফট দিয়ে নামানো হচ্ছে মরদেহটি। বনানী, ঢাকা, ২৮ মার্চ। ছবি: আবদুস সালাম
এয়ার লিফট দিয়ে নামানো হচ্ছে মরদেহটি। বনানী, ঢাকা, ২৮ মার্চ। ছবি: আবদুস সালাম

বিকেল ও সন্ধ্যার মাঝামাঝি একসময়ে গতকাল বনানীর এফআর টাওয়ারের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। সারা দিন এই ভবনে তাণ্ডব চালিয়েছে লেলিহান আগুন। সারা দেশের মানুষের চোখেমুখে উৎকণ্ঠা। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার আগেই জানা গেছে এই আগুনে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে সাতজন। আর কত খারাপ খবর ওই পোড়া ভবনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কে জানে! সবার মতো আমরা ফটোসাংবাদিকেরাও খবরের অপেক্ষায় আছি। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী ও রোভার স্কাউটের সদস্যরা ভবনটির ভেতরে গেলেন। কী খবর নিয়ে তাঁরা ফেরেন, তার জন্য আমাদের অস্বস্তিকর অপেক্ষা। তাদের প্রতিটি গতিবিধির দিকে নজর রাখছি।

মরদেহের ব্যাগ থেকে ফোনটি বের করেন ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী। বনানী, ঢাকা, ২৮ মার্চ। ছবি: আবদুস সালাম
মরদেহের ব্যাগ থেকে ফোনটি বের করেন ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী। বনানী, ঢাকা, ২৮ মার্চ। ছবি: আবদুস সালাম

লক্ষ করলাম রোভার স্কাউটের কয়েকজন মরদেহ ভরার ব্যাগ নিয়ে ভবনের ভেতরে যাচ্ছেন। তার কিছুক্ষণ পরই এয়ার লিফটে করে কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ে নামানো হলো ব্যাগভর্তি একটি মরদেহ। তখন আমিও সড়কে। ভিড়ের কারণে ছবি তোলা গেল না। বুঝলাম উঁচু কোনো জায়গায় গিয়ে দাঁড়াতে হবে। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ির ছাদে অবস্থান নিলাম। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে দেখলাম, নামানো হচ্ছে দ্বিতীয় মরদেহটি। ক্যামেরায় চোখ রেখে পাথরের মতো শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। মাত্র কয়েক মিনিটের অপেক্ষা, কিন্তু মনে হচ্ছিল কয়েক ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছি। অবশেষে প্লাস্টিকের সাদা ব্যাগভর্তি মরদেহটি নিয়ে এয়ার লিফট নেমে এল। ছবি তুলছি। সড়কে প্রস্তুত থাকা ফায়ার সার্ভিসের লোকজন মরদেহটি গ্রহণ করছেন। ঠিক এমন সময় কার যেন মোবাইল বেজে উঠল! ফায়ার সার্ভিসের লোকজন নিজেদের মোবাইল বাজছে কি না, দেখলেন। না, তাঁদের কারও ফোন বাজছে না। এয়ার লিফটে থাকা ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী বুঝলেন ফোনের শব্দ কোথা থেকে আসছে। তিনি মরদেহের ব্যাগটির জিপার খুললেন।

মরদেহের ব্যাগ থেকে ফোনটি বের করে কথা বলেন ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী। বনানী, ঢাকা, ২৮ মার্চ। ছবি: আবদুস সালাম
মরদেহের ব্যাগ থেকে ফোনটি বের করে কথা বলেন ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী। বনানী, ঢাকা, ২৮ মার্চ। ছবি: আবদুস সালাম

মৃত ব্যক্তির প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে বের করে আনলেন মোবাইল। হ্যাঁ, এই ফোনটিই বেজে উঠেছে। ফায়ার সার্ভিসের ওই কর্মী ফোনটি রিসিভ করলেন। দূর থেকে বুঝিনি ফোনের ওপারের মানুষটির সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীর কী কথা হয়েছে।