১৫৩ থেকে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারে কাজ করছেন শিক্ষার্থীরা।  সংগৃহীত
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারে কাজ করছেন শিক্ষার্থীরা। সংগৃহীত

পর্যটনশিল্পে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। গড়ে উঠছে তারকা মানের হোটেল–রিসোর্ট। ফলে বাড়ছে হোটেল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়ার আগ্রহও। আর চট্টগ্রামে এ বিষয়টি আছে শুধুমাত্র সাদার্ন ইউনিভার্সিটিতে। বর্তমানে এ বিভাগে পড়ছেন ৭২ জন শিক্ষার্থী। শুধু এ বিষয়টি নয় এ রকম আরও আটটি বিষয় পড়ানো হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্বমানের পাঠ্যক্রম ধরে রাখায় বিশ্ববিদ্যালয়টি নজরে এসেছে সবার।

চট্টগ্রাম শহরের মাঝখানেই অবস্থিত সাদার্ন ইউনিভার্সিটি। ছোট ক্যাম্পাস। তবে বেশ পরিপাটি। পরিচ্ছন্ন ভবন, অত্যাধুনিক ল্যাব ও মানসম্পন্ন শ্রেণিকক্ষ। সব মিলিয়ে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়।

১৯৯৮ সালে নগরের মেহেদীবাগ এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় সাদার্ন ইউনিভার্সিটি। এর চার বছরের মাথায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের স্বীকৃতিও মেলে। মাত্র ১৫৩ শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হয় শিক্ষা কার্যক্রম। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি অনুষদের নয়টি বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার।

 শুরুর বছর বিশ্ববিদ্যালয়টি বিবিএ ও এমবিএ কোর্স দিয়ে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছিল মাত্র পাঁচজন শিক্ষার্থী নিয়ে। বর্তমানে বিবিএ ও এমবিএতেই শিক্ষার্থী আছেন প্রায় সাড়ে ৩ হাজার। বিবিএ, এমবিএর পাশাপাশি সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ চালু হয়েছে ২০০৮ সালে। এই অনুষদে পড়ানো হচ্ছে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও ইলেকট্রনিক অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং। এ ছাড়া কলা, আইন ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদে রয়েছে আইন, ইংরেজি ও ইসলামি স্টাডিজ বিভাগ। এই অনুষদে বর্তমানে শিক্ষার্থী আছেন প্রায় ১২ শ।

পড়ালেখার পাশাপাশি সহশিক্ষা পাঠক্রমও চলছে নিয়মিত। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত বিষয়ে অধ্যয়নের পাশাপাশি নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন নানা ধরনের সৃজনশীল ও মননশীল কার্যক্রমে।

কী নেই গ্রন্থাগারে

একাডেমিক ভবনের তিনতলায় উঠতেই চোখে পড়ে গ্রন্থাগার। তাকে তাকে সাজানো হাজারো বই। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, ফুকো, মার্ক্স থেকে এডাম স্মিথ, অমর্ত্য সেন—সবার বই মিলছে সেখানে। রাজনীতি, অর্থনীতি কিংবা সাহিত্য সব বিষয়ই খুঁজে নেওয়া যায় এক মুহূর্তে। গ্রন্থাগারে সব মিলিয়ে আড়াই হাজার বই রয়েছে।

গ্রন্থাগারে পড়ার স্থানে পাওয়া গেল রায়হানুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থীকে। তিনি বলেন, ‘আমি আসলে বিবিএর ছাত্র। তবে আমার আগ্রহ আছে সাহিত্য নিয়েও। লাইব্রেরির নির্জনে কবিতার বই পড়ছিলাম।’

শুধু গ্রন্থাগার নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে আটটি অত্যাধুনিক ফার্মেসি ল্যাব। এই ল্যাবে ২২টি ব্যবহারিক কোর্স পরিচালিত হয়। আছে ছয়টি ইলেকট্রনিক অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ল্যাব, চারটি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাব ও একটি কম্পিউটার ল্যাব।

শ্রেণিকক্ষগুলো তৈরি করা হয়েছে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী। মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, অডিও সাউন্ড সিস্টেম সবই আছে। একসঙ্গে ২৫ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থীর লেকচার শোনার ব্যবস্থা রয়েছে প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে। পড়ালেখার ফাঁকে গ্রুপ স্টাডি ও বিষয়ভিত্তিক আলোচনার জন্য তৈরি করা হয়েছে কমনরুম।

ক্যারিয়ার ক্লাবে শিক্ষার্থীরা

শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গঠন ও উন্নয়নে সচেতন এবং মানসম্পন্ন শিক্ষাগ্রহণে আগ্রহী করে তুলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সারা বছরই থাকে নানা আয়োজন। নিয়মিত কাউন্সেলিং, সেমিনার ও মাঠপর্যায়ের কাজসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মশালা আয়োজন করে ক্যারিয়ার ক্লাব।

ক্যারিয়ারের পাশাপাশি বিতর্ক, আবৃত্তি, গান, গল্প, নৃত্য, কৌতুক, রম্যরচনা ও খেলাধুলা ওপর প্রতিযোগিতায় বছরের সেরা শিক্ষার্থীদের পুরস্কৃত করা হয়। আয়োজন করা হয় ‘সাদার্ন ট্যালেন্ট পুরস্কার’ অনুষ্ঠানের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ে উপাচার্য মো. নুরুল মোস্তাফা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও বিশ্ব ব্যাংক যৌথভাবে হেকেপ প্রজেক্টের মাধ্যমে সাদার্ন ইউনিভার্সিটির গুণগত শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় সব সময় মানসম্মত শিক্ষা প্রদান করে আসছে। গবেষণাধর্মী শিক্ষাকে এখানে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গবেষণা করে প্রশংসা কুড়িয়েছে।

উপাচার্য আরও বলেন, ‘শিক্ষা হচ্ছে জাতির ভিত্তি। এই ভিত্তি যত বেশি মজবুত হবে তত বেশি এগিয়ে যাবে দেশ। সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।’