ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ

ইটভাটায় আইন অমান্য করে স্থাপন করা হয়েছে করাতকল। গত শুক্রবার নওগাঁর সাপাহার উপজেলার শিমুলডাঙ্গা গ্রামে।  ছবি: প্রথম আলো
ইটভাটায় আইন অমান্য করে স্থাপন করা হয়েছে করাতকল। গত শুক্রবার নওগাঁর সাপাহার উপজেলার শিমুলডাঙ্গা গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

ইটভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এ জন্য আইন ভেঙে ভাটার ভেতরে স্থাপন করা হয়েছে করাতকল। নওগাঁর সাপাহার উপজেলার শিমুলডাঙ্গা রামাশ্রম গ্রামে টাটা ব্রিকফিল্ডে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কলমুডাঙ্গা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী শিমুলডাঙ্গা রামাশ্রম গ্রামের পশ্চিমে একটি কৃষিজমির মাঠে পাঁচ-ছয় বছর আগে ইটভাটাটি স্থাপন করা হয়। এ ভাটায় প্রতিবছর নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ইট তৈরি করা হয়। এখানে প্রায় ২৫০ জন শ্রমিক কাজ করেন। প্রতিবছর ৪০ থেকে ৫০ লাখ ইট উৎপাদন করা হয়। ইটভাটাটিতে আধুনিক পরিবেশবান্ধব জিগজ্যাগ চিমনি ব্যবহার করা হয়নি। সনাতন পদ্ধতির ড্রাম চিমনি দিয়ে ইট পোড়ানো হয়। ড্রাম চিমনি দিয়ে ইট পোড়াতে কাঠের প্রয়োজন। কাঠ চেরাইয়ের জন্য ইটভাটার ভেতরে করাতকল স্থাপন করা হয়েছে। জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করায় ইট পোড়ানোর মৌসুমে প্রচুর বিষাক্ত ধোঁয়া বের হয়। এতে আশপাশের জমিতে ধানের আবাদ ও এলাকার ফলদ গাছপালার উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

শিমুলডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা আবদুল জলিল, সাইফুল ইসলাম, জমির উদ্দিনসহ ১০-১২ জন কৃষক বলেন, তাঁরা সারা বছর মাঠের ফসলের আবাদের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু তাঁদের গ্রামের এই মাঠে ইটভাটাটি স্থাপনের পর থেকে তাঁদের ফসল উৎপাদন কমে গেছে। ফলদ গাছেও ফল কম ধরে।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ অনুযায়ী বিনা লাইসেন্সে কেউ ইট তৈরি করতে পারবেন না। কোনো ব্যক্তি ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করতে পারবেন না। করলে তিনি অনধিক তিন বছরের কারাদণ্ড বা তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

গত শুক্রবার টাটা ব্রিকফিল্ডে গিয়ে দেখা যায়, ইটভাটায় সনাতন পদ্ধতির ড্রাম চিমনি দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। ইটভাটার বিভিন্ন স্থানে পোড়ানোর জন্য কাঠ মজুত করা হয়েছে। শ্রমিকেরা ভ্যানগাড়িতে ভরে কাঠ এনে ইট পোড়ানোর স্থানে স্তূপ করে রাখছেন। ইটভাটার দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে করাতকলটি অবস্থিত। করাতকলের আশপাশে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের কাঠ এনে রাখা হয়েছে।

ভাটায় গিয়ে মালিক রাশেদ খানকে পাওয়া যায়নি। তবে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এই ভাটা চালিয়ে আসছি। আমরা এখনো জিগজ্যাগ চিমনি স্থাপন করতে পারিনি। তাই পুরোনো পদ্ধতির ড্রাম চিমনি দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। আর ড্রাম চিমনি দিয়ে ইট পোড়ালে কিছু কাঠের প্রয়োজন হয়। তাই কাঠ মজুত করে সেগুলো স মিলে চেরাই করা হয়।’

গতকাল শনিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কল্যাণ চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে যদি সত্যিই এ ধরনের ঘটনার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, জিগজ্যাগ চিমনি ছাড়া কোনো ইটভাটা চালু রাখা যাবে না। আর ইটভাটায় কাঠ ব্যবহার করতে করাতকল স্থাপন করা অপরাধ। তদন্ত করে সত্যতা পেলে ইটভাটাটির কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে।