শরীয়তপুর অংশ থেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত

shoriotpur
shoriotpur

পদ্মা সেতুর কাছে শরীয়তপুর-ঢাকা মহাসড়কের পাশে শরীয়তপুরের নওডোবা অংশ থেকে শেখ হাসিনা তাঁতপল্লি প্রকল্প সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ ও নূর-ই-আলম চৌধুরী ওই প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে এসে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গতকাল শনিবার সকালে ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কে মানববন্ধন করে শরীয়তপুর আলোকিত সমাজ ও উজ্জীবিত বহুমুখী প্রচেষ্টা নামের দুটি সংগঠন।

মানববন্ধন শেষে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন শরীয়তপুর আলোকিত সমাজের সভাপতি মুরাদ হোসেন মুন্সি। বক্তব্য দেন জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম, সুজনের জেলা সভাপতি আহনুল্লাহ ইসমাইলি, কোর্টবাজার বণিক সমিতির সভাপতি আবদুস সামাদ ব্যাপারী, প্রেসক্লাবের সহসভাপতি শেখ খলিলুর রহমান, বাংলাদেশ মানবধিকার কমিশন শরীয়তপুর জেলা কমিটির সভাপতি মাসুদুর রহমান, সাহিত্য পত্রিকা ভাবনার কাশবন–এর সম্পাদক স্বপন সরকার প্রমুখ।

গত বছরের ১ নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ওই তাঁতপল্লি প্রকল্পের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই শুরু হয় ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম। শরীয়তপুরের নাওডোবায় ৬০ একর ও শিবচরের মাদারীপুরের কুতুবপুরে ৬০ একর জমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম শুরু করা হয়। ১২০ একর জমির ওপর বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড প্রকল্পটি নির্মাণ করবে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শরীয়তপুরের নওডোবা অংশের ৬০ একর বাদ দিয়ে কুতুবপুরেই আরও ৬০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে।

প্রস্তাবিত তাঁতপল্লির জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হলে কুতুবপুর ও নাওডোবার জমির মালিক ও একশ্রেণির দালাল এসব জমিতে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ ও গাছপালা লাগানো শুরু করেন। এ নিয়ে গত ২৫ জানুয়ারি ‘শিবচরে প্রস্তাবিত তাঁতপল্লি, ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ বেশি পেতে এত কিছু’ শিরোনামে প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর মাদারীপুর-২ আসনের সাংসদ নূর-ই-আলম চৌধুরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘটনার সত্যতা পেয়ে তিনি ক্ষুব্ধ হন এবং শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের জেলা প্রশাসককে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর ওই এলাকায় জেলা প্রশাসন থেকে মাইকিং করা হয় এবং সব ধরনের স্থাপনা ও গাছপালা অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয় এবং শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসন অবৈধ স্থাপনার তালিকা প্রস্তুত করে। যৌথ তদন্তের পর তালিকা থেকে ওই অবৈধ স্থাপনা বাদ দেওয়া হয়।

নাওডোবা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ফজলুল হক মাদবর বলেন, পদ্মা সেতুর নানান প্রকল্পে নাওডোবার মানুষ জমি দিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। তাঁতপল্লি হলে তা ঘিরে অনেক গরিব মানুষের কর্মসংস্থান ও ব্যবসা–বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি হতো। এভাবে ঘোষণা দিয়ে, জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করে প্রকল্প সরিয়ে নেওয়া সঠিক হবে না।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, অবৈধ যেসব স্থাপনা ও গাছপালা ছিল, তার তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। ওই ঘর ও গাছপালার বিল দেওয়া হবে না। অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার কাজ অধিকাংশ হয়ে গেছে। ভূমিমালিকদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। অথচ মাদারীপুর জেলায় এসব কার্যক্রম এখনো শুরুই হয়নি। তিনি বলেন, ‘তাঁতপল্লি শরীয়তপুর অংশ থেকে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সংসদীয় কমিটির সিদ্ধান্ত শুনেছি। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নামে একটি তাঁতপল্লি হচ্ছে, তা দুই জেলার দরিদ্র মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করবে। সেখানে শরীয়তপুরকে বঞ্চিত করা কতটা যৌক্তিক, তা ভেবে দেখা প্রয়োজন।’

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরীর আগ্রহ রয়েছে শিবচরের কুতুবপুরের ৬০ একর জমির সঙ্গে আরও ৬০ একর জমি নিয়ে তাঁতপল্লি নির্মাণ করার। তিনি জানিয়েছেন, একটি প্রকল্প এক জেলাতে থাকলেই ভালো হয়। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সংসদীয় কমিটিতে শরীয়তপুর অংশ থেকে তাঁতপল্লি সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

মঙ্গলবার তাঁতপল্লি প্রকল্প এলাকায় এসে নূর-ই-আলম চৌধুরী বলেন, ‘যেসব জায়গায় অন্যায়ভাবে ঘর ও গাছ উঠেছে, সে জায়গা আমরা বাদ দিয়েছি। দুটি জেলায় প্রকল্প করতে গেলে কিছু জটিলতা ভবিষ্যতে দেখা দেবে। ইতিমধ্যে একটি কমিটি করা হয়েছে। প্রকল্পের পূর্বনির্ধারিত কিছু জায়গা থাকবে। এর সঙ্গে আরও জায়গা দেখেছি, আমাদের পছন্দ হয়েছে। অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে কমিটি জায়গা দেখবে, তাদেরও পছন্দ হলে শিগগির কাজ শুরু করা হবে।’