রাজশাহী কলেজ ১৪৭ বছরে

১৪৭তম প্র‌তিষ্ঠা বা‌র্ষি‌কী উপল‌ক্ষে নগ‌রে বের করা শোভাযাত্রা। গতকাল ক‌লে‌জের সাম‌নের সড়কে বেলা ১২ টায়।  ছবি: প্রথম আলো
১৪৭তম প্র‌তিষ্ঠা বা‌র্ষি‌কী উপল‌ক্ষে নগ‌রে বের করা শোভাযাত্রা। গতকাল ক‌লে‌জের সাম‌নের সড়কে বেলা ১২ টায়। ছবি: প্রথম আলো

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সূচকে টানা তিনবার দেশসেরা হওয়ার গৌরব অর্জনকারী রাজশাহী কলেজ গতকাল সোমবার (১ এপ্রিল) ১৪৭ বছর পা রেখেছে। এ উপলক্ষে কলেজ কর্তৃপক্ষ কেক কেটে কলেজের জন্মদিনের উৎসব করে। এ ছাড়া কলেজের পক্ষ থেকে একটি শোভাযাত্রাও বের করা হয়।

কলেজটির ১৪৭ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে কেক কাটা ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি নগরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার কলেজ চত্বরে ফিরে আসে।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, মাত্র ছয়জন ছাত্র নিয়ে ১৮৭৩ সালে এ কলেজের যাত্রা শুরু হয়েছিল। বর্তমানে কলেজের এইচএসসিসহ ২৪টি বিভাগে স্নাতক (সম্মান), স্নাতকোত্তর ও ডিগ্রি পাস কোর্সের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছেন। শিক্ষক আছেন ২৬০ জন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১৮টি সূচকে এই কলেজটি টানা তিন বছর দেশসেরা হয়েছে। এভাবে কলেজের সাম্প্রতিক সাফল্য যেমন আছে, তেমনি আছে অতীতের গৌরবময় ইতিহাস। পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ও উপমহাদেশের খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের স্মৃতিধন্য এই বিদ্যাপীঠের নামেই অবিভক্ত ভারতবর্ষে রাজশাহীর পরিচিতি ছিল।

১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে তদানীন্তন পূর্ব বাংলায় একমাত্র রাজশাহী কলেজেই স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে পাঠদান করা হতো। দীর্ঘ পথযাত্রায় অনেক প্রথিতযশা ব্যক্তি এ কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। তাঁদের মধ্যে এফ টি ডাউডিং, বিজ্ঞানী ড. কুদরাত-এ-খুদা, ড. আবদুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দিন, ভাষাবিজ্ঞানী ও সাহিত্যিক ড. এনামুল হক, অধ্যাপক সুনীতি কুমার ভট্টাচার্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য ড. ইতরাত হোসেন জুবেরী প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

আগে অবিভক্ত বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চল ছাড়াও আসাম, বিহার ও ওডিশার শিক্ষার্থীরা রাজশাহী কলেজে পড়তে আসতেন। চীনা কারিগর মিস্ত্রিদের হস্তশিল্পের সমন্বয়ে ব্রিটিশশৈলীতে কাঠের সানশেড দিয়ে নির্মিত এই কলেজের প্রশাসন ভবনটি এখনো সগৌরবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কলেজের এই সুরম্য স্থাপত্যশৈলী এখনো সগৌরবে কলেজটির ঐতিহাসিক পরিচয় ঘোষণা করে, যা যেকোনো পথচারীকে আকৃষ্ট করে। এই কলেজেই রয়েছে ভাষা আন্দোলনে জীবন উৎসর্গকারী সব শহীদের স্মরণে নির্মিত দেশের প্রথম শহীদ মিনার।

‘সুস্থ দেহ সুস্থ মন’–এই সত্য সামনে রেখে রাজশাহী কলেজে রয়েছে একটি ব্যায়ামাগার। এখানে শিক্ষার্থীরা তাঁদের শারীরিক ও মানসিক গঠনে ব্যায়ামসহ নানা অনুশীলন করে থাকেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার বইয়ের সংগ্রহ নিয়ে এক বিশাল গ্রন্থাগার। এখানে রয়েছে ভাষা আন্দোলনে জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের স্মরণে নির্মিত দেশের প্রথম শহীদ মিনার।

অধ্যক্ষ হবিবুর রহমান বলেন, তাঁরা কলেজের শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফেরানোর আন্দোলন শুরু করেছেন। এ লক্ষ্যে গৃহীত পদক্ষেপগুলো সফলতার সঙ্গেই এগিয়ে চলেছে। এসব কারণে স্নাতকের পাশাপাশি উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরাও ভালো ফলাফল করছে।