চট্টগ্রামেই বিশ্বমানের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন

চারপাশে পাহাড় আর গাছগাছালি। মাঝখানের সমতলে পাশাপাশি ছোট ছোট লাল দালান। দূর থেকে দেখলে মনে হতে পারে যেন পটে আঁকা কোনো ছবি। এমন মনোরম পরিবেশেই গড়ে উঠেছে ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি। চট্টগ্রাম নগরের খুলশী এলাকায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস।

২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি। দুই বছর পর ২০০৮ সালে বিবিএ ও এমবিএ প্রোগ্রামের অধীনে মাত্র পাঁচজন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হয় এর শিক্ষা কার্যক্রম। এরপর ধাপে ধাপে বাড়তে থাকে পরিসর। ২০১০ সালে কার্যক্রম শুরু হয় স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের। বর্তমানে এর অধীনে পড়ানো হচ্ছে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ইলেকট্রনিক অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ব্যাচেলর প্রোগ্রাম। স্কুল অব লিবারেল আর্টসের অধীনে ২০১৩ সালে বিএ ইংলিশ এবং ২০১৬ সালে চালু হয় বিএ অর্থনীতি প্রোগ্রাম।

২০১৮ সালে বিষয় হিসেবে যুক্ত হয়েছে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম। একই বছরে চালু হয় অ্যাকসেস একাডেমি, যেখানে নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ও গণিতে দুর্বলতা নিরূপণ করে তা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করা হয়। ২০১৯ সালের সামার সেমিস্টার থেকে স্কুল অব বিজনেসের অধীনে শুরু হচ্ছে ‘পাবলিক পলিসি অ্যান্ড লিডারশিপ’–এ স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবছর গড়ে প্রায় দেড় শ জন শিক্ষার্থী গ্র্যাজুয়েট হিসেবে বের হন। পাঁচজন দিয়ে শুরু হওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বর্তমানে প্রায় ২ হাজার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনে ঢুকতেই হাতের ডান পাশে ক্যাফেটেরিয়া। সেখানে ঢুঁ মারতেই দেখা মিলল টেবিলে চা-চপ, মুখে মুখে গান। ভেসে আসছে, ‘আজ দুঃখ ভোলার দিন, আজ মন হবে যে রঙিন, আজ প্রাণ খুলে শুধু গান হবে, সুখ হবে সীমাহীন।’ ক্যাফেটেরিয়া লাগোয়া অ্যাম্ফিথিয়েটার (উন্মুক্ত মঞ্চ)। রোদের তেজ কিছুটা কমে আসতেই শিক্ষার্থীর দল ভিড় করে গ্যালারির মতো দেখতে এই অ্যাম্ফিথিয়েটারে। খোলা আকাশের নিচে গ্রিক-রোমান ধাঁচে তৈরি করা হয়েছে এটিকে।

একাডেমিক ভবনের নিচতলায় আছে শিক্ষার্থীদের মিলেমিশে আড্ডা দেওয়ার মতো একটা খোলামেলা জায়গা। যেখানে একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হন শিক্ষার্থীরা। আছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার বইয়ের দ্বিতল গ্রন্থাগার। আছে অত্যাধুনিক ১১টি ল্যাব। গ্রন্থাগারে পাওয়া গেল প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মুনতাসির ইবনে মহিউদ্দিন, ফারিহা চৌধুরী ও আয়েশা লাবিবাকে। তাঁরা বলেন, ‘এত সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার পাব আশা করিনি। যে বইটা দরকার, সেটাই পাচ্ছি।’ পড়ালেখার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য আছে চাকরির সুযোগও। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১৫ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে চাকরি করছেন। পাঠাগারে সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন মাইশা ফাইরুজ আহমেদ। ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মেধাবী এই শিক্ষার্থী জানান, পাঠাগারে কাজ করার অভিজ্ঞতা অসাধারণ, আনন্দেরও।

শ্রেণিকক্ষগুলো তৈরি করা হয়েছে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী। ৩৫ জন শিক্ষার্থীর লেকচার শোনার ব্যবস্থা প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে। পড়ালেখার ফাঁকে গ্রুপ স্টাডি ও বিষয়ভিত্তিক আলোচনার জন্য তৈরি করা হয়েছে কমনরুম। সবকিছুতেই যেন সৃজনশীলতার ছোঁয়া।

উচ্চমাধ্যমিকের পাট চুকিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় পা দেওয়া শিক্ষার্থীদের জানাশোনায় অনেক ঘাটতি থাকে। সেই ঘাটতি পূরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে খোলা হয়েছে ‘অ্যাকসেস একাডেমি’। সেখানে পঠনপাঠনের উন্নতিসহ সামাজিক নানা সমস্যা—যেগুলো সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা খোলামেলা আলোচনা করতে চান না সেগুলো যাতে সহজভাবে বলতে পারেন, সে বিষয়েও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে দেখা যায়, একাডেমিক ভবনের দুই তলার একটি কক্ষে ২৭ শিক্ষার্থীর একটি দলের কেউ বানাচ্ছিলেন ব্যানার, কেউবা পোস্টার। কাজ করতে করতে মেহেদী জামান, জারিন সাদাফ, কাহাকাসান আশরাফ ও নির্ঝর সেন নামের চার শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ‘পড়ালেখার পাশাপাশি মজাও করছি। নতুন নতুন অনেক কিছু শিখছি। খুব ভালো লাগছে। অনেক বিষয় আছে আগে জানতামই না, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে শিখলাম।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান সাঈদ আল নোমানের কাছে এই বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জানতে চাইলে খুলে দেন স্মৃতির ঝাঁপি। বলেন, পাশ্চাত্যে পড়তে পড়তে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার স্বপ্নের ভ্রূণ তৈরি। তারপর দেশে এসে পাশ্চাত্যের সেই আদলে এই বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা। শুরু থেকেই চেয়েছি বিশ্বমান ধরে রেখে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে।

সাঈদ আল নোমান
সাঈদ আল নোমান

সাক্ষাৎকার

দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলাই লক্ষ্য
সাঈদ আল নোমান, প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি


চট্টগ্রামের শিক্ষার্থী মানেই শুধু বাংলাদেশের নয়। তাঁকে যোগ্যতা অর্জন করতে হবে বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলানোর। তাই আমরা বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ থেকেই ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির সব কার্যক্রম পরিচালনা করছি। কথাগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান সাঈদ আল নোমানের।

সাঈদ আল নোমান বলেন, ‘আমাদের শিক্ষক থেকে কারিকুলাম—সবকিছুই বিশ্বমানের। আমরা চাই আন্তর্জাতিক মান ধরে রাখার জন্য। ৯৯ শতাংশ শিক্ষকই দেশের বাইরে থেকে ডিগ্রি নেওয়া। কারণ, উন্নত দেশে কীভাবে পড়াশোনা হয়, সেসব বিষয়ে জ্ঞান ও জানাশোনা আছে—এমন শিক্ষক হলে শিক্ষার্থীদেরও সেভাবে তৈরি করতে পারবেন।’

এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন ভর্তি হবেন শিক্ষার্থীরা? ব্যতিক্রম কী?এমন প্রশ্নে সাঈদ আল নোমান বলেন, ‘ব্যতিক্রম বলতে আমরাই প্রথমবারের মতো চালু করেছি অ্যাকসেস একাডেমি নামের আলাদা একটি কার্যক্রম। উচ্চমাধ্যমিক শেষে শিক্ষার্থীরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তখন তাঁদের মধ্যে জানাশোনায় তারতম্য থাকতে পারে। তাই এ একাডেমির মাধ্যমে সেই তারতম্য কাটিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’

 বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের (প্রথম ও দ্বিতীয় সেমিস্টার) শিক্ষার্থীদের পঠন দক্ষতার উন্নতি, যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করা, সাংস্কৃতিক জ্ঞানের উন্নয়নসহ সব ধরনের দক্ষতা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হবে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে সাঈদ আল নোমান বলেন, ‘অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে এক বছর মেয়াদি মাস্টার অব পাবলিক পলিসি অ্যান্ড লিডারশিপ নামে একটি স্নাতকোত্তর কোর্স চালুর উদ্যোগ নিয়েছি। যেখানে সব ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে পারে, এমন দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা হবে।’