স্ত্রীসহ বিএনপির সাবেক সাংসদকে দুদকে তলব

স্ত্রী মাছুদা মোমিন তালুকদার ও বিএনপির সাবেক সাংসদ আবদুল মোমিন তালুকদার।
স্ত্রী মাছুদা মোমিন তালুকদার ও বিএনপির সাবেক সাংসদ আবদুল মোমিন তালুকদার।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামা যাচাই করে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। শুরুতেই বিএনপির সাবেক সাংসদ ও তাঁর স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে সংস্থাটি। ওই সাংসদের স্ত্রীও নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন।

আজ সোমবার এ–সংক্রান্ত প্রথম নোটিশ পাঠানো হয়েছে বগুড়া-৩ আসনে বিএনপির সাবেক সাংসদ আবদুল মোমিন তালুকদার ও তাঁর স্ত্রী মাছুদা মোমিন তালুকদারকে। নোটিশে তাঁদের ১১ এপ্রিল সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে।

অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও দুদকের উপপরিচালক মলয় কুমার সাহা স্বাক্ষরিত চিঠিতে তাঁদের বিরুদ্ধে হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৩ আসনে প্রথমে বিএনপি থেকে ধানের শীষের প্রাথমিকভাবে মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয় বিএনপির সাবেক সাংসদ ও মানবতাবিরোধী মামলায় পলাতক আসামি আবদুল মোমিন তালুকদার, তাঁর স্ত্রী মাছুদা মোমিন ও তাঁর ভাই আবদুল মুহিত তালুকদারকে। বাছাইয়ে উপজেলা পরিষদের পদ থেকে পদত্যাগ না করায় বাতিল হয় মুহিতের মনোনয়নপত্র। মোমিন তালুকদারের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা থাকায় বিএনপি থেকে চূড়ান্ত দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয় তাঁর স্ত্রী মাছুদা মোমিনকে।

নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় মাছুদা মোমিন শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি পেশায় গৃহিণী। বছরে তাঁর আয় ২ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। স্বামীর চেয়ে তাঁর স্থাবর সম্পদ বেশি।

হলফনামায় মাছুদা মোমিন উল্লেখ করেন, তাঁর অস্থাবর সম্পদ বলতে রয়েছে ২ লাখ ১ হাজার ১৬৩ টাকা। স্বর্ণালংকার আছে ১ লাখ ৭৪ হাজার টাকার। ইলেকট্রনিক সামগ্রী রয়েছে ৪৫ হাজার টাকা মূল্যের। ৪০ হাজার টাকা মূল্যের আসবাব রয়েছে। তা ছাড়া তাঁর স্বামী আবদুল মোমিনের ৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে নগদ রয়েছে ৫০ হাজার টাকা। ৪৫ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণালংকার রয়েছে। ইলেকট্রনিক সামগ্রী রয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার ৮০ টাকার। আসবাব রয়েছে ৫০ হাজার টাকার।

স্বামীর চেয়ে স্ত্রী মাছুদা মোমিনের স্থাবর সম্পদ বেশি রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, মাছুদার ২২ লাখ ৭৫ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ টাকা মূল্যের ৬৬ শতক কৃষিজমি রয়েছে। ২১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের ১৫ শতক অকৃষিজমি রয়েছে। ২ হাজার ৬৩ স্কয়ার ফুটের একটি বাড়ি রয়েছে। তবে বাড়িটি কোথায় অবস্থিত এবং এর মূল্য কত, তা উল্লেখ নেই। হলফনামায় আরও উল্লেখ করা হয়, মাছুদার স্বামীর ৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ২০০ শতক কৃষিজমি আছে। ২ লাখ ৬ হাজার টাকা মূল্যের ৫ শতক ৩ ছটাক অকৃষিজমি রয়েছে।

তবে ২০০৮ সালে আবদুল মোমিন তালুকদার নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় উল্লেখ করেছিলেন, তাঁর নিজের অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ৫৪ লাখ ৯৪ হাজার ১৮৯ টাকার। স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ উল্লেখ করেন ২২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকার। মাছুদার ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের ২ বিঘা ১৫ শতক জমি রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

হলফনামায় মাছুদা নির্বাচনী ব্যয়সংক্রান্ত তথ্য ফরমে উল্লেখ করেছেন, তাঁর চাকরিজীবী তিন মেয়ে নির্বাচনের খরচ বহন করবেন। তাঁর স্বামী আবদুল মোমিন তালুকদার ২০০১ ও ২০০৮ সালে বিএনপি থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০১১ সালে তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা হয়। পরে তাঁকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।