১০ বছর ধরে যন্ত্র বিকল, মশা নিধন বন্ধ

রোববার বেলা ১১টা। ভৈরব পৌরসচিব মোহাম্মদ দুলাল উদ্দিন তাঁর কার্যালয়ে বসে দাপ্তরিক কাজ করছিলেন। টেবিলের নিচে মশার কয়েল জ্বলছে।

ভরদুপুরে মশার কয়েল কেন? এমন প্রশ্নে পৌরসচিব কিঞ্চিৎ বিব্রত। শেষে হেসে বলেন, মশার কয়েলই যে এখন নিত্যসঙ্গী। রাত–দিন দুই সময়ে সমানভাবে উৎপাত সহ্য করতে হচ্ছে। সাইজ বড়। কামড়ও শক্ত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে ভৈরবে মশার উপদ্রব বেড়েছে। সম্প্রতি তা সহ্যসীমা অতিক্রম করেছে। একসময় শুধু রাতে উপদ্রব সহ্য করতে হতো। এখন দিনেও এর শিকার হতে হচ্ছে। এতে মানুষ তার স্বাভাবিক কর্মে মনোযোগ হারাচ্ছে। কেউ কেউ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। মশার আধিক্যে নাগরিক জীবনে ছন্দপতন ঘটলেও দমনে উদ্যোগ নেই পৌর কর্তৃপক্ষের। ১০ বছর ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে মশক নিধনের যন্ত্র ফগার মেশিন।

পৌর এলাকার ভৈরবপুর দক্ষিণ পাড়ার অর্ণব গণি। অর্ণব এইচএসসি পরীক্ষার্থী। অর্ণব বলে, পরীক্ষার প্রস্তুতির মূল বাধা মশা। কয়েল জ্বালিয়েও পুরোপুরি প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। ভৈরব বাজারের ব্যবসায়ী হারুন মিয়া বলেন, ‘আগে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করতাম রাত ১০টায়। মশার যন্ত্রণার হাত থেকে বাঁচতে দুই ঘণ্টা কমিয়ে ৮টার মধ্যে বাড়ি চলে আসি।’

ভৈরব মর্যাদায় প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। ২০০৬ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ভৈরব পৌরসভার জন্য একটি ফগার মেশিন পাঠানো হয়। মেশিনটি ছিল চীন থেকে আমদানি করা। দুই বছর ব্যবহার করার পর মেশিনটি বিকল হয়ে পড়ে। তারপর চেষ্টা করেও সচল করা যায়নি। এ ছাড়া মেশিনটির পরিচালন ব্যয় অনেক। বিশেষ করে হাতের কাছে ওষুধ পাওয়া যায় না। আনতে হয় ঢাকা সিটি করপোরেশন থেকে। এসব নানা প্রতিকূলতায় পৌরসভার মশক নিধন অভিযান বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া আগে পৌরসভার বাজেট প্রণয়নের সময় মশক নিধনে অর্থ বরাদ্দ রাখা হতো। এখন কয়েক বছর ধরে এই খাতে বরাদ্দ নেই।

পৌরসভার স্বাস্থ্য পরিদর্শক নাসিমা বেগম বলেন, ‘মশক নিধন অভিযান পরিচালনা করার মতো আমাদের লোকবল আছে। নেই কেবল অর্থ। এই কারণেই ইচ্ছে থাকলেও বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।’

অনুসন্ধানে মশার আধিক্যের প্রথম কারণ শনাক্ত হয় পৌরসভার আবর্জনা অপসারণ অব্যবস্থাপনা। লক্ষ করা গেছে, পৌর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আবর্জনা ফেলার নির্ধারিত নির্দিষ্ট স্থান নেই। পৌরবাসী তাদের বাসাবাড়ির ব্যবহৃত জিনিসপত্র সড়কের পাশে ফেলে রাখছে। এতে স্থানে স্থানে বর্জ্যের স্তূপ হয়ে আছে। ওই বর্জ্য থেকে মাছি ও মশার জন্ম হচ্ছে। একই সঙ্গে নর্দমা পরিচ্ছন্ন অব্যবস্থাপনা থেকেও একই সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

প্যানেল মেয়র মো. আল আমিন নিজেও মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। তিনি বলেন, জনগণ এখন তাঁর কাছে রাস্তা বা ড্রেন নির্মাণ করে দেওয়ার কথা বলে না। মশা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য কিছু একটা করার অনুরোধ জানায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পৌর কর্মকর্তা জানালেন, ফগার মেশিনটি অখ্যাত কোম্পানির। সেই কারণে এই দেশে খুচরা যন্ত্রাংশ পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কেনা মেশিনপত্র কোনোটিই টেকসই হয়নি। ফলে কিছুদিন ব্যবহার করার পর অচল হয়ে পড়ে। তখন সংশ্লিষ্ট কর্মসূচি মুখ থুবড়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে কেনার সময় যদি নামীদামি কোম্পানি এবং পরবর্তী সময়ে এ দেশে ওই কোম্পানির গ্রাহক সেবা রয়েছে কি না, এসব বিষয় জেনে কেনা হলে উপকার পাওয়া যেত।

মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়া জন্য মেয়র ফখরুল আলম নাগরিকদের অসচেতনতাকেই দায়ী করেন বেশি। তিনি বলেন, ‘আমাদের পক্ষে সব করে দেওয়া সম্ভব নয়। এরপরও আমরা প্রতিদিন সড়ক পরিচ্ছন্ন করছি। আর নাগরিকেরা তাদের সুবিধামতো সড়ক নোংরা করছে। কোটি টাকা খরচ করে আমরা নর্দমা করে দিচ্ছি। আর তাদের চোখের সামনে স্ল্যাবগুলো চুরি গেলেও প্রতিরোধ করছে না। ফলে যা হওয়ার তা–ই হচ্ছে।’

প্রতিকার বিষয়ে ফখরুল আলম বলেন, যদিও ফগার মেশিন বিকল, আবার মেশিন পরিচালন ব্যয় অনেক, তারপরও মশার হাত থেকে পৌরবাসীকে রক্ষায় কিছু একটা করার চেষ্টা করা হবে।