নর্থ আমেরিকান কারিকুলাম অনুসরণ করে সিআইইউ

ক্লাসের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগ সময় কাটে গ্রন্থাগারে।  সংগৃহীত
ক্লাসের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগ সময় কাটে গ্রন্থাগারে। সংগৃহীত

কেউ ফাইলপত্র ঘাঁটছেন, কেউবা কষছেন হিসাবনিকাশ। অভিভাবকদের নানা জিজ্ঞাসার জবাবও দিচ্ছেন কেউ কেউ। অথচ তাঁরা নিজেরাই শিক্ষার্থী। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে চাকরি করার এই দৃশ্যের দেখা মিলবে চিটাগং ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির (সিআইইউ) রেজিস্টার দপ্তরে গেলে। ভালো ফলাফলের ভিত্তিতে চাকরি পাওয়া ছয় শিক্ষার্থী তাই পড়ালেখার সময়েই দক্ষ হয়ে উঠছেন অফিস সামলানোতে। এমন আরও নানা বৈচিত্র্যের ক্যাম্পাস সিআইইউ।

ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (আইইউবি) শাখা ক্যাম্পাস হিসেবে ১৯৯৯ সালে যাত্রা শুরু সিআইইউর। তবে ২০১৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি এটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন লাভ করে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদর্শন মূলত লিবারেল আর্টস ফাউন্ডেশনের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তাই শিক্ষার্থীরা যে বিষয়ই ভর্তি হোক না কেন, তাঁদের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞান ও ধারণা লাভের সুযোগ আছে।

শিক্ষার ক্ষেত্রে সিআইইউ নর্থ আমেরিকান কারিকুলাম পদ্ধতি অনুসরণ করে এ বিশ্ববিদ্যালয়। ওপেন ক্রেডিট পদ্ধতিতে পরিচালিত এই পদ্ধতিতে প্রায় প্রতিটি কোর্সে ছাত্রছাত্রীদের জন্য ক্লাস প্রেজেন্টেশন বাধ্যতামূলক। তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের নিয়মিত ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্যুরে যেতে হয়।

এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই রয়েছে মার্কিন দূতাবাসের আমেরিকান সেন্টারের শাখা—‘আমেরিকান কর্নার’। আছে ব্রিটিশ কাউন্সিলের লাইব্রেরিও। প্রখ্যাত কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ কার্যক্রমও পরিচালনা করছে সিআইইউ। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ‘লাইভ ইন ফিল্ড এক্সপেরিয়েন্স’ বা ‘এলএফই’, যার আওতায় ছাত্রছাত্রীদের গ্রামীণ জীবন সম্পর্কে প্রত্যক্ষ ধারণা দেওয়া হয়।

ক্যাম্পাস জবের আওতায় রয়েছেন সৈয়দা নাজিফা আমিন, সৌরদীপ খাস্তগীর, মো. আফ্রিদি আরাফাত, মো. হাসান আলী জয়, জান্নাত উল নাওয়ার ও সাজ্জাদ হোসেন ইফতি। তাঁরা বলেন, ‘পড়ালেখার পাশাপাশি চাকরি—দারুণ অভিজ্ঞতা। এর ফলে শিক্ষার্থী থাকার সময়েই শিখছি দাপ্তরিক অনেক বিষয়। এটা পরবর্তী কর্মজীবনে কাজে দেবে।’

এখানে বিজনেস স্কুল, স্কুল অব সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, স্কুল অব লিবারেল আর্টস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্স ও স্কুল অব ল প্রোগ্রামের অধীনে রয়েছে একাধিক বিষয়। রয়েছে স্কলারশিপেরও সুযোগ। এই অনুষদগুলোর প্রায় প্রতিটিতেই পিএইচডি ডিগ্রিধারী অভিজ্ঞ শিক্ষক রয়েছেন। যাঁদের বেশির ভাগই বিশ্বের বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নেওয়া। শিক্ষার উচ্চমান ধরে রাখতেও সচেষ্ট সিআইইউ। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্র অনুপাত ধরে রাখা হয়েছে ১: ২৫।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষগুলোও আন্তর্জাতিক মানের। সব কটি কক্ষই শীতাতপনিয়ন্ত্রিত। প্রতিটি কক্ষের সঙ্গেই আছে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর এবং কম্পিউটার সংযোগ। ওয়েবভিত্তিক কোর্স ম্যানেজমেন্ট অপারেশন পদ্ধতি (সিএমওএস) থাকায় শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের ওয়েবের মাধ্যমে ক্লাস লেকচার, অ্যাসাইনমেন্ট আদান-প্রদান করেন। পরীক্ষাও পরিচালনা করেন একইভাবে।

এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম বিশেষত্ব হলো সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার। এ গ্রন্থাগারে রয়েছে ভাষা, সাহিত্য, বিপণন, অর্থবিদ্যা, ব্যবস্থাপনা, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, অর্থনীতি, ইতিহাস, বিভিন্ন প্রকারের অভিধান, প্রকৌশল ও বিজ্ঞানবিষয়ক ৮ হাজারেরও অধিক বই। আছে ১ হাজার ১৫০টি অডিও-ভিজ্যুয়াল উপকরণ, ৩০০টি জার্নাল এবং অসংখ্য গবেষণা প্রতিবেদন। শিক্ষার্থীদের জন্য আছে গণিত কর্নার। সেখানে আছে বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও গণিতজ্ঞের লেখা ১৭৮টি। এ ছাড়া প্রায় প্রতিটি বিভাগের জন্যই রয়েছে আলাদা ল্যাব। আছে শিক্ষার্থীদের জন্য নানা খেলার সরঞ্জাম।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধা এবং প্রয়োজনের ভিত্তিতে ২০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত মেধাবৃত্তি দেওয়া হয়। পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের প্রতিভা বিকাশে রয়েছে নানা ক্লাব।