সিডিএ মানছে না উচ্চ আদালতের আদেশ

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) বিরুদ্ধে হাইকোর্টের আদেশ না মানার অভিযোগ উঠেছে।
আদালত সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগরের লালদীঘি মাঠের অদূরে লয়েল রোডে অবস্থিত সাড়ে প্রায় ১৯ কাঠা (৩২ দশমিক ৪০ শতক) জায়গা নিয়ে মূল মালিকের পক্ষে রায় দেন হাইকোর্ট ডিভিশনের একটি বেঞ্চ। এই রায় বাস্তবায়ন নিয়ে গড়িমসির অভিযোগ ওঠে সিডিএর বিরুদ্ধে। এমনকি রায় না মেনে সিডিএ জমিকে নিজেদের বলে ঘোষণা দিয়ে পরিচিতি ফলক (সাইনবোর্ড) লাগিয়ে দেয়।
আদালত সূত্র আরও জানায়, ওয়ারিশ সূত্রে এই জমির মালিক মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) লতিফুল আলম চৌধুরী এবং তাঁর ভাই ও চাচাতো ভাইয়েরা। মেজর লতিফের স্ত্রী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য শিরীণ আখতার।
আদালত সূত্র জানায়, নগরের নিউমার্কেট থেকে লালদীঘি পর্যন্ত কোর্ট রোড (আদালত সড়ক) সম্প্রসারণের জন্য ৯০ / ৬২–৬৩ মামলা মূলে ১৯৬২ সালে লয়েল রোডের এই জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবভুক্ত হয়। কিন্তু কোর্ট রোড থেকে প্রায় ৩৫০ ফুট দূরে হওয়ায় সড়ক সম্প্রসারণের কাজে এই জমি কাজে লাগেনি। জমি অধিগ্রহণ প্রস্তাবনার সঙ্গে অসামঞ্জস্য হওয়ায় তৎকালীন জেলা প্রশাসক এই জমির দখল নেননি এবং প্রত্যাশী সংস্থাকে (সিডিএ) দখল হস্তান্তর করেননি। এ ছাড়া ভূমি মালিকদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি এবং জমি অধিগ্রহণের অনুকূলে ৫ (৭) ধারায় কোনো গেজেট বা প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করেনি।
জেলা প্রশাসকের প্রতিবেদন হতে জানা যায়, লয়েল রোডের জমির প্রকৃত মালিকের অনুকূলে আরএস, পিএস এবং বিএস এবং বিএস নামজারি খতিয়ান চূড়ান্তভাবে প্রচারিত হয়। তাই মেজর লতিফ এবং তাঁর ভাই ও চাচাতো ভাইয়েরা খাজনা নিয়মিত পরিশোধ করছেন। খাজনা পরিশোধও হালনাগাদ রয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, সিডিএ ২০০৫ সালে এই জমিতে একটি বহুতল ভবন নির্মাণ ও বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তি প্রচার করলে মালিকের দৃষ্টিগোচর হয়। এরপর মালিকপক্ষ হাইকোর্টে একটি রিট করে, যার নম্বর ৪৮৯৭ / ২০০৬। উভয় পক্ষের শুনানিতে হাইকোর্ট রিটটি জমির মালিকের পক্ষে নিষ্পত্তি করে দেন। কিন্তু সিডিএ ২০১৬ সাল থেকে আবার এই জমি বেদখলের চেষ্টা করে। এতে মালিকপক্ষ নিষেধাজ্ঞা চেয়ে হাইকোর্টে আরেকটি রিট করে, যার নম্বর ৬৬৪০ / ২০১৬।
এই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট সিডিএর চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকা অবস্থায় সিডিএ গত বছরের ৩ আগস্ট গভীর রাতে এই জমিতে সিডিএর সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়। এরপর আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে মালিকপক্ষ হাইকোর্টে আরেকটি মামলা করে, যার নম্বর ৪০০ / ২০১৮। শুনানির পর বিচারপতি মামনুর রহমান এবং বিচারপতি আশিষ রঞ্জন দাশ এক আদেশে তাৎক্ষিণকভাবে সাইনবোর্ড সরিয়ে নিতে বলেন। একই সঙ্গে সিডিএর আইনজীবী ব্যারিস্টার এহসান সিদ্দিকীও সাইনবোর্ড সরিয়ে নেওয়ার নিশ্চয়তা দেন। এ কারণে সিডিও চেয়ারম্যান ও সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আদালত অবমাননার শাস্তি থেকে ওই দিন রক্ষা পান। গত ৫ ফেব্রুয়ারি এই শুনানি হয়েছিল।
জমির মালিক মেজর (অব,) লতিফের চাচাতো ভাই ও মামলার বাদী জহুরুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের নথিপত্র এবং হাইকোর্টের রায় আমাদের পক্ষে। কিন্তু সিডিএ কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টের আদেশের তোয়াক্কা করছে না।’
বাদীর আইনজীবী মো. নুরুল আমিন বলেন, ‘কোর্ট বলেছেন, সাইনবোর্ড নামিয়ে দিতে। কিন্তু সিডিএ একের পর এক আইন ভঙ্গ করে চলেছে। এই জমি থেকে সাইনবোর্ড না নামালে আইনের প্রতি সিডিএ শ্রদ্ধাশীল নয় বলে আমি মনে করছি।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, আলোচিত জমিতে সিডিএর তিনটি সাইনবোর্ড লাগানো আছে। হাইকোর্টের কোনো আদেশ সিডিএ তোয়াক্কা করছে না।
জানতে চাইলে সিডিএর সচিব তাহেরা ফেরদৌস বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাগজপত্র না দেখে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারছি না। কাউকে জমি বুঝিয়ে দেওয়ার আদেশও সিডিএর কাছে নেই।’
সিডিএর আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার সাইফুদ্দিন মাহমুদ প্রথম আলোকে, হাইকোর্ট আদেশ দিলে সিডিএ ওই জায়গা থেকে সাইনবোর্ড সরিয়ে নিতে বাধ্য। জমির মালিকের উচিত সিডিএর চেয়ারম্যান ও সচিবের সঙ্গে দেখা করে হাইকোর্টের আদেশ স্মরণ করিয়ে দেওয়া।