কাজ না করে বিল, ৬ প্রকৌশলী ও ১ ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

কাজ না করে পৌনে দুই কোটি টাকার বিল তুলে নেওয়ার অভিযোগে করা দুই মামলায় ছয় প্রকৌশলী ও এক ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। শিগগিরই বিচারিক আদালতে এ অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে দুদকের জনসংযোগ বিভাগ।

দুদক সূত্র জানায়, সিলেট সড়ক বিভাগের অধীনে মৌলভীবাজার-রাজনগর-ফেঞ্চুগঞ্জ-সিলেট জাতীয় মহাসড়ক এবং সিলেট সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে কাজ না করেই বিল উত্তোলন করে নেন ঠিকাদার। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা শেষ না করা কাজ শেষ দেখিয়ে পরিমাপ বইয়ে রেকর্ড করেন। তাঁরা ওই কাজের বিপরীতে বিল পরিশোধ করেন। সড়ক বিভাগের প্রকৌশলীরাসহ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ঠিকাদার পারস্পরিক সহযোগিতায় এ অর্থ আত্মসাৎ করেন। এ ঘটনায় ২০১৮ সালের ২৬ মার্চ সিলেটের কোতোয়ালি থানায় দুটি মামলা করে দুদক। মামলার তদন্ত শেষে ছয় প্রকৌশলী ও এক ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র অনুমোদন করা হয়।

অভিযোগপত্রে যাঁদের আসামি করা হয়, তাঁরা হলেন সিলেট সড়ক বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মাসুম আহমেদ, সিলেট সড়ক বিভাগের সাবেক উপসহকারী প্রকৌশলী বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন, সিলেট সড়ক উপবিভাগ-১–এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী, বর্তমানে সওজের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল বরকত মো. খুরশীদ আলম, সিলেটের বিশ্বনাথ সড়ক উপবিভাগের সাবেক উপবিভাগীয় প্রকৌশলী, বর্তমানে বাংলাদেশ সড়ক গবেষণাগারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তানভীর হোসেন, সিলেট সড়ক বিভাগের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী, বর্তমানে প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ মনিরুল ইসলাম, সিলেট সড়ক বিভাগের সাবেক উপসহকারী প্রকৌশলী, বর্তমানে ঢাকা জোনের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. রাসেল এবং ঠিকাদার লুৎফুর রহমানকে।

দুদক বলছে, মৌলভীবাজার-রাজনগর-ফেঞ্চুগঞ্জ-সিলেট জাতীয় মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে কাজের মূল্যায়নের জন্য দুদক একটি নিরপেক্ষ প্রকৌশলী দলের মাধ্যমে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে পরিমাপ করে। পরিমাপে ৬১ লাখ ৬১ হাজার ২৬০ টাকার কোনো কাজ পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া প্রকল্পের কাজের গুণগত মান নমুনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় প্রমাণ পায় দুদক। দুদক বলছে, প্রকৌশলীরা ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক সরকারি ৬২ লাখ ৬১ হাজার ২৬০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

একই অবস্থা সিলেট সড়ক বিভাগের অধীন সিলেট সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কেও। জালিয়াতির অভিযোগ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দুদক দেখেছে, ১ কোটি ১৩ লাখ ২৩ হাজার ৪১৬ টাকার কাজের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া প্রকল্পের কাজের গুণগত মান নমুনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় প্রমাণ পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রেও প্রকৌশলীরা ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশে সরকারি ওই অর্থ আত্মসাৎ করেন।
এ ঘটনায় দুটি মামলারই বাদি দুদকের সহকারী পরিচালক মোজাম্মিল হোসেন। মামলার তদন্তও তিনি করেছেন।