দুদকের রিভিশনে আটকে গেল প্রধান ২ আসামির বিদেশযাত্রা

ভুয়া অফশোর কোম্পানিতে বিনিয়োগের নামে এবি ব্যাংকের ১৬৫ কোটি টাকা পাচারের মামলার প্রধান দুই আসামির বিদেশযাত্রা ঠেকাতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) রিভিশন আবেদন গ্রহণ করেছেন আদালত। নিম্ন আদালতের আদেশ স্থগিত করেছেন। এর ফলে তাঁরা বিদেশ যেতে পারছেন না।

দুদক সূত্র প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। মামলার প্রধান দুই আসামি এবি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এম ওয়াহিদুল হক ও হেড অব করপোরেট আবু হেনা মোস্তফা কামাল ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালত থেকে গত ২৫ মার্চ তিন মাসের জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি পান। এই অনুমতির বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদকের সহকারী পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান রিভিশন আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, তাঁরা দুজন এবি ব্যাংকের ওই পাচারের মূল হোতা এবং অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তাই অসুস্থতার অজুহাতে একবার বিদেশ যাওয়ার সুযোগ পেলে আর দেশে ফিরে আসবেন না। তাঁরা বিদেশে গেলে মামলার তদন্তে স্থবিরতা দেখা দিতে পারে।

আজ সোমবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক ইমরুল কায়েস দুদকের রিভিশন গ্রহণ করে নিম্ন আদালতের আদেশ স্থগিত করেন। ফলে, তাঁরা আর বিদেশ যেতে পারছেন না।

ভুয়া অফশোর কোম্পানিতে বিনিয়োগের নামে এবি ব্যাংকের ১৬৫ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান শেষে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি আটজনকে আসামি করে মামলা করে দুদক। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, দুর্নীতিসহ কয়েকটি অভিযোগ আনা হয়।

এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন এবি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এম ওয়াহিদুল হক, সাবেক দুই ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শামীম আহমেদ চৌধুরী ও মো. ফজলুর রহমান, হেড অব করপোরেট আবু হেনা মোস্তফা কামাল, এবি ব্যাংকের হেড অব অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের (ওবিইউ) মোহাম্মদ লোকমান, হেড অব করপোরেট ব্যাংকিং মোহাম্মদ মাহফুজ উল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. নুরুল আজিম ও এবি ব্যাংকের গ্রাহক আটলান্টিক এন্টারপ্রাইজের মালিক সাইফুল হক।

মামলা করার পরপরই ওয়াহিদুল হক, আবু হেনা মোস্তফা কামাল ও সাইফুল হককে গ্রেপ্তার করে দুদক। পরে জামিন পান ওয়াহিদুল হক ও আবু হেনা মোস্তফা কামাল।

মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, দুবাইয়ে অবস্থানরত আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্রের সদস্য খুররম আবদুল্লাহ ও আবদুস সামাদ খান ব্যবসায়ী সাইফুল হকের বন্ধু। এবি ব্যাংক থেকে আত্মসাৎ করা টাকা পাচারের উদ্দেশ্যে এই দুজনের সঙ্গে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াহিদুল হকের পরিচয় করিয়ে দেন সাইফুল হক। ওয়াহিদুল ও সাইফুল একাধিকবার দুবাইয়ে এই প্রতারকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। পরে ব্যাংকের হেড অব ট্রেজারি আবু হেনা মোস্তফা কামালকে নিয়ে দুবাইয়ে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করেন ওয়াহিদুল হক। এ জন্য তাঁরা কোনো দাপ্তরিক অনুমোদন নেননি। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে কিছু না জানিয়ে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে দুবাইয়ে এসব সভা করেন তাঁরা।

এজাহারে বলা হয়, প্রতারক চক্রটি আগে থেকেই সিঙ্গাপুরভিত্তিক কোম্পানি পিনাক্যাল গ্লোবাল ফান্ড (পিজিএফ) তৈরি করে রেখেছিল। পরে দুবাইয়ে চেং বাও জেনারেল ট্রেডিং নামের আরেকটি কোম্পানি খোলে। সেই কোম্পানির নামে আবুধাবি কমার্শিয়াল ব্যাংকে হিসাব খোলা হয়। পরে ওয়াহিদুল হক ও আবু হেনা ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে এড়িয়ে আবুধাবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ওই হিসাবে অর্থ স্থানান্তর করেন।

দুদক সূত্র আরও জানায়, তদন্ত কর্মকর্তা বাংলাদেশ ব্যাংক এবং এবি ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র জব্দ করেন। এ ছাড়া দুবাই, সিঙ্গাপুর ও কানাডায় তথ্যের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে পত্র পাঠান। দুবাই থেকে পাওয়া তথ্যমতে, দুবাইয়ের কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে টাকা কানাডা ও সিঙ্গাপুরে গেছে মর্মে প্রমাণ পাওয়া গেছে। দুবাইয়ের চেং বাওয়ের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা স্থানান্তরের পর ওই অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সমস্ত তথ্য বিশ্লেষণ এবং সংগৃহীত রেকর্ডপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর দুদক নিশ্চিত হয়েছে, পাচারের সঙ্গে এবি ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান এম ওয়াহিদুল হক ও হেড অব করপোরেট আবু হেনা মোস্তফা কামাল সরাসরি জড়িত। ইতিমধ্যে সংগৃহীত রেকর্ডপত্রের আলোকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য আইনি মতামত চেয়ে কমিশন বরাবরে প্রতিবেদন দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। মতামত সাপেক্ষে তদন্ত প্রতিবেদন শিগগিরই জমা দেওয়া হবে বলে দুদক সূত্রে জানা যায়।