হরিণ মেরে ফেলেছে ১০টি গাছ?

রাজশাহীর শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় হরিণ শেডের আমগাছগুলো মরে যাচ্ছে। গত শনিবার।  প্রথম আলো
রাজশাহীর শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় হরিণ শেডের আমগাছগুলো মরে যাচ্ছে। গত শনিবার। প্রথম আলো

কয়েক মাস আগে যে গাছে সবুজ পাতা ছিল, সেই গাছ এখন মরে গেছে। নিচের অংশের ছাল-বাকল উঠে গেছে। আশপাশের গাছগুলো সবুজ পাতায় ভরে থাকলেও সেই গাছে নেই একটি পাতাও।

রাজশাহীতে শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় হরিণ চত্বরে থাকা বড় আমগাছগুলো মরে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ১০টি গাছ মরে গেছে। আর কয়েকটি গাছ এখনো কোনোমতে বেঁচে আছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, বেড়া ভেঙে হরিণগুলো আমগাছের ছাল খেয়ে ফেলছে, এ জন্য গাছ মারা যাচ্ছে। অথচ গাছ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কর্তৃপক্ষ যে বেড়া দিয়েছে, তা হরিণগুলো ভেঙে ফেলেছে।

চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা গেছে, চিড়িয়াখানায় বর্তমানে ৬৩টি হরিণ রয়েছে। তার মধ্যে ৬২টি চিত্রা হরিণ আর একটি হচ্ছে মায়া হরিণ। হরিণগুলো রাখার জন্য চিড়িয়াখানার ভেতরে আলাদা চত্বর আছে। কিন্তু জায়গা খুব কম। এর মধ্যে হরিণের ছোটাছুটির কারণে চত্বরের মাটিতে ঘাসও জন্মাতে পারেনি। সব জায়গায় মাটি বের হয়ে আছে।

গাছগুলো এই চত্বরের ভেতরে এত দিন ছায়া ছড়িয়ে ছিল, তার নিচে হরিণগুলো বিশ্রাম নিতে পারত। এখন এই চত্বরের ১০টি গাছ মারা যাওয়ার কারণে ভেতরে ছায়া নেই বললেই চলে। চত্বরটি বিরান হয়ে গেছে। রোদের হাত থেকে রক্ষা পেতে এবং বিশ্রাম নিতে এখন হরিণগুলোর একমাত্র জায়গা হচ্ছে চত্বরের ভেতরের টিনের চালাঘর।

গত শনিবার দুপুরে চিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখা যায়, হরিণগুলোকে বাঁধাকপি খেতে দেওয়া হয়েছে। আট-দশটি হরিণকে খেতে দেখা যায়, অন্যগুলো এদিকে-ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোনোটি চালাঘরে গিয়ে শুয়ে রয়েছে। চত্বরের ভেতরের গাছগুলোর গোড়ায় ইট দিয়ে ছোট করে ঘিরে দেওয়া হয়েছিল, যাতে হরিণগুলো গাছের কাছে ঘেঁষতে না পারে। কিন্তু ওই বেষ্টনী এত দুর্বল যে হরিণ একটু উঠতে চেষ্টা করলে সেগুলো ভেঙে পড়েছে। আর হরিণগুলো গাছের ছাল খেয়েছে। একপর্যায়ে গাছগুলো মরে গেছে।

একজন দর্শনার্থী বললেন, ঠিকমতো খাবার দিলে হরিণ কষ্ট করে বেড়া ভেঙে গাছের ছাল খেতে যেত না। আর হরিণ যদি গাছের ছাল খেতে এতই পছন্দ করে, তাহলে কর্তৃপক্ষের প্রথম দায়িত্ব ছিল হরিণের নাগাল থেকে গাছগুলোর সুরক্ষার ব্যবস্থা করা।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলীম উদ্দীন বলেন, গাছের ছালের মাধ্যমে নিচের পানিপ্রবাহ কাণ্ডে পৌঁছায়। ছাল খাওয়ার ফলে গাছের গোড়ার সঙ্গে কাণ্ডের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ কারণে গাছ মরে যেতে পারে।

রাজশাহীর সাবেক প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, সাধারণত শরীরে পুষ্টির অভাব হলে এ ধরনের প্রাণী অপ্রচলিত খাবারের দিকে ঝুঁকে পড়ে। যেমন মাটি খায়, গাছের ছাল খায়। হরিণ যদি নিয়মিত সবুজ ঘাস পেট পুরে পায়, তাহলে তো তার পুষ্টির অভাব হওয়ার কথা নয়। বেড়া ভেঙে গাছের ছাল খেতে যাওয়ারও কথা নয়।

শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরহাদ উদ্দিন বলেন, হরিণের ছাল খাওয়ার কারণে ভেতরে গাছ মরে যাচ্ছে। যেভাবে ঘেরা দেওয়া হয়েছিল, সেই ঘেরা হরিণগুলো ভেঙে ফেলেছে। এখন গাছের চারদিকটা পাকা করে ঘিরে দেওয়ার একটা পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এটা সিটি করপোরেশনের সিদ্ধান্তের ব্যাপার।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, তাঁরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন।